পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: বিগত দুদিন আগেও মানুষ ভাবতে পারেনি, এমন ভয়ানক মৃত্যুলীলার সাক্ষী থাকতে হবে তাদের। আজ শুধুই ভগ্নস্তূপ। উদ্ধারকারী দল জোর কদমে ধবংস্তূপ থেকে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। প্রিয়জনের জীবিত থাকার অপেক্ষায় সেইদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন তারা। যে জায়গাগুলি মানুষের বিনোদনের জায়গা ছিল আজ সেইগুলিই হয়েছে বেঁচে থাকা মানুষগুলির নিরাপদ স্থান।
শপিং মল, স্টেডিয়াম, স্পোর্টস কমপ্লেক্সগুলিতে আশ্রয় নিয়েছে মানুষ। বাঁচতে ধবংসস্তূপ থেকে ছোট্ট হাত বাড়িয়েছে মরিয়ম। ভূমিকম্পের সময় সে তার ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ঘুমোচ্ছিল। মরিয়ম ও তা ছোট্ট ভাই ইলাফকে উদ্ধার করেছে বিপর্যয় মোকাবিলাকারী দল। ৩৬ ঘণ্টা পর তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। মেয়েটি এক উদ্ধারকারীকে বলে, তুমি আমাদের এখান থেকে উদ্ধার করো, আমি সারাজীবন তোমাদের দাস হয়ে থাকব। ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প প্রাণ কেড়েছে কয়েক হাজার মানুষের। এখনও পর্যন্ত মৃত্যুর সঠিক চিত্র জানা না থাকলেও মৃতের সংখ্যা ক্রমশই বেড়ে চলেছে।
প্রায় ১০ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়েছে তুরস্কে এই ভয়াবহ ভূমিকম্প। মৃত্যু মিছিল কোথায় গিয়ে শেষ হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। চারিদিকে শুধুই হাহাকার আর আর্তনাদ। কোথাও পুরো পরিবারটি ভূমিকম্পের করাল থাবায় শেষ হয়ে গিয়েছে, আবার কোথাও মা-বা বেঁচে থাকলেও নেই সন্তান। চারদিকে শুধুই স্বজন হারানোর বেদনা। সেই ধবংস্তূপের মধ্যেই বাঁচানোর হাত বাড়িয়েছে মরিয়ম। ভাইয়ের মাথায় হাত রেখে শুয়ে আছে। ভাইকে আগলে রেখেছে ছোট্ট দিদি। আরও শত শত ইরিয়ম, ইলাফ হাত বাড়িয়ে রয়েছে।
প্রবল তুষারপাতের মধ্যেও উদ্ধারকারী দল তাদের কাছে পৌঁছতে চাইছে। কিন্তু প্রকৃতি বাদ সাধছে। কিন্তু থেমে নেই কাজ দিনরাত এক করে প্রায় ৪৫ দেশের সহযোগিতায় চলছে উদ্ধারকাজ। সোমবার তুরস্ক ও সিরিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর সর্বত্র শুধু ধ্বংসলীলার চিহ্ন। ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে।
মাত্র এক মিনিটেই সব শেষ। মুহূর্তে লন্ডভন্ড তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহর। সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ সিরিয়ার সীমান্ত শহরগুলোও। ভূকম্পনপ্রবণ অঞ্চল তুরস্কে ভূমিকম্প নতুন কিছু নয়। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ ২০২০ সাল। ওই বছর দেশটিতে সব মিলিয়ে ৩৩ হাজারবারেরও বেশি ভূমিকম্প হয়েছিল। এর মধ্যে রিখটার স্কেলে চার মাত্রার বেশি ছিল ৩২২টি। কিন্তু সোমবারের ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প সেই পুরনো ভয়াল স্মৃতিকে ফিরিয়ে দিল। ১৯৩৯ সালের পর ৮৪ বছরে এমন ভূমিকম্প দেখেনি তুরস্ক। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক সমীক্ষা(ইউএসজিএস) বলছে, ১৯৩৯ সালেও তুরস্কের পূর্বাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। সেসময় অন্তত ৩৩ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।