পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪এ ধারায় বর্ণিত দেশদ্রোহ আইন নিয়ে বিতর্কের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দেওয়া তথ্যে এক আশ্চর্য বিষয়ের হদিশ মিলেছে। ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দায়ের হওয়া ৩৯৯টি দেশদ্রোহ মামলার মধ্যে সাজা ঘোষণা করা হয়েছে মাত্র ৮টিতে। এ ছাড়াও জানা যাচ্ছে, চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ (১৬৩) মামলায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করেছে সিএনএন-নিউজ১৮। আইপিসির ১২৪এ ধারায় বলা হয়েছে, আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সরকারের প্রতি কেউ যদি মৌখিক বা লিখিত, প্রতীকীভাবে বা দৃশ্যমান কোনও প্রক্রিয়ায় ঘৃণা বা অবমাননাকর কিছু প্রকাশ করে বা সরকারের প্রতি প্ররোচনা দেয় তাহলে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে, সেই সঙ্গে জরিমানাও যোগ হতে পারে।
যাইহোক, লোকসভার বাজেট অধিবেশনে ওই তথ্য পেশ করে অমিত শাহের দফতর। এই রিপোর্টে আরও দেখা যাচ্ছে, ৩৯৯টি দেশদ্রোহ মামলার মধ্যে ৩৬টি নথিভুক্ত হয়েছে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দিল্লি, জম্মু ও কাশ্মীর থেকে। বাকিগুলি অন্যান্য রাজ্য থেকে। এই আইনে দেশে মামলা দায়ের করার হার লাফিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালে ছিল ৪৭টি। তা ২০২০ সালে তা ৫৫ শতাংশের বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩টিতে। ২০১৯ সালে দেশদ্রোহ মামলা দায়ের হয়েছিল ৯৩টি। এটাই সর্বোচ্চ। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে দেশদ্রোহ আইনে মামলার বার্ষিক হার লাগাতার ঊর্ধ্বমুখী।
রাজ্যগুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে অসম। ওই সময়কালে এই রাজ্যে দেশদ্রোহ মামলা দায়ের হয়েছে ৬৬টি। এর পরেই রয়েছে যথাক্রমে ঝাড়খণ্ড (৪০), কর্নাটক (৩৮) ও হরিয়ানা (৩৭)। এই ধরনের মামলা দিল্লিতে হয়েছে ৯টি। ওড়িশা ও তামিলনাড়ুতে এই সময়কালের মধ্যে দেশদ্রোহ মামলা হয়েছে ৮টি করে। তেলেঙ্গানায় ৬টি এবং মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে ৫টি করে। পাঁচটির চেয়ে কম দেশদ্রোহ মামলা হয়েছে এমন রাজ্যগুলি হল, গুজরাত (৩), গোয়া (৩), অন্ধ্রপ্রদেশ (৩)। অন্যদিকে, মহারাষ্ট্র, উত্তরাখণ্ড, ত্রিপুরা, পাঞ্জাব ও অরুণাচল প্রদেশে এই আইনে একটি করে মামলা নথিভুক্ত হয়েছে।
১৮ শতকের শেষভাগে দেশদ্রোহ আইন চালু হয়। ১৮৯৮ সালে এই আইন প্রথম সংশোধিত হয়। এরপর ১৯৩৭, ১৯৪৮, ১৯৫০, ১৯৫১ ও ১৯৫৫ সালে বহু পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে এই আইন। তবে, ১৯৫৫ সালের পর থেকে এতে আর হাত দেওয়া হয়নি।
আইপিসির ১২৪এ ধারায় দোষী সাব্যস্ত হলে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন সাজা পায় এবং কোনও রকম শমন ছাড়াই পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারে। ঔপনিবেশিক যুগের বিতর্কিত এই আইনে বুধবার স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। দেশদ্রোহ আইনে চলা সমস্ত মামলা মুলতুবি রাখা হয়েছে।
এই আইন বিষয়ে সরকার যতদিন না পুনরায় পরীক্ষা করছে, ততদিন কেন্দ্র ও সকল রাজ্য সরকারকে নতুন করে দেশদ্রোহ আইনের আওতায় কোনও এফআইআর দায়ের না করতে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম আদালত। এরই সঙ্গে বলা হয়েছে, দেশদ্রোহের অভিযোগে দায়ের হওয়া যে সব মামলা, আবেদন ও বিচারপ্রক্রিয়া ঝুলে রয়েছে তা স্থগিতই রাখা হবে।