জঙ্গি সন্দেহে ডোমকল থেকে ছ’জন ও কেরল থেকে আরও তিন জন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় সাড়ে তেরো মাস। গ্রেফতার হওয়া পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলে ধারাবাহিক ভাবে লিখছেন পুবের কলম প্রতিনিধি জিশান আলি মিঞা। আজ প্রথম কিস্তি।
প্রায় সাড়ে তেরো মাস আগে জঙ্গিযোগে নাম জড়ায় মুর্শিদাবাদের। ২০২০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কেরলের এরনাকুলাম থেকে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ গ্রেফতার করে ডোমকল মহকুমার তিন পরিযায়ী শ্রমিককে। ডোমকল– জলঙ্গি– রানীনগর থানা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়ে আরও ছয় সন্দেভাজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওইদিন ট্যুইট করে এনআইএ জানান ধৃতদের প্রত্যেকের সঙ্গে জঙ্গিযোগ রয়েছে। পরিবারের লোকেদের এমনকি প্রতিবেশীদের সকলের দাবি ধৃতরা প্রত্যেকেই নির্দোষ। তাদের মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে। কিন্তু পরিবার বা প্রতিবেশীদের কথা পৌঁছায়নি তদন্তকারী সংস্থার লোকেদের কাছে। তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় সাড়ে তেরো মাস। যন্ত্রণা বুকে চাপা দিয়ে বাড়িতেই পড়ে রয়েছেন ধৃতদের পরিবার পরিজনেরা। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে বর্তমানে ধৃতদের ঠাঁই হয়েছে দিল্লির তিহার জেলে।
তাদেরই একজন ডোমকলের গঙ্গাদাসপাড়া এলাকার বাসিন্দা বছর তেইশের মেধাবী ছাত্র নাজমুস সাকিব। এলাকায় শান্ত প্রকৃতির– নির্বিবাদী বলেই পরিচিত ছিল সে। ডোমকল পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র ছিল সে। পড়াশোনা আর নামায– হাদিস চর্চা ছিল তার নেশা।
১৯ সেপ্টেম্বর ভোর তিনটে নাগাদ এনআইএ তাদের বাড়িতে হানা দিয়ে গ্রেফতার করে তাকে। পড়াশোনার কাজে ব্যবহৃত ল্যাপটপ– মোবাইল– বেশ কিছু বই বাজেয়াপ্ত করেন তদন্তকারীরা। বর্তমানে নয়া দিল্লির তিহার জেলে বসেই লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে– অনলাইনে ষষ্ঠ সেমিস্টার পরিক্ষাতেও ভালো ফল করেছে সাকিব। মাসে দুবার সাক্ষাৎ বা ভিডিও কলে পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান তিনি। তিন বার দিল্লি গিয়ে জেলের অনুমতি ক্রমে তার সঙ্গে কথাও বলেছেন সাকিবের বড় ভাই রিজওয়ান আমিন।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে তিহার জেলে তাদের নিয়মিত নিরামিষ খাবার দেওয়া হয়। বাড়ির ছোট ছেলের এহেন পরিস্থিতিতে প্রায় সাড়ে তেরো মাস ধরে ঘুম উড়েছে তার বৃদ্ধ আব্বা– আম্মা নুরুল ইসলাম ও তহমিনা বিবির। একবছরের বেশি সময় ধরে সামাজিকভাবে কার্যত লাঞ্চনার শিকার সাকিবের পরিবার। সাকিবের বড় ভাই রিজওয়ান আমিন বাড়িতেই হোমিও চেম্বার চালাতেন– সাকিবের গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই চেম্বারে কমেছে রোগীর সংখ্যা। রাজ্য সড়কের ধার লাগোয়া বাড়িতে দুটি দোকানঘর– গোডাউন ভাড়া থেকেও কিছুটা আয় হত। যা দিয়েই সংসার চলত সাকিবের বৃদ্ধ আব্বা-আম্মার। সাকিব গ্রেফতার হওয়ার পর ভাড়াটিয়ারা ঘর ছেড়েছে। বাড়িতেই চলত একটি বেসরকারি স্কুল। প্রায় সাড়ে তিনশো পড়ুয়া সেখানে পড়াশোনা করত। সাকিব গ্রেফতার হওয়ার পর বন্ধ হয়েছে স্কুলও। ফলে সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন ওই বৃদ্ধ দম্পত্তি। বাড়িতে প্রতিবেশী– আত্মীয় স্বজনেরাও আসা যাওয়া কমিয়েছেন। সামান্য জমিজমা থেকে যা ফসল উৎপন্ন হয় তা বিক্রি করে যে আয় হয় তা দিয়েই কোনও রকমে চলছে সংসার।
সম্প্রতি উকিল ধরেছে সাকিবের পরিবার। তার আব্বা নুরুল ইসলাম বলছেন– মামলার খরচ চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ছে। পরিবারের লোকেরা চাইছেন দ্রুত চার্জশিট দিয়ে ছেলে যে নির্দোষ তা ঘোষণা করুক আদালত। কবে স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি সে দিকেই তাকিয়ে পরিবারের লোকেরা।