পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ মঙ্গলবার রাত দুটোর সময় জয়পুর বিমানবন্দরে পৌঁছাতেই পুলিশ গ্রেফতার করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র সাকেত গোখেলকে। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’-র বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা।
অক্টোবরে ভেঙে পড়েছিল গুজরাতের মোরবি সেতু। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার জেরেই তাকে গুজরাত পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে অভিযোগ। অকস্মাৎ ব্রিজটি ভেঙে পড়ায় গুজরাতের বিজেপি প্রশাসনের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছিল। উঠে এসেছিল প্রশাসনিক গাফিলতি ও দুর্নীতির কথা। এতে ভোটের আগে বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিল বিজেপি। সেই সময় থেকেই এ নিয়ে সরব সাকেত। এবার গুজরাতের ভোট মিটতেই ‘প্রতিহিংসা’র রাজনীতি শুরু হল সেখানে, অভিযোগ তৃণমূলের। আহমদাবাদের সাইবার ক্রাইম সেলের সহকারী কমিশনার জিতেন্দ্র যাদব জানিয়েছেন, আহমদাবাদে এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। নয়াদিল্লি থেকে সেখানে উড়ে গিয়ে গিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক।
নবী সা.-কে নিয়ে বিজেপির নূপুর শর্মার অবমাননাকর মন্তব্যের বিরুদ্ধেও প্রথম এফআইআরটি দায়ের করেছিলেন সাকেত। তাই আগে থেকেই তিনি বিজেপির টার্গেটে ছিলেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সামান্য টুইটের সূত্র ধরে পুরনো রাগের প্রতিশোধ নিতে চাইছে বিজেপি। যাদের গাফিলতিতে ব্রিজ ভাঙল তাদের কিছু হল না। আর মজা করে একটি টুইট করায় গ্রেফতার হতে হল আমাকে, গ্রেফতারির সময় এভাবেই বিস্ময় প্রকাশ করেন সাকেত।
মোরবি ব্রিজ বিপর্যয়ের পর মোদি সেই স্থল পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন। আরটিআই মারফত জানা গিয়েছে, তাতে সরকারের ৩০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, এমনই একটি টুইট করেছিলেন সাকেত। এমন কোনও আরটিআই হয়নি। জাল আরটিআই নথি দেখানোর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সাকেত গোখেলের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি রাজস্থানের পুষ্কর থেকে তোপ দেগে বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখের খবর। সাকেত খুব ভালো ছেলে। ওর কোনও দোষ নেই। মোরবি একটি বড় দুর্ঘটনা। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে টুইট করেছিল। কিন্তু ভুল কিছু বলেনি ও। এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে করা হচ্ছে। আমি ধিক্কার জানাচ্ছি। তিনি সাকেতের স্বাস্থ্যও নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সাকেতের কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিল। আমার বিরুদ্ধেও তো কত টুইট হয়। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি সামান্য টুইট করায় তাকে গ্রেফতার করা হল! সোমবারই নয়াদিল্লিতে মোদির সঙ্গে সামনাসামনি সাক্ষাৎ হয়েছে মমতার। তারপর ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই তৃণমূলের মুখপাত্রকে গ্রেফতার। বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছে না তৃণমূল নেতৃত্ব। কেন্দ্রের শাসকদল তাদের বিরুদ্ধে যে প্রতিশোধের রাজনীতি করছে, সেটা স্পষ্ট।
এদিন ডেরেক টুইটে জানিয়েছেন, ‘সোমবার রাত ৯টায় দিল্লি বিমানবন্দর থেকে রাজস্থানের জয়পুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন সাকেত। গুজরাত পুলিশ রাজস্থানে তাকে গ্রেফতার করার জন্য অপেক্ষা করছিল। সোমবার গভীর রাত দুটোর সময় সাকেত মাকে ফোন করেন এবং জানান তাকে পুলিশ আহমদাবাদে নিয়ে যাচ্ছে। তারপরই তার ফোন কেড়ে নেয় পুলিশ।’ কেড়ে নেওয়া হয় জিনিসপত্রও। কেন তাকে গ্রেফতার করল মোদি রাজ্যের পুলিশ?
ডেরেকের দাবি, গুজরাতে মোরবি সেতু ভেঙে পড়া নিয়ে টুইট করেছিলেন সাকেত। সেটা নিয়েই আহমদাবাদের সাইবার সেলে দুটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। তবে এভাবে তৃণমূল ও বিরোধীদের মুখ বন্ধ করা যাবে না, হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ডেরেক।
সাকেতের পক্ষ নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, যারা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে তাদের বিরুদ্ধে তিনি নির্ভীকভাবে সরব হয়েছিলেন। তাই ভয় পেয়ে বিজেপি গুজরাত পুলিশকে দিয়ে আমাদের জাতীয় মুখপাত্র সাকেতকে গ্রেফতার করিয়েছে। বিজেপি যদি মনে করে এতে আমরা ভয় পেয়ে মাথা নত করব, তাহলে সেটা হবে মূর্খামি। এটিকে ‘ন্যক্কারজনক ঘটনা’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষও।