পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ আধুনিক কবি হেলাল হাফিজকে প্রেম ও বিরহের কবি বলেও অনেকে চিনে থাকেন। তিনি ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ১৯৮৬ সালে তাঁর প্রথম কবিতা সংকলন ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত হবার পরপরই তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাঁর অন্যতম জনপ্রিয় কবিতার মধ্যে রয়েছে – নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়, যার দুটি পঙক্তি কালের বির্বতণে অমর- ‘‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’’
এছাড়াও ফেরিওয়ালা, অশ্লীল সভ্যতা সহ বেশ কিছু কবিতার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের কবিতামোদীদের মুখে মুখে চলে আসেন। এরপর বেশ কিছু দিন কোনো কবিতার বই বের করেননি। দীর্ঘ ২৬ বছর পর ২০১২ সালে প্রকাশ করেন তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’। তিনি কর্মজীবনে সাংবাদিকতার পাশাপাশি করেছেন সাহিত্য সম্পাদনা। ২০১৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। প্রেম ও বিরহের এই স্বল্পপ্রজ কবি চিরকাল বেঁচে থাকবেন তাঁর কবিতায়, পঙ্কিতে এবং নানা বাণীতে। হেলাল হাফিজ উক্তি নিয়েই আজকের এই লেখা-
“কোনদিন, আচমকা একদিন
ভালোবাসা এসে যদি হুট করে বলে বসে,
“চলো”, যেদিকে দু’চোখ যায় চলে যাই,
যাবে?”
“ব্যর্থ হয়ে থাকে যদি প্রণয়ের এতো আয়োজন,
আগামী মিছিলে এসো
স্লোগানে স্লোগানে হবে কথোপকথন”।
“আকালের এই কালে সাধ হলে পথে ভালোবেসো,
ধ্রুপদী পিপাসা নিয়ে আসো যদি
লাল শাড়িটা তোমার পড়ে এসো”।
“তবু ফেরে, কেউ তো ফেরেই,
আর জীবনের পক্ষে দাঁড়ায়,
ভালোবাসা যাকে খায় এইভাবে সবটুকু খায়”।
“যদি কোনোদিন আসে আবার দুর্দিন,
যেদিন ফুরাবে প্রেম অথবা হবে না প্রেম মানুষে মানুষে
ভেঙে সেই কালো কারাগার
আবার প্রণয় হবে মারণাস্ত্র তোমার আমার”।
“দুই ইঞ্চি জায়গা হবে?
বহুদিন চাষাবাদ করিনা সুখের।”
“হয়তো তোমাকে হারিয়ে দিয়েছি
নয় তো গিয়েছি হেরে
থাক না ধ্রুপদী অস্পষ্টতা
কে কাকে গেলাম ছেড়ে ”
“এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে,
এক মানবী কতোটা আর কষ্ট দেবে!”
“যদি যেতে চাও, যাও
আমি পথ হবো চরণের তলে
না ছুঁয়ে তোমাকে ছোঁব
ফেরাবো না, পোড়াবোই হিমেল অনলে।”
“ইচ্ছে ছিল রাজা হবো
তোমাকে সাম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো,
আজ দেখি রাজ্য আছে
রাজা আছে
ইচ্ছে আছে,
শুধু তুমি অন্য ঘরে”।
“জলের আগুনে পুড়ে হয়েছি কমল,
কী দিয়ে মুছবে বলো আগুনের জল।”
“ধ্রুপদী আঙিনা ব্যাপী
কন্টকিত হাহাকার আর অবহেলা,
যেন সে উদ্ভিদ নয়
তাকালেই মনে হয় বিরান কারবালা।”
“কোনো প্রাপ্তিই পূর্ণ প্রাপ্তি নয়
কোনো প্রাপ্তির দেয় না পূর্ণ তৃপ্তি
সব প্রাপ্তি ও তৃপ্তি লালন করে
গোপনে গহীনে তৃষ্ণা তৃষ্ণা তৃষ্ণা।”
“একবার ডাক দিয়ে দেখো আমি কতোটা কাঙাল,
কতো হুলুস্থূল অনটন আজম্ন ভেতরে আমার”।
“উথাল পাথাল করে সব কিছু ছুঁয়ে যাই
কোনো কিছু ছোঁয় না আমাকে,
তোলপাড় নিজে তুলে নিদারুণ খেলাচ্ছলে
দিয়ে যাই বিজয় তোমাকে”।
“আমার যত শুভ্রতা সব দেবো,
আমি নিপুণ ব্লটিং পেপার
সব কালিমা, সকল ব্যথা ক্ষত শুষেই নেবো”।
“যুক্তি যখন আবেগের কাছে অকাতরে পর্যুদস্ত হতে থাকে, কবি কিংবা যে
কোনো আধুনিক মানুষের কাছে সেইটা বোধ করি সবচেয়ে বেশি সংকোচ আর সঙ্কটের সময়।”
“আজন্ম মানুষ আমাকে পোড়াতে পোড়াতে কবি করে তুলেছে
মানুষের কাছে এওতো আমার এক ধরনের ঋণ।
এমনই কপাল আমার
অপরিশোধ্য এই ঋণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।”
“এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়”।
“আমার কষ্টেরা বেশ ভালোই আছেন, মোটামুটি সুখেই আছেন।
প্রিয় দেশবাসী;
আপনারা কেমন আছেন?”