পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: চার মাস পর সংসদে প্রত্যাবর্তন। সাংসদ হিসেবেই। ‘অযোগ্য’ থেকে এখন তিনি যোগ্য সাংসদ। সংসদ ভবনের বাইরে মহাত্মা গান্ধির মূর্তিতে প্রণাম করে সংসদে প্রবেশ করলেন সাংসদ রাহুল গান্ধি।
সোমবার লোকসভায় বাদল অধিবেশন সবে শুরু হয়েছে। সেইসময়ই লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার সচিবালয় থেকে আসে বিবৃতি। জানানো হয় রাহুল গান্ধির সাংসদ পদ খারিজের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হল। সুরাতের আদালত ও গুজরাত হাইকোর্টের রায়ের উপর সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দেওয়ার পর থেকেই কংগ্রেস স্পিকারের কাছে রাহুলের সাংসদ পদ ফেরানোর দাবি করতে থাকে। এদিন স্পিকারের বিবৃতির পর কংগ্রেস তথা ‘ইন্ডিয়া’ জোটে খুশির হাওয়া। ফলে মঙ্গলবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে যে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে চলেছেন বিরোধীরা, সেই কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারবেন রাহুল। যোগ দিতে পারবেন ওই সংক্রান্ত বিতর্কেও।
মোদি-পদবি মামলায় রাহুলকে দোষীসাব্যস্ত করেছিল সুরাতের এক আদালত। রাহুলকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ায়। তখন লোকসভার স্পিকার রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করে দেন। রাহুলের বক্তব্য ছিল, বিজেপির ‘প্রতিহিংসা’র রাজনীতির শিকার তিনি। সত্য বলার জন্য তাঁকে সাজা পেতে হচ্ছে। সেইসময় নিজের ট্যুইটারের ‘বায়ো’ বদলে ফেললেন রাহুল। বায়োতে নিজের পরিচয় হিসেবে লেখেন ‘অযোগ্য সাংসদ’। মনে করা হয়ে থাকে, বিজেপিকে খোঁচা দিতেই এই ‘শধবন্ধ’ ব্যবহার করেন রাহুল। পাশাপাশি আইনি লড়াইও চালিয়ে যান। সুরাতের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গিয়ে সুবিধা করতে পারেননি রাহুল।
নিম্ন আদালতের রায়ই হাইকোর্ট বহাল রাখে। অবশেষে শুক্রবার স্বস্তি মেলে সুপ্রিম কোর্টে। ওইদিন সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়। সেই স্থগিতাদেশের ৪৮ ঘণ্টা পর রাহুলকে সাংসদ পদ ফিরিয়ে দিলেন স্পিকার। তারপরই ফের নিজের ‘বায়োবদল’ করলেন রাহুল। এবার তিনি সেখানে লিখলেন ‘মেম্বার অফ পার্লামেন্ট’।
সোমবার দুপুর ১২টা নাগাদ সংসদে আসার কথা ছিল কেরলের ওয়াইনাডের সাংসদ রাহুলের। কিন্তু তার ১০মিনিট আগেই সংসদে পৌঁছে যান তিনি। পরে দুপুর ২টোয় লোকসভার অধিবেশন শুরু হলে রাহুল তাতে অংশ নেন। পরে সোনিয়া গান্ধির সঙ্গে সংসদ চত্বরে রাহুলকে দেখা যায় ডিএমকে দলের প্রতিষ্ঠাতা এম করুণানিধির ছবিতে শ্রদ্ধা জানাতে। সোমবার ছিল করুণানিধির মৃত্যু বার্ষিকী। রাহুলের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের সময় উপস্থিত ছিলেন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র দক্ষিণ ভারতের শরিকেরাও। রাহুলকে নিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ সাংসদদের উৎসবের পরিবেশের মধ্যেই মুলতবি হয়ে যায় সংসদের লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন। মণিপুর নিয়ে আলোচনার দাবিতে সরব হন বিরোধীরা। তুমুল হইচইয়ের মধ্যে এদিন দুপুর ২টো পর্যন্ত মূলতবি হয়ে যায় লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন।
এদিন সাদা রঙের শার্ট ও কালো ট্রাউজার্স পরে সংসদে আসেন রাহুল। তাঁর সংসদে এসে পৌঁছানোর আগে থেকেই সংসদের গেটের সামনে তাঁকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। অধীর চৌধুরি, পি চিদম্বরমের মতো নেতা-সহ ‘ইন্ডিয়া’-র শরিকরাও উপস্থিত ছিলেন সংসদ ভবনের গাড়ি বারান্দার সামনে। রাহুলকে সঙ্গে নিয়েই সংসদে ঢোকেন সোনিয়া। হাসিমুখে সেই শুভেচ্ছা গ্রহণ করেন তাঁরা। রাহুলের সাংসদ পদ ফিরে পাওয়া নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যে চলে মিষ্টিমুখ। ‘ইন্ডিয়া’র শরিকদেরও দেখা গেল মিষ্টিমুখ করতে।