পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ আমরা বিভিন্ন কাজের প্রসঙ্গে প্রায় বলে থাকি, ‘একদিনে কি সম্ভব?’ অথবা, ‘একদিনে এত কিছু পারা যায় না!’ কিন্তু একদিনে কি কি সম্ভব তার গোটা ধারণাটাই পাল্টে দিলেন কেরলের এক তরুণী রেহেনা শাহজাহান। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ৮১টি সার্টিফিকেট হাসিল করে বিশ্ব রেকর্ড গড়লেন রেহেনা।
মাত্র অর্ধেক (.৫) নম্বরের জন্য তাঁর স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে এমকম পড়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়েছিল তাঁর। এই ব্যর্থতায় চরম দুঃখ পেয়েছিলেন রেহানা।
কিন্তু নিজের ব্যর্থতার জমিতেই সাফল্যের ইমারত গড়বেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন রেহানা। জামিয়া মিলিয়ায় সুযোগ না পেয়ে অনলাইনে একসঙ্গে দুটি স্নাতোকত্তর কোর্সে ভর্তি হন তিনি। একদিকে সোশ্যাল ওয়ার্কে এমএ অন্যদিকে গাইডেন্স এন্ড কাউন্সেলিং কোর্সে ডিপ্লোমা। শুধু তাই নয়, এই ডিগ্রি ও ডিপ্লোমা অর্জনের সময় তিনি একটি এনজিও-তে নারীদের উন্নয়নের জন্য কাজও করেছেন। এরপর কমন অ্যাডমিশন টেস্ট (ক্যাট) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তাঁর স্বপ্নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে এমবিএ কোর্সে ভর্তি হন। এই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ থেকেই তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮১টি অনলাইন সার্টিফিকেট অর্জন করে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন।
কোয়াট্টাম জেলার ইলিকলের বাসিন্দা, ২৫ বছরের রেহেনার অনুপ্রেরণা তাঁর নিজের বুবু নেহলা। বুবু নেহলা লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স থেকে অপারেশনাল রিসার্চে স্নাতকোত্তর পাশ করে একটি ভালো চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। রেহেনার মতে,তাঁর দিদি বরাবরই পড়াশোনায় ভালো। কিন্তু রেহেনা মনে করত, সে নিজে খুব সাধারণ মানের ছাত্রী। এই সাধারণ থেকে অসাধারণ হওয়ার যাত্রায় পরিশ্রমই ছিল তাঁর একমাত্র হাতিয়ার। রেহেনার কথায়, শুধুই স্বপ্ন দেখার থেকে চেষ্টা করা বেশি ভালো। ক্যাট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর রেহানা উপলব্ধি করে যে, পড়াশোনাই তাঁর ভবিষ্যত। এভাবে পড়ালেখার প্রতি টান আরও বেড়ে যায়। আর সেই ভালোবাসার পরিণাম এই বিশ্ব রেকর্ড।
এর আগে একদিনে সর্বাধিক সার্টিফিকেট পেয়ে যিনি রেকর্ড গড়েছিলেন, তিনি পেয়েছিলেন ৭৫টি সার্টিফিকেট। ৮১টি সার্টিফিকেট পেয়ে সেই রেকর্ড ভাঙলেন রেহেনা শাহজাহান। সম্প্রতি বাবা পি এম শাহজাহান-এর শল্যচিকিৎসার সময় তাঁর সেবা শুশ্রুসা করার জন্য একটি চাকরি ছেড়েছেন রেহেনা। অবশ্য সেজন্য তাঁর বিন্দু মাত্র আক্ষেপ নেই।
রেহানা জানিয়েছেন, সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে তাঁর পরিবারই তাঁকে সবথেকে বেশি সহায়তা করেছে। পড়াশোনার বাইরে রেহেনার জীবনে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ তাঁর মা সিএম রাফিয়াত, স্বামী ইব্রাহিম রিয়াজ ও দিদি নেহলা। রেহানা আরও প্রমাণ করেছেন, হিজাব কোনও প্রতিবন্ধকতা নয়। বরং হিজাব তাঁকে আরও অনুপ্রেরণা দেয়। দেশের অসংখ্য মেয়ের কাছে প্রেরণা হয়ে থাকবেন কেরলের রেহেনা শাহজাহান।