পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: কুখ্যাত সেক্স racketeer কল্যাণী দেশপাণ্ডেকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিল পুণের একটি বিশেষ আদালত। কল্যাণীর অপর নাম টিনা উমেশ দেশপাণ্ডে। ৫২ বছর বয়সী কল্যাণীকে সোমবার পুণের একটি বিশেষ আদালত মোকা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে এবং সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়। সাজা বাবদ কল্যাণী দেশপাণ্ডের নামে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা ধার্য করেছে আদালত।
পুণের ত্রাস কুখ্যাত মহিলা অপরাধীকে ধরতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল পুলিশ। অনৈতিক পাচার প্রতিরোধ আইন বা পিটা ও মোকা (মহারাষ্ট্র কন্ট্রোল অফ অর্গানাইজেড ক্রাইম অ্যাক্ট, ১৯৯৯) মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয় ২০১৬ সালে। সেই থেকেই পুণের ইয়েরওয়াদা জেলে বন্দি কল্যাণী। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে কোথরুদের ভুসারি কলোনির অ্যাপার্টমেন্টে ইন্সপেক্টর সঞ্জয় নিকামের নেতৃত্বে ক্রাইম ব্রাঞ্চের একটি দল একটি সেক্স racketeer ফাঁস করে। কল্যাণীর সূত্রেই সেই হোটেলে পৌঁছেছিল পুলিশ।
পুলিশ ওই হোটেল থেকে উজবেকিস্থান থেকে আসা দুটি মেয়ে সহ আরও তিনজন মেয়ের খোঁজ পায়। কিন্তু নিজের ফাঁদ পাতা জালে নিজেই জড়িয়ে পড়েন কল্যাণী।
এই ঘটনায় কোথরুদ থানার পুলিশ তদন্তে নেমে প্রাথমিকভাবে কল্যাণীর দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী প্রদীপ গাভালে ও রবি তাপাসেকে গ্রেফতার করে। আগস্টে কাকতালীয়ভাবে কল্যাণী দেশপাণ্ডেকে অনৈতিক পাচার প্রতিরোধ আইন বা পিটা মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। একই বছর অক্টোবরে তৎকালীন পুণের পুলিশ কমিশনার রশ্মি শুক্লা একটি সংগঠিত যৌন racketeer চালানোর জন্য কল্যাণীর বিরুদ্ধে মোকা মামলার করার প্রস্তাব অনুমোদন করেন। বিশেষ বিচারক এস আর নাভান্দর এই মামলায় কল্যাণী ও তার সহযোগীদের দোষী সাব্যস্ত করেন।
কে এই কুখ্যাত কল্যাণী দেশপাণ্ডে? কল্যাণী দেশপাণ্ডের কাহিনি হার মানাবে রুপোলি সিনেমার জগতকেও। কিভাবে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে এই আদিম ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন কল্যাণী তা ভাবলেও অবাক লাগে। মেয়ে পাচার শুধু দেশ-বিদেশে সীমাবদ্ধ ছিল তাই নয়, বিদেশ থেকেও মেয়ে এখানে আমদানি করে তাকে যৌন ব্যবসায় নামানো হত।
পুলিশ সূত্রে খবর, মুম্বইয়ের এই কুখ্যাত সেক্স র্যা্কেটার তার ব্যবসা শুরু করে ৯০ দশকে।
এর পর পুণের সিটি পুলিশের খাতায় তার নাম ওঠে ২০০০ সালে। স্থানীয় একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা কল্যাণী অচিরেই হয়ে ওঠেন কুখ্যাত সেক্স racketeer । ধনী ব্যক্তিরাই ছিল তার প্রধান গ্রাহক। পুণের পুলিশের খাতায় মোট ২৪টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে তার নামে।
পুণের সুস এলাকায় তার বাংলো থেকে ‘ভেনাস এসকর্টস’ এজেন্সি পরিচালনা করতেন এই কল্যাণী। পাশান এলাকার এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, সুস এলাকার এই বাংলো যৌন ব্যবসা ও অপরাধের জন্য সুপরিচিত ছিল।
এর পর ২০০৭ সালে কল্যাণীর বাংলোতে খুন হন তার ঘনিষ্ঠ সহকারি অনিল ঢোলে। এই ঢোলের কাজ ছিল মুম্বই থেকে মেয়েদের ‘কল গার্ল’ বা বেশ্যাবৃত্তির কাজে নামানো। ঢোলের মৃত্যুর পর সব দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেন কল্যাণী ওরফে টিনা। বিদেশ থেকেও মোটা টাকার বিনিময় দেশে আনা হত মেয়েদের।
পুণেতে বসেই নিজের হাতে এই পতিতাবৃত্তির ব্যবসা পরিচালনা করেছিল সে। এর জন্য হোটেল মালিক ও সংগঠিত অপরাধের মধ্যে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছিল।
এর আগেও একাধিকবার গ্রেফতার করা হয় কল্যাণীকে। প্রথমে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি হোটেলে এক যৌনকর্মী খুন হন। সেই ঘটনায় কল্যাণীকে প্রথম গ্রেফতার করে পুলিশ। মোকা মামলায় (মহারাষ্ট্র কন্ট্রোল অফ অর্গানাইজেড ক্রাইম অ্যাক্ট, ১৯৯৯) গ্রেফতার করা হয়েছিল তাকে। প্রথম কল্যাণী দেশপাণ্ডের নামে হাভেলি থানায় এফআইআর দায়ের হয়। কিন্তু পরে তাকে মোকা মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুলিশের নজর ছিল তার ওপরে।
এর পর ২০১২ সালের ৩১ মার্চ হিঞ্জেওয়াড়ি থানার পুলিশ কল্যাণী দেশপাণ্ডেকে দেহ ব্যবসা চালানোর অভিযোগে ফের গ্রেফতার করে। সেই বছর এপ্রিলেই রাজ্যের দুর্নীতি দমন ব্যুরো (এসিবি) হিঞ্জেওয়াড়ি থানার ইন্সপেক্টর বলসাহেব সুরভে এবং কনস্টেবল মহম্মদ হানিফ আব্বাস শেখকে কল্যাণীর খুড়তুতো ভাই যতীন চাওদার কাছে ৪০,০০০ টাকা ঘুষ দাবি করার অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল।
সেই মামলাতেও কল্যাণী জামিন পেয়ে বেরিয়ে আসে। প্রায় প্রতিবারই আশ্চর্যজনকভাবে জামিন পেয়ে জেল থেকে বেরিয়ে আসতেন এই কল্যাণী। আর এসেই পুরনো পেশা শুরু করে দিতেন। বলা যায় কল্যাণীর এই কার্যকলাপ পুণের পুলিশকে রীতিমতো চাপে ফেলে দিয়েছিল। একাধিকবার জামিন পাওয়ার পরেও শিবাজিনগর এলাকায় একটি অভিজাত হোটেলে মেয়ে পাচারের কাজ চলত।
পুলিশ সূত্রে খবর, কল্যাণী নিজের জীবনের ওপরে ভিত্তি করে একটি চলচ্চিত্র তৈরিরও পরিকল্পনা করেছিলেন। তার দাবি ছিল, তার এই চলচ্চিত্রটি পুণে, মুম্বাই, আহমেদাবাদে শ্যুটিং চলছে। তবে এই চলচ্চিত্রের নাম তিনি কোনওদিন প্রকাশ্যে আনেননি।
কল্যাণী এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে জানাতে চেয়েছিল সমাজ তাকে কিভাবে যৌন ব্যবসায় নামতে বাধ্য করেছে। এমনকী তার অভিযোগ ছিল, পুলিশও তাকে শোষণ করেছে।
একটা সময় গ্রেফতার হওয়ার পর পুলিশের কাছে কল্যাণীর বয়ান ছিল, সে একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। অটো রিকশা চালককে বিয়ে করেছিলেন তিনি। পরিবারের খুব টাকার প্রয়োজনের কারণেই এই ব্যবসায় নামতে এক রকম বাধ্য হয়।
কল্যাণী নিজেকে একজন সমাজকর্মী হিসেবে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন মানুষের কাছে। ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে কল্যাণী ডা. বি আর আম্বেদকরের ব্যানার নিয়ে শহরের বেশ কিছু এলাকায় পদযাত্রা করেন। ব্যানারে আম্বেদকরের ছবির পাশাপাশি তার ছবিও ছিল।