পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে হিজাব পরে আসার অনুমতি দেওয়া হয়নি ছাত্রীদের। এই বিষয় নিয়ে সরকারি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির নির্দেশের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে কর্নাটক হাইকোর্টে। হিজাব বিতর্কের জেরে কর্নাটক সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি সাময়িক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল। কর্নাটক হাইকোর্ট হিজাব মামলার শুনানি করছে। প্রধান বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্থি বিচারপতি এস দীক্ষিত এবং বিচারপতি জে এম কাজির বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলছে। গত সপ্তাহে প্রথম শুনানির দিন বেঞ্চ তাদের অন্তর্বর্তী নির্দেশ জারি করে বলেছিল, আদালতের চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত হিজাব সহ কোনও ধর্মীয় পোশাক পরে কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসবে না।
সোমবার এই মামলার শুনানির সময় আবেদনকারীর অন্যতম আইনজীবী দেবদত্ত কামাত সরকারি নির্দেশের (জিও) প্রসঙ্গ তুলে বলেন, কর্নাটক সরকারের জিওতে বলা হয়েছে (১) সংবিধানের ২৫নং ধারায় হিজাব পরার অনুমতি দেওয়া হয়নি (২) হিজাব পরে আসার বিষয়টি বিবেচনা করবে কলেজ ডেভেলপমেন্ট কমিটি বা সিডিসি।
কামাত বলেন, সরকারি নির্দেশের দু’টিই ভুল এবং বেআইনি। প্রথমতঃ ২৫নং ধারার প্রয়োগে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে শুধু রাজ্য সরকার সিডিসি নয়। রাজ্য সরকার শুধুমাত্র নৈতিকতা এবং স্বাস্থ্যের কারণে ২৫নং ধারায় প্রয়োগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আমাদের হিজাব মামলায় এই দু’টি বিষয় অনুপস্থিত। ধরা যাক আমি রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছি কেউ আমাকে হেনস্থা করল, তাহলে কি আইন-শৃঙ্খলার অজুহাতে আমার পক্ষে হাঁটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
এই সময়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, জিওতে কি হিজাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কামাত উত্তরে বলেন হ্যাঁ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরপর কামাত বলেন, কেরল হাইকোর্টের রায়ে প্রবেশিকা পরীক্ষায় হিজাব পরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কারণ এটি একটি ধর্মীয় আচরণ। আদালতের উচিৎ হিজাব ধর্মীয় নির্দেশের অঙ্গ কি না এটা বিচার করা। যদি এটি ধর্মীয় নির্দেশ অনুসারে হয় তাহলে হিজাব পরাকে নিষিদ্ধ করা যায় না বলে জানিয়েছিল কেরল হাইকোর্ট। সেক্ষেত্রে সংবিধানের ২৫(১) ধারা হিজাব পরার পথে অন্তরায় হতে পারে না। কামাত এই সময় পবিত্র কুরআনের ২৪ অনুচ্ছেদের ৩১নং সুরা পাঠ করে আদালতকে শোনান। কামাত বলেন, আমি একজন হিন্দু তাই আমি এগুলিকে বিশ্বাস নাও করতে পারি। কিন্তু যাদের ধর্মে হিজাব পরাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বিষয়টা আমাদের তাদের দৃষ্টিকোণ দিয়ে বুঝতে হবে। এই সময়ে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ছাত্রীরা কি শুরু থেকেই হিজাব পরে কলেজে আসছিলেন। কামাত উত্তর দেন, দু’বছর ধরে ছাত্রীরা হিজাব পরে আসছিলেন। এটাই তো আমাদের আর্জির অন্যতম মূল বিষয়।
ছাত্রীরা অন্যরকমের ইউনিফর্ম পরা নিয়ে দাবি জানাচ্ছেন না। ইউনিফর্র্মের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে তারা হিজাব পরতে রাজি। এমনকি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় হিজাব পরার অনুমতি দিয়েছে। এই সময় কামাত আজমল খান মামলার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, মাদ্রাজ হাইকোর্ট তাদের রায়ে বলেছিলেন, মুসলিম ধর্মীয় বিশেজ্ঞরা একমত যে ইসলাম ধর্মে পর্দা অপরিহার্য না হলেও মাথায় হিজাব পরা অপরিহার্য। মাদ্রাজ হাইকোর্ট তাদের রায় দিতে গিয়ে বহু আন্তর্জাতিক মামলার রায়ের প্রসঙ্গও তুলেছিল।
কামাত বলেন, সরকার বলছে হিজাব পরলে গন্ডগোলের সম্ভাবনা আছে। কারণ অন্য ছাত্ররা তাদের ধর্মীয় পরিচিতি জাহির করার চেষ্টা করবে। এই প্রশ্নের উপর সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছে যে এটা সরকারের দায়িত্ব। আইন-শৃঙ্খলা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা সরকারের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। আইন-শৃঙ্খলার অবনতির ভয়ে ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যায় না। সোমবারের শুনানির শেষে আদালত জানায় যে, এই মামলার ফের শুনানি হবে আগামিকাল মঙ্গলবার।