পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ ১৭ বছর বয়সি জৌরেজ আহমেদ জয়েন্ট এন্ট্রান্স এক্সাম (অ্যাডভান্সড) নামে পরিচিত ভারতের শীর্ষস্থানীয় ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকা পরীক্ষায় এ বছর ৩৯৩তম স্থান অর্জন করেছেন। তার বাবা শাকিল বিহারের অন্যতম পিছিয়ে পড়া এলাকা দারভাঙ্গার কেউতীর জলওয়ারায় এক সাধারণ দোকানি। তার পরিবারের পক্ষে এই ধরনের পরীক্ষার জন্য ব্যয়বহুল প্রাইভেট কোচিংয়ের খরচ বহন করার মতো ক্ষমতা ছিল না। এখানেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় ‘রহমানি ৩০’। কোচিংয়ের জগতে এটি একটি দৃষ্টান্ত। জৌরেজের মতো রহমানি ৩০-এর একজন মেয়ে সহ অন্তত ৬৫ জন ছাত্র পটনার মূল কেন্দ্র থেকে এই বছর ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। রহমানি ৩০-এর সব পরীক্ষার্থীই জেইই (মেইন)-এর জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছে। এটি নিঃসন্দেহে কঠিন পরীক্ষাগুলির একটি।
ঋত্বিক রোশনের সিনেমার বদৌলতে সুপার ৩০-র কথা হয়তো অনেকটাই পরিচিত। তারই আদলে তৈরি করা হয়েছে রহমানি ৩০। আইআইটি প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের কোচিং করানোর জন্য এই ধরনের প্রথম কেন্দ্র এটি। ২০০৮ সালে বিখ্যাত ইসলামি স্কলার মরহুম মাওলানা ওয়ালি রহমানি ‘রহমানি ৩০’ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৯ সাল থেকে রহমানি ৩০-তে ৪০০ জনের বেশি ছাত্র বিভিন্ন আইআইটিতে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। এর বাইরে প্রায় ১০০০ শিক্ষার্থী জেইই (মেইন) এবং ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে যা ভারতের দ্বিতীয় সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট। রহমানি ৩০ সেরা ৩০ জন শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে থাকা খাওয়া এবং শিক্ষা প্রদান করে যার খরচ দুই বছরের জন্য ৬০ লক্ষ টাকা। জৌরেজ বলেন, রহমানি ৩০-তে কম খরচে বা বিনা খরচে থাকা ছাড়াও এখানে শিক্ষক এবং পরামর্শদাতাদের উপদেশাবলি অত্যন্ত উচ্চমানের। শিক্ষকরা যোগ্যতাসম্পন্ন। ধর্মীয় পরিবেশ রয়েছে যা নৈতিকতাকে উন্নত করতে সাহায্য করে। রহমানি ৩০-এর শাখা ঔরঙ্গাবাদ (মহারাষ্ট্রে), বেঙ্গালুরু এবং হায়দরাবাদে রয়েছে। মূল কেন্দ্র ছাড়াও পটনায় মেয়েদের একটি ইউনিট রয়েছে। মূল কেন্দ্রটি পটনার আনিসবাদে একটি ভাড়া করা অ্যাপার্টমেন্ট ‘আনন্দ প্যালেস’-এ পরিচালিত হয়।
রহমানি-৩০’তে প্রার্থীরা দুই বছরের আবাসিক কোর্সে ভর্তি হন। যেহেতু কোভিড-১৯ প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে– তাই ২০২০ সালে একটি অনলাইন মোড শুরু হয়েছিল। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মোবাইল ফোনে অনলাইন ক্লাসে যোগ দিয়েছিলেন। যদিও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারীদের জন্য নেটওয়ার্ক সমস্যা ছিল। ১৭ বছর বয়সি তৌসিফ আলমহাস সিআরএল ৭১৬৯ এবং ক্যাটিগোরির্ রাঙ্ক ১৩৩৯ পেয়েছে। তার বাবা মুহাম্মদ রশিদ একজন দর্জির কাজ করেন এবং তার মা একজন গৃহকর্মী। তার পরিবার তাকে অন্য কোনও কোচিং সেন্টারে পড়াশোনা করতে পাঠাতে পারেনি– কারণ তারা মোটা অঙ্কের ফি নেয়। তিনি তার একজন সিনিয়রের কাছ থেকে রহমানি ৩০ সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন এবং ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তার ভাষায়– রহমানি ৩০-এর সবচেয়ে সহায়ক অংশ হল গ্র&প স্টাডি যেখানে সহপাঠিরা পড়ার ক্ষেত্রে সন্দেহ দূর করতে সাহায্য করে। তৌসিফের পরবর্তী লক্ষ্য হল দেশের শীর্ষ পরীক্ষা আইএএসে উত্তীর্ণ হওয়া। এমন বহু সাফল্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রহমানি ৩০ এর নাম। রহমানি ৩০ নিজেকে একটি আন্দোলন বলে অভিহিত করে। অর্থনৈতিক– সামাজিক এবং শিক্ষাগতভাবে পিছিয়ে পড়া ছাত্রদের মেধা লালনপালন করতে চায় তারা।
আরও খবর পড়ুনঃ
- পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরবে ১৪ হাজীর মৃত্যু, নিখোঁজ ১৭ জন
- কোটায় ফের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার্থীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার
- সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে পুনরায় নিট পরীক্ষা, জানালেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান
- আটকে পড়া পর্যটকদের সাহায্য করতে সিকিমে হেল্পডেস্ক চালু নবান্নের, দেওয়া হল হেল্পলাইন নম্বর
- অস্ত্রোপচার শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন অভিষেক