পারিজাত মোল্লা: মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ অবিলম্বে রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করার নির্দেশ জারি করলো। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং ও ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করলেন প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। এদিন প্রধান বিচারপতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন, ‘যে সব পড়ুয়ার সেমিস্টার শেষ হয়ে গেছে, তাঁদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হস্টেল ছাড়ার কথা জানানো হোক’। এদিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের আইনজীবী দাবি করেন, ‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও ছাত্র সংসদ নেই’। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীকে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেন, “যাদের সেমেস্টার শেষ হয়ে যাচ্ছে তাঁরা যাতে হস্টেল ছেড়ে চলে যান সেই বিষয়টি দেখতে হবে । রুমে রুমে গিয়ে তাঁদের খুঁজে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বের করে দিন।” ওই আইনজীবী জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসিটিভি বসানোর চেষ্টা চলছে । পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া চলছে’। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এদিন নির্দেশ দেয়, ‘আগামী শুনানিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গাইড লাইন ফ্রেম করে আদালতকে সহযোগিতা করবে’।
রাজ্য সরকার, বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্র ইউনিয়ন-সহ অন্য সব পক্ষকে হলফনামা দিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানাতে নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এদিন জানানো হয়, ‘আপাতত ইউজিসি তহবিল বন্ধ রয়েছে। রাজ্য শুধু অধ্যাপকদের বেতন দেয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্মের জন্য রাজ্য ইউজিসির কাছ থেকে ২৭০ কোটি টাকা চেয়েছে’।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের আইনজীবী এদিন বলেন, “একদিকে বলা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও ইউনিয়ন নেই। অন্যদিকে, ইউনিয়নের নাম করে বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে!” প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি ইউনিয়ন না-থাকে, তাহলে পড়ুয়ারা মামলায় যুক্ত হয়ে নিজেদের বক্তব্য জানাতে পারেন। ২৬ সেপ্টেম্বর সেই হলফনামা জমা নেবে আদালত।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংসদ থাকা প্রসঙ্গে এদিন সরকার পক্ষের আইনজীবী সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “আদালত বিশ্ববিদ্যালয়কে হলফনামা জমা দিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে বলেছে। ছাত্ররা জানিয়েছেন, ছাত্র সংসদ নেই। এরপর প্রধান বিচারপতি জিজ্ঞেস করেন, তাহলে ছাত্র সংসদের নামে সাংবাদিক বৈঠক করছেন কেন? বিজ্ঞান ও আর্টস বিভাগের ছাত্রপ্রতিনিধিরা ওয়াকলতনামা দাখিল করেছেন। বিচারপতি তা গ্রহণ করেছেন।”
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের আইনজীবী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও ছাত্র সংসদ নেই। কারণ ছাত্র সংসদ গঠন হয়েছিল ২০১৯ সালে।” তাঁর দাবি, ‘ইউনিয়নের নামে ফেস্ট হচ্ছে, টাকা তোলা হচ্ছে, ইউনিয়নের নামে রাজনৈতিক বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে, সাংবাদিক বৈঠক করা হচ্ছে’। মামলাকারী আইনজীবী জানান, ‘রাজ্যের অনেকগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে তিনি জেনেছেন সেখানে কোনও অ্যান্টি র্যাগিং কমিটিই নেই। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়নের কোনও নির্বাচন হয়নি’। অবিলম্বে বিষয়টি রাজ্যকে দেখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড গঠনেরও নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ইউজিসির নিয়ম চালু করা নিয়ে মামলা করেছিলেন ওই আইনজীবী। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।