পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: সদ্য ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান। দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পদে বসেছেন শাহবাজ শরিফ। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীতে ইসলামাবাদে ‘আজাদি মার্চ’ থেকে ইমরান খান হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন ৬ দিনের মধ্যে নির্বাচন না হলে, ফের ইসলামাবাদ ঘেরাও করবেন তিনি। এমনকী তিনি জানিয়ে দেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সরকার সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন না ঘোষণা করা পর্যন্ত এখানে বসে থাকব। ইমরান বলেন, আমি গত ২৪ ঘন্টায় যা দেখেছি, সরকার জাতিকে নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। জাতি ও পুলিশের মধ্যে বিভেদ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।
পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান বৃহস্পতিবার সকালে ভাষণ দেওয়ার সময় বলেন, তিনি নির্বাচন ঘোষণা এবং আইনসভা ভেঙে দেওয়ার জন্য সরকারকে ছয় দিনের সময় বেঁধে দেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে দেন, অন্যথা হলে ‘পুরো দেশবাসীকে’ নিয়ে রাজধানীতে ফিরে আসবেন।’ সংঘাত এড়াতে শাহবাজ সরকার ইমরানের কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। কিন্তু বুধবার সুপ্রিম কোর্ট রাজধানীর এক প্রান্তে পেশোয়ার মোড়ে সমাবেশের অনুমতি দেয় পিটিআইকে।
গত ১১ এপ্রিল পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন পাকিস্তান মুসলিম লিগ–নওয়াজের (পিএমএল–এন) সভাপতি শাহবাজ শরিফ। পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে তাঁর পক্ষে ১৭৪টি ভোট পড়ে।
সেনা হস্তক্ষেপের দীর্ঘ ইতিহাস থাকা পাকিস্তানে কোনও প্রধানমন্ত্রীই তাঁদের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। তবে ইমরানই প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি পার্লামেন্টে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবে হেরে বিদায় নিয়েছেন। ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর ১৯৯৬ সালে রাজনীতির ময়দানে আসেন ইমরান খান। দুর্নীতি বিরোধী স্লোগানে ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে প্রতিষ্ঠা করেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ। পরের বছর ১৯৯৭ সালে তিনি নির্বাচনে দুটি কেন্দ্র থেকে দাঁড়ালেও দুটিতেই হেরে যান।
তবুও থেমে যান নি তিনি। ২০০২ সালে নির্বাচনে জয়ী হন ইমরান খান। ২০১৩ সালে পাকিস্তানের ১০তম নির্বাচনে তার দল দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আসন জেতে। আর ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই পাকিস্তানের ১১ তম জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তার দল আসন সংখ্যার বিচারে সর্ববৃহৎ দলে পরিণত হয়। তিনি ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।। ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল জাতীয় পরিষদে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধিরা। যেখানে ১৭৪ ভোটে পরাজিত হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অপসারিত হন।
উল্লেখ্য, দেশে নতুন করে নির্বাচনের দাবিতে আজাদি মার্চ শুরু করেছেন ইমরান। বুধবার রাতে এই বিশাল পদযাত্রা রাজধানী ইসলামাবাদে প্রবেশ করে। জনতার প্রবল ঢেউয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে। পিটিআই সমর্থকদের সঙ্গে তারা রীতিমতো সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এখনও পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নির্বাচনের দিন ঘোষণা করেননি। তা নিয়ে উত্তেজনা চরমে। এই পরিস্থিতিতে ইমরান ঘোষণা করেছিলেন, সরকার ভোটের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তাঁরা রাজধানীতে অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। যদিও এদিন সিদ্ধান্ত বদল করেন ইমরান। ইমরান জানান, সরকার পরিস্থিতিকে নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তাই তিনি সিদ্ধান্ত বদল করছেন।
অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল, ইমরানের সমর্থকদের রাজধানীর ডি-চকের দিকে যেতে পুলিশি বাধার কারণে। কিন্তু পিটিআই কর্মীরা অনড় থাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে সরাতে অবিলম্বে নির্বাচনের ঘোষণার দাবিতে ইমরান দেশের জনতাকে রাস্তায় নামতে আহ্বান করেন। অভিযোগ, ডি-চকে গুলি চলে। এদিকে, ইমরান খানের প্রতিবাদ মিছিল নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে শাহবাজ শরিফ সরকার ইসলামাবাদে সেনা ডাকতে বাধ্য হয়েছেন।
প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবার ভোরে ইসলামাবাদে ঢোকেন ইমরান খান। সরকারের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাজধানী ইসলামাবাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে এবং দেশের সংবিধানের ২৪৫ নম্বর ধারা অনুসারে সেনাবাহিনীকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলি রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথাও বলা হয়েছে।