কৌশিক সালুই, বীরভূমঃ অবশেষে প্রিয় পোষ্য বিড়ালকে সঙ্গে নিয়ে ইউক্রেন থেকে বাড়ি ফিরলেন বীরভূমের সিউড়ির ডাক্তারি পড়ুয়া শাহরুখ সুলতান আহমেদ। মঙ্গলবার ভোররাতে তিনি সাজান পল্লীর বাড়িতে আসেন। ঘরের ছেলে বাড়ি ফেরায় যেমন স্বস্তিতে পরিবারের লোকজন। তবে ইউক্রেনের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি এখন আছন্ন করে রেখেছে শাহরুখ। অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার দাবি জানিয়েছেন এই পড়ুয়া।
রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে চলছে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ। আর ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ছিলেন বীরভূমের সিউড়ির ডাক্তারি পড়ুয়া শাহরুখ সুলতান আহমেদ। রোমানিয়া থেকে কেন্দ্র সরকারের সহায়তায় দিল্লি ফেরেন তিনি। সেখান থেকে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে নিজের বাড়িতে পৌঁছালেন।
গত শনিবার রোমানিয়ার বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় রাত সাড়ে এগারোটায় এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে তিনি চাপেন। সেখান থেকে দিল্লিতে রবিবার ভারতীয় সময় সকাল ন’টায়। সোমবার বিকেল চারটে ৫৫ তে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে কলকাতায় নামেন। সেখান থেকে বীরভূম জেলা প্রশাসনের গাড়ি তাকে সিউড়ি বাড়িতে পৌঁছে দেয়। রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার তিন দিন পর কিয়েভ থেকে বাসে করে রোমানিয়ার সীমান্তে আসেন শাহরুখ। সেখান থেকে রোমানিয়ার মিলিসৌতিতে স্থানীয় প্রশাসনের ক্যাম্পে কয়েকদিন ছিলেন। তাদের ১০ জনের একটি দলের সঙ্গে প্রত্যেকের একটি করে মোট দশটি বেড়াল ও একটি কুকুর ছিল। প্রথমে তাদের সুচেভা এয়ারপোর্ট থেকে ইন্ডিগোর বিমানে দিল্লি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থা পোষ্য বিমানে না তোলায় তাদের দিল্লি ফিরতে দেরি হয়। এরপর তারা বোকারেজ শহর থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে বিড়াল ও কুকুরদের সঙ্গে নিয়ে দিল্লি ফেরেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সাল থেকে ইউক্রেনের রাজধানী শহর কিয়েভ মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করছে। মাস তিনেকের মধ্যেই তার চিকিৎসকের কোর্স শেষ হয়ে কথা ছিল। মোট ৩০০ ঘণ্টার ক্লাস এবং তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি ছিল তার। তার আগেই রাশিয়ার ইউক্রেনের যুদ্ধ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তারা। যদিও ভারত সরকার সংশ্লিষ্ট ছাত্রদের যাতে পড়াশোনা এবং ডিগ্রিতে কোনও অসুবিধা না হয় সেটা দেখার আশ্বাস দিয়েছে।
শাহরুখ রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধে প্রথম তিন দিন রাজধানী শহর কিয়েভে কাটিয়ে ছিল। ওই ৭২ ঘন্টা দেখেছিল মুহুর্মুহু যুদ্ধবিমান থেকে বোমা ও রকেট লঞ্চার থেকে এসে পড়ছে ক্ষেপণাস্ত্র। বর্তমান তো সেখানে অবস্থা মৃত্যুপুরী।
বাবা আফতাব আহমেদ বলেন, ‘ছেলেকে বাড়িতে পেয়ে খুবই খুশি আমরা”। শাহরুখ সুলতান আহমেদ বলেন,”এ যেন এক ভয়ঙ্কর স্মৃতি। তিন দিন খুব আতঙ্কের মধ্যে কেটেছিল বোমা-গুলি বিস্ফোরণের শব্দে। তবে টাকা-পয়সা এবং খাদ্য পানীয় সঠিক সময়ে ব্যবস্থা করে রাখায় আমাকে সেভাবে সমস্যায় পড়তে হয়নি। সেখান থেকে রোমানিয়া পৌঁছানোর পর কোনরকমে অসুবিধা হয়নি। যাবতীয় সহায়তা করেছে রোমানিয়া প্রশাসন। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সহায়তায় বাড়ি ফিরলাম”।