পুবের কলম প্রতিবেদক, বসিরহাট: বারবার কেন ফেক ভিডিও তৈরি করে সন্দেশখালির নির্যাতিতাদের অপমান করা হচ্ছে। আর যারা রাতের অন্ধকারে গিয়ে ভয় দেখিয়ে নির্যাতিতদের মিথ্যা বয়ান ভিডিও করতে চাইছে তাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে এবং পিঁপড়েখালির এক ফেরি মালিকের কাছ থেকে বন্দুক ঠেকিয়ে টাকা ছিনতাই করে নেওয়ার অভিযোগে ধৃত ধর্মেন্দ্র সরকার নামে এক বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে রবিবার সন্দেশখালি থানায় বিক্ষোভ দেখাতে এসেছিল বিজেপি মহিলা কর্মী সমর্থকরা। নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপি মহিলাদের অর্চনা মজুমদার ও বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র। আর এই বিক্ষোভ প্রতিবাদকে কেন্দ্র করেই পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি ও মারমুখী হয়ে ওঠে বিজেপির বিক্ষুব্ধ কর্মী সমর্থকরা। আর সেই ঘটনা যখন পুলিশ সামাল দিতে ব্যস্ত সেই সময় কিছু দূরে দিলীপ মল্লিক নামে এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে মিটিং করছিলেন বিধায়ক সুকুমার মাহাতো। খবর পেয়ে বিজেপির মহিলা কর্মী সমর্থকদের একাংশ সেখানে জমায়েত হয়ে তারা দিলীপ মল্লিক নামে ওই তৃণমূল নেতার বাড়িতে চড়াও হয়ে তাকে বেরিয়ে আসতে বলে শাসাতে থাকে। বিধায়ক সুকুমার মাহাতো তাদেরকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানাতে আক্রমণ মুখী হয়ে ওঠে মহিলারা। তৃণমূলের যুব কর্মী তাতান গাইন ও দিলীপ মল্লিকের উপর চড়াও হয়ে মারধর করতে থাকে। বিধায়ক সুকুমার মাহাতো পুলিশকে ফোন করতে গেলে তার ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয় এবং বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে জানা যায় । যদিও অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, দিলীপ মল্লিক দলবল নিয়ে রাতের অন্ধকারে অভিযোগকারী মহিলাদের টাকা দিয়ে মিথ্যা অভিযোগের ভিডিও করার চেষ্টা করেছেন। যদিও দিলীপ মল্লিক এই ঘটনা বিজেপির পরিকল্পিত মিথ্যা অভিযোগ বলে দাবি করেন। তাদের পায়ের তলার মাটি হারিয়ে যাচ্ছে বলে এইসব করছে। তিনি এই ঘটনার সঙ্গে কোনভাবেই যুক্ত নন। বিধায়ক সুকুমার মাহাতোর দাবি, মহিলাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা তো শুনতে হবে। আর ভাইরাল ভিডিও অসত্য বলে দাবি করছে, তা ঠিক নয়। গঙ্গাধর কয়াল তাদেরই মন্ডল সভাপতি। যিনি ভিডিওয় বক্তব্য রেখেছেন তাকে রাস্তায় নিয়ে আসছে না কেন। রেখা পাত্র উস্কানি দিয়ে বাইরে থেকে মহিলাদের এখানে এনে উত্তপ্ত করছে সন্দেশখালি। সুকুমার মাহাতো সাংবাদিকদের বলেন যে দিলীপ মল্লিককে বিক্ষোভকারীরা খুঁজছেন তারা ওকে চেনে না। অথচ দিলীপ মল্লিক আমার পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন। তাহলে আপনারাই বুঝুন। ওরা বাইরের, না এখানকার। আসলে সবাই তো এই এলাকার নয়। সুকুমার মাহাতো দাবি করেন, অভিযোগের ভিত্তিতে ২৮ ফেব্রুয়ারি ভুয়া নির্যাতিতা মিনতি মাইতি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেই বায়ান দিয়েছিলেন তাঁকে ধর্ষণ করা হয়নি। ভাইরাল ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে তার অনেক পরে। আসলে রেখা পাত্র বাইরের মহিলাদের এনে উত্তেজনা ছড়াচ্ছেন। আক্রান্ত তাতান গাইনের বক্তব্য, বিজেপির দুষ্কৃতি কর্মী সমর্থকরা আমাকে মেরেছে। তার দাবি, যে গঙ্গাধর কয়াল ভিডিওতে বক্তব্য দিয়েছেন, তাকেই বিজেপি ধরে জিজ্ঞাসা করুক না। গঙ্গাধর কয়াল তো আর তৃণমূলের আশ্রিত নয়।
অন্যদিকে, শনিবার পিঁপড়েখালি ফেরিঘাটে ডাকাতির অভিযোগে এক বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করে সন্দেশখালি থানার পুলিশ। সন্দেশখালির জেলিয়াখালি অঞ্চলের পিপড়েখালি ফেরিঘাটের নৌকা মালিক রামকৃষ্ণ ঘোষকে মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে তার কাছে থাকা আনুমানিক ১২হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতি। অভিযোগ মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে তার কাছে থাকা আনুমানিক১২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতীরা। এরপর ওই ফেরিঘাট মালিক রামকৃষ্ণ ঘোষ সন্দেশখালি থানায় এসে লিখিত অভিযোগ জানায়। অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনা তদন্তে নেমে ধর্মেন্দ্র সরকার নামে এক বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করে সন্দেশখালি থানার পুলিশ। ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত আরো জানার জন্য এবং এই ঘটনা কারা কারা জড়িত আছে এবং যে আগ্নেয় অস্ত্র তার মাথায় ঠেকানো হয়েছে সেই সমস্ত আগ্নেয় অস্ত্র উদ্ধার করার জন্য ধৃত ধর্মেন্দ্র সরকারকে পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে রবিবার বসিরহাট মহাকুমা আদালতে তোলা হয়। বিচারক ধৃত ধর্মেন্দ্র সর্দারকে আট দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। সব মিলিয়ে সন্দেশখালিকে ফের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তেৎএমনটাই দাবি বিধায়ক সুকুমার মাহাতোর। তিনি বলেন, আমরা চাইছি সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনটা হোক। মানুষ ভোট দিক। এখানকার মানুষ তৃণমূলের পক্ষেই আছে।