দেবশ্রী মজুমদার, বোলপুর: সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নের ফেরিওয়ালা বিজেপি রাজ্যের উন্নয়নে সরাসরি বাধা দিল। বোলপুরে যেন কোন ভাবেই মেডিকেল কলেজ তৈরি কোনভাবেই না হয়, তার জন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠালেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপির ডাকসাইটে নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবীয়কে নয় পয়েন্ট কারণ দর্শিয়ে কেন বোলপুরে মেডিক্যাল কলেজ বাঞ্চনীয় নয়, তা নিয়ে বিস্তারিত চিঠি লেখেন তিনি। অনুমোদন দিলে তা যেন পুনর্বিবেচনা করা হয়, সেই আবেদনও রেখেছেন শুভেন্দু অধিকারী।
বোলপুর শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে বীরভূমের দ্বিতীয় মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল গড়ে উঠছে। মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যেই সরেজমিনে ঘুরে গেছেন। তাদের অনুমতি শুধু সময়ের অপেক্ষা। অনুমতি পেলেই শুরু হয়ে যাবে পঠন-পাঠন। কিন্তু উন্নয়ন হলে সমস্যা রাজ্য বিজেপির।
বোলপুরে পিপিপি মডেলে জেলার দ্বিতীয় মেডিক্যাল কলেজ যার প্রস্তাবিত নাম ‘শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল’। শহরের অদূরেই দুশো বিঘা জমির উপর, দেড়শো আসন বিশিষ্ট এই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পরিকাঠামোগত কাজ প্রায় সম্পূর্ণ। রাজ্য সরকারের সঙ্গে চুক্তির ফলে বোলপুর সিয়ানে অবস্থিত সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালকে মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতাল হিসাবেই ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সেই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকেই যেন কোনোভাবেই অনুমতি না দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে এমনই দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
বোলপুরের ‘শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজ’-এর অনুমতি নিয়ে আপত্তি তুলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবীয়কে চিঠিতে শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, ‘স্বাধীন’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা ওই মেডিক্যাল কলেজ বানালেও, তার পিছনে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের হাত রয়েছে। আর সেই সাপেক্ষে যুক্তি খাড়া করতে গিয়ে অনুব্রত মণ্ডলের হাত দেখছেন শুভেন্দু। চিঠিতেই অনুব্রতকে ‘অসৎ’ বলে উল্লেখ করেছেন শুভেন্দু।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে শুভেন্দু অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে লিখেছেন, গরুপাচার থেকে কয়লা কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে অনুব্রতর বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে শুভেন্দুর আর্জি, ওই মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেলেও যেন তা পুনর্বিবেচনা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রক।
প্রসঙ্গত, উল্লেখ করা যেতে পারে গত ৬ সেপ্টেম্বর দিল্লি থেকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের প্রতিনিধিরা বোলপুরে প্রস্তাবিত মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শন করেন। কিন্তু তার পরেও যেন অনুমোদন না দেওয়া হয়, সেই আর্জি জানিয়ে শুভেন্দু একগুচ্ছ অভিযোগ তুলেছেন।
তিনি দাবি করেছেন, যে জমিতে মেডিক্যাল কলেজ তৈরি হচ্ছে, তার মালিকানাও প্রশ্নাতীত নয়। বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে তা-ও অনুব্রতর প্রভাবেই, বলে অভিযোগ তুলেছেন শুভেন্দু। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের প্রতিনিধিদের পরিদর্শনের দিন যে ফ্যাকাল্টি দেখানো হয়েছে, তাও একদিনের ভাড়া করা বলে শুভেন্দুর দাবি। পশ্চিমবঙ্গের মেডিক্যাল কলেজ ইতিমধ্যেই যে ছাড়পত্র দিয়েছে, তার পিছনেও রাজনীতি গন্ধ পেয়েছেন অনুব্রত।
যদিও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার মলয় পীঠ বলেন, ‘চিঠিটা দেখে আমি হতবাক হয়ে গেছি। এটা মেডিকেল কলেজ গড়ে উঠছে, পাড়ার কোন মুদিখানার দোকান নয়। যে যা খুশি তাই করা যাবে। সমস্ত রকম কাগজ, তথ্য, পরিসংখ্যান, পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের রূপ বিস্তারিতভাবে ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশনকে জানানোর পরই তারা খতিয়ে দেখেন ও তাদের প্রতিনিধি দল আসেন। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তিনি নিজে যদি ব্যক্তিগতভাবে দেখতে চান বা তার কোনও প্রতিনিধি যদি দেখতে চান তাহলে আমরা তাঁকে সেই সমস্ত তথ্য দেখাব। এতে লুকোচুরির কোনও ব্যাপার নেই।”
তিনি আরও বলেন, যে এলাকায় কোনও ভালো কাজ করলে সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষরাই এগিয়ে এসে সমর্থন করেন। এক্ষেত্রেও বীরভূম এবং বর্ধমান জেলার বহু মানুষ এগিয়ে এসেছেন যাতে মেডিকেল কলেজ সুষ্ঠুভাবে তৈরি হতে পারে। কিন্তু শুভেন্দুবাবুর এই চিঠি দেখে আমি হতবাক।