ইনামুল হক, বসিরহাট: ঘূর্ণিঝড় রেমাল আতঙ্কে বসিরহাটের ইছামতি, রায়মঙ্গল উপকূলবর্তী এলাকা বাসিন্দারা। বেশ কয়েক জায়গায় নদী বাদে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ইছামতি, রায়মঙ্গল ,ডাসা নদীতে জলস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে হিঙ্গলগঞ্জ হাসনাবাদ সন্দেশখালির বাসিন্দারা। রবিবার দুই এক জায়গায় নদী বাঁধের বিপদজনক অবস্থা দেখে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন। কিন্তু রেমাল আছড়ে পড়ার পরেই সন্দেশখালির টোংতলায় ডাসা নদীর বাধের ছয়শো ফুট অবস্থাআরো খারাপ হয়ে পড়ে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে মেরামতির কাজ শুরু হয়। রেমালের প্রভাবে হাসনাবাদ লেবুখালী রোডে স্বরূপকাঠির কাছে একটি বড় গাছ উপরে পড়ে। তড়িঘড়ি তা কেটে ফেলার ব্যবস্থা করে বিপর্যয় মোকাবিলার কর্মীরা। হিঙ্গলগঞ্জে একটি বড় গাছ উপড়ে একটি ঘরের উপর পড়ে। সেই সঙ্গে দুটো ইলেকট্রিক পোস্ট ভেঙে যায়। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে গাছ কাটার কাজ। এই গাছ পড়ে থাকায় লেবুখালী রোডে তৈরি হয় যানজট।বসিরহাটের শাঁকচূড়া ও টাকির বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রেমালের দাপট। গাছ ও গাছের ডাল পড়ে ক্ষতি হয়েছে কেবলের তার। মাথায় হাত কেবেল অপারেটরদের। এদিন পরিস্থিতি সরে জমিনে খতিয়ে দেখতে সন্দেশখালির ডাসা নদীর সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শনে আসেন রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতো। নদী বাঁধের অবস্থা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি তারা এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। স্থানীয় প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। যদিও প্রশাসন আগেভাগেই সতর্ক হয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে।প্রতিটা ব্লকে জাতীয় মুকাবালা বিপর্যয় টিম ও রাজ্য মোকাবেলা বিপর্যয় টিম প্রস্তুত রয়েছে। ইতিমধ্যে ১২ টা জাতীয় মোকাবেলা দল প্রস্তুত রয়েছে সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ এলাকায়। বাড়তি নজর রয়েছে সেচ, বিদ্যুৎ ও স্বাস্থ্য দপ্তরের। ৫০ হাজার পানীয় জলের প্যাকেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিবারে শুকনো খাবারের প্যাকেট মজুদ করা হয়েছ। দুর্বল নদী বাঁধ এলাকা গুলি থেকে নিকটবর্তী স্কুল বাড়ি ও ত্রাণ শিবিরে কিছু মানুষকে সরানো হয়েছে। সোমবার ও সকাল থেকে হালকা থেকে ভারি বৃষ্টি। পাশাপাশি বইছে ঝড়ো হাওয়া। আমফান, ইয়াসের দগদগে খত থেকে শিক্ষা নিয়ে সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষ আতঙ্কে প্রহর গুনছে। বসিরহাট মহাকুমার হিঙ্গলগঞ্জ বিধানসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখলেন হিঙ্গলগঞ্জের বিধায়ক দেবেশ মন্ডল। কথা বললেন সাধারণ মানুষদের সাথে। ফেরিচলা চলের উপর নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে মৎস্য জীবীদের নদীতে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পাশাপাশি নদী বাঁধ পরিদর্শন করে বিধায়ক স্বয়ং নিজেই। বসিরহাটের হিঙ্গলগঞ্জে দুই সদ্যোজাত শিশুকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন দুই মহিলা। তারা আটকে পড়ে ঝড়ের মধ্যে। হিঙ্গলগঞ্জের লেবুখালী ফেরিঘাটে। যেহেতু ফেরিঘাট পরিষেবা ঝড়ের প্রভাবে বন্ধ তাই তারা বাড়ি ফিরতে পারছিল না। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর সিভিল ডিফেন্স এর কর্মীরা এসে তাদেরকে নিরাপদ স্থানে পাশের একটি পাকা বাড়ির নিচে নিয়ে যায়। হাসনাবাদের বরুনহাটে গ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকায় ইছামতি নদীর বাঁধের বেশ খানিকটা অংশ বিপদজনক অবস্থা। হাসনাবাদেরর আংনারা গ্রামের ১৪ নম্বর বুথ এলাকায় নদী বাঁধ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় আগেভাগেই স্থানীয় যুবকরা পলিথিন, বাঁশ, মাটির বস্তা দিয়ে নদী বাঁধ মেরামতিতে নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।জোয়ারের জল বেড়ে যাওয়ায়, প্রবল ঢেউয়ের পাশাপাশি নদীর বাঁধ বেশ কয়েক ফুট বসে যায়।জোর কদমে মেরামতির কাজ চলছে।দক্ষিণ বরুনহাট, রাজবংশী পূর্বপাড়া মায়ের বাড়ির কাছে ইছামতি নদীর বাঁধ বিপদজনক অবস্থা বেশ কয়েক ফুট বসে যায়। জোয়ারে জলে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় সেচ দপ্তর তৎপরতায় কাজ শুরু করেছে কিছু শ্রমিক নিয়ে। সন্দেশখালির বিভিন্ন এলাকা রায়মঙ্গল, কালিন্দী, বড় কলাগাছি,ছোট কলাগাছি সহ একাধিক জায়গায় নদী বাধের অবস্থা বিপজ্জনক।প্রশাসনের পক্ষ থেকে চলছে নজরদারদারী। সকাল থেকে হালকা থেকে মাজারে বৃষ্টি সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া, বেলা যত বাড়ছে হাওয়ার গতিবেগ ও বৃষ্টি তত বাড়ছে। ইতিমধ্যে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল, ঠিক তার আগে হিঙ্গলগঞ্জ, দক্ষিণ বোলতলা এলাকায় ২০ থেকে ২৫ ফুট নদী বাঁধ ভেঙ্গে জল ঢুকতে শুরু করে গ্রামে। আতঙ্কে গ্রামের মানুষ, তড়িঘড়ি স্থানীয় বাসিন্দারা সেই বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করে। নিজেরাই, পাশাপাশি প্রশাসনকে খবর দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। রেমালের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির বাসিন্দারা বিভিন্ন সরকারি স্কুল ও ফ্লাড শেল্টার গুলিতে আশ্রয় নেয়। হিঙ্গলগঞ্জ বিধানসভার পূর্ব-ঘুণী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি আশ্রয় শিবিরে ৭৫ টি পরিবারের প্রায় ৪০০ জন দুর্গত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেখানে তাদের রবিবার রাত থেকেই শুকনো খাবারের পাশাপাশি রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করে স্থানীয়রাই। পরে পঞ্চায়েতের তরফ থেকেও কিছু ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।