পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: লোকসভা ভোটের আগেই ফের একবার বেকারত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। ভারতীয় অর্থনীতির চড়া বৃদ্ধির হার মেনে নিলেও দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রশ্ন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। যেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০৪৭-এর মধ্যে বিকশিত ভারতের লক্ষ্য নিয়ে ভোটের প্রচার করছেন, সেখানে রিজার্ভ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নরের মন্তব্য নিয়ে খুব স্বাভাবিকভাবেই চাপে কেন্দ্র সরকার।
তৃণমূল, কংগ্রেস-সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির সুরেই তাঁর প্রশ্ন, ‘এই আর্থিক বৃদ্ধির ফলে কি যথেষ্ট চাকরি তৈরি হচ্ছে?’ রাজনের বক্তব্য, ভারতীয় উদ্ভাবকদের অনেকেই দেশে থাকতে চাইছেন না। সহজে বাজারের নাগাল পাওয়ার জন্য তাঁরা ব্যবসা করতে সিঙ্গাপুর বা সিলিকন ভ্যালিতে পাড়ি দিচ্ছেন। ভারতে না থাকার সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। কেনো তাঁরা ভারতের বাইরে যাচ্ছে সেটা জানা প্রয়োজন। এখানে রাজনের সংযোজন, আসলে তাঁরা নিজেদের সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চান। আমার মনে হয়, ভারতের একটা তরুণ সমাজ রয়েছে, যাদের মানসিকতা বিরাট কোহলির মতো—আই অ্যাম সেকেন্ড টু নান ইন দ্য ওয়ার্ল্ড।’
২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতের উন্নত অর্থনীতি- শীর্ষক এক আলোচনাচক্রে রাজন বলেন, এই মুহূর্তে ভারতের সোনালি সময় চলছে। আর আমাদের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের আশেপাশে। এটা উদ্বেগের কারণ, চিন বা কোরিয়ার যখন সোনালি সময় ছিল তখনকার থেকে ভারতের বর্তমান বৃদ্ধির হার অনেক কম।
রিজার্ভ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নরের মতে, ভারতকে উন্নতি করতে গেলে সবার আগে দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে আরও শিক্ষিত এবং দক্ষ করতে হবে। রাজন মনে করেন, ভারতে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু সেটা তখনই কাজে আসবে যখন সেই কর্মক্ষম যুবক-যুবতীদের ভালো কাজের সুযোগ তৈরি করা যাবে। তাঁদের জন্য আরও চাকরির ব্যবস্থা করা যাবে। সমস্যা হল, এখানেই আমরা পিছিয়ে পড়ছি।
তাঁর সংযোজন, ‘তবে আপনি যদি অন্যান্য ক্ষেত্রের দিকে তাকান, তা হলে অন্যতম বড় উদ্বেগের কারণ কৃষিতে কর্মসংস্থান বাড়ছে। পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে অনুযায়ী, সরকার সর্বতোভাবে উদ্যোগী হলেও ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বাড়েনি। রাজনের আক্ষেপ, বিগত ১০ বছরে চাকরির বাজারের অবস্থা এমনটা হয়েছে তাও নয়। কয়েক দশক ধরে এই সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে। তবে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে সমস্যাগুলি খুঁজে বের করা দরকার। রাজনের আক্ষেপ, বেকারত্বের সংখ্যা বেশি, ছদ্মবেশি বেকারত্বের সংখ্যা আরও বেশি, শ্রমশক্তিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ কম। খুব বেশি সংখ্যায় উচ্চ শিক্ষিতরা বেকার, বিপুল সংখ্যক মানুষ সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করছে। রেলে পিয়ন পদে চাকরির জন্য আবেদন করছেন পিএইচডিরা।