পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: প্রযুক্তির যুগে বিচারব্যবস্থার ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘হিন্দুস্তান টাইমস লিডারশিপ সামিট ২০২২’-এ এমনই মন্তব্য করলেন দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। তাঁর মতে, কোনও মামলার শুনানির সময় বিচারপতিরা যে মন্তব্য করেন, তা তুলেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়। কিন্তু সেই মন্তব্য যে আদৌও মূল রায়ে থাকবে, সেটার কোনও নিশ্চয়তা থাকে না।
‘কোনও মামলার শুনানির সময় একজন বিচারপতি যে যে কথা বলছেন, সেটা চূড়ান্ত রায় নয়। কোনও মামলার শুনানির সময় বাধাহীন সওয়াল-জবাব হন। (কিন্তু) কোনও বিচারপতির কোনও মন্তব্যের ভিত্তিতে রিয়েলটাইম রিপোর্টিং হয়।
যে কোনও বিচারপতিদের মন্তব্য টুইটার বা টেলিগ্রাম বা ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা হয়। সর্বক্ষণ (বিচারপতিদের) মূল্যায়ন করা হয়। বিচারপতিরা যদি কোনও মন্তব্য না করেন এবং চুপ করে থাকার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে সেটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলতে পারে। আমাদের নিজেদেরকে নতুনভাবে তৈরি করতে হবে।
এই প্রজন্মের বিভিন্ন পরিস্থিতির সঙ্গে কী খাপ খাইয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।’
মিডিয়া ট্রায়াল যে নয় বিচারের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে একথা বহুবার শোনা গিয়েছে। সম্প্রতি বিচারব্যবস্থার উপর মিডিয়া ট্রায়াল নিয়ে তোপ দেগেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘মানুষ আশাহত হলে বিচারব্যবস্থার দ্বারস্থ হয়। কিন্তু, বর্তমানে এখন আদালত রায় দেওয়ার আগে মিডিয়া ট্রায়াল শুরু হয়ে যাচ্ছে।
মিডিয়া বিচারব্যবস্থাকে ‘গাইড’ করছে। এটা হতে পারে না। মিডিয়া বিচারব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।’ ওয়েস্ট বেঙ্গল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ জুরিডিকাল সায়েন্সেসের মঞ্চ থেকে তদানীন্তন প্রধান বিচারপ্রতি ললিতের উপস্থিত একথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এদিন বর্তমান প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের গলায় শোনা গেল তেমনই সুর।
ভারতে একটা অবিশ্বাসের সংস্কৃতি আছে। সেজন্য আধিকারিকরা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ‘হিন্দুস্তান টাইমস লিডারশিপ সামিট ২০২২’-এ সেই মন্তব্য করলেন ভারতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। তাঁর মতে, আদালতে যে এত মামলা ঝুলে আছে, তার অন্যতম কারণ হল সেই অবিশ্বাসের সংস্কৃতি। এদিন তিনি সামগ্রিকভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রবল প্রত্যাশার চাপ সামলাতে হয় শীর্ষ আদালতকে। কারণ প্রত্যেকেই মনে করেন যে তাঁর ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকবে সুপ্রিম কোর্টে। তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে বিচার পাবেন। ভারতের প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা সবথেকে যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হই, সেটা হল প্রত্যাশার চ্যালেঞ্জ। প্রায় প্রতিটি মামলা, প্রতিটি সামাজিক বিষয়, প্রতিটি আইনি বিষয়, প্রতিটি রাজনৈতিক বিষয় সুপ্রিম কোর্টের বিচার ক্ষমতার এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে।’
বিচার ব্যবস্থায় মহিলা বিচারপতি নিয়োগ ইস্যু নিয়েও মন্তব্য করেন তিনি। বিভিচারপতি চন্দ্রচূড় প্রশ্ন তুলে ব্যখ্যা করেন, ‘কেন আমাদের মহিলা বিচারপতি প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের এমন বহু কোর্ট রয়েছে যেখানে মহিলাদের শৌচালয় পর্যন্ত নেই। এমন কঠিন বাস্তবের মধ্য দিয়েই আমাদের বিচারপতিরা কাজ করে চলেছেন।’
দেশের বিচারব্যবস্থার পরিকাঠামো নিয়েও কথা বলেন, দেশের প্রধানবিচারপতি। মহিলা আইনজীবীদের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে মহিলা আইনজীবীরা বেশি কাজ করতে সক্ষম হচ্ছেন। এই মুহূর্তে যে সমস্ত ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন, তার মধ্যে অন্যতম হল সোশ্যাল মিডিয়া। তিনি বলেন, ‘প্রথম চ্যালেঞ্জ, যার মুখে আমরা পড়ি তা হল, আশা’।
দেশের প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ আমরা যদি আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে দেখব যে বছরে ১৮০ টি মামলা সেখানে শোনা হয়। ব্রিটেনের সুপ্রিম কোর্টের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা ৮৫। আমাদের সুপ্রিম কোর্টের প্রত্যেক বিচারপতি প্রতি সোমবার ৭৫-৮০ টি মামলার রায়দান করেন। শুক্রবার রায়দান করেন ৭৫-৮০ টি মামলার। মঙ্গলবার, বুধবার এবং বৃহস্পতিবার গড়ে ৩০-৪০ টি মামলার রায়দান করেন। সেটা থেকেই বোঝা যাবে যে সুপ্রিম কোর্টের ব্যাপ্তি কতটা।’