পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: বিশিষ্ট কবি, প্রাবন্ধিক ও সাহিত্যিক সৈয়দ আসরার আহমদ রুমি ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ও ইন্না ইলাহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। বুধবার সকাল১০ টা ৫ মিনিটে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতের কাজীপাড়ায় নিজের বাড়িতে তিনি ইন্তেকাল করেন। এদিনই রাতে এশার নামাজের পর জানাজা ও কাজীপাড়া কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে । জানা গিয়েছে রবিবার তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বারাসত জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন। বুধবার সকালে ফের অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় তার মৃত্যু হয়। তিনি রেখে গেছেন তিন পুত্র ও এক কন্যাকে। তাঁর মৃত্যুতে পরিবার-পরিজন ছাড়াও শোকাহত অগণিত ভক্ত ও বন্ধুরা। বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠন ও ব্যক্তিত্ব তার মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করেছে বারাসাত উত্তরাচল ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট, বঙ্গীয় সাহিত্য অনুসন্ধান সমিতির তরফেও শোক প্রকাশ করা হয়েছে । বছর তিনেক আগে তার স্ত্রী সৈয়েদা হাসনা হেনা আসরার প্রয়াত হয়েছেন। এদিন প্রাক্তন সাংসদ ও দৈনিক পুবের কলম এর সম্পাদক আহমেদ হাসান ইমরান তার শোকবার্তায় বলেন, সৈয়দ আসরার আহমদ এর ইন্তেকালের খবর শুনে গভীর দুঃখিত হয়েছি। তিনি প্রায় জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লেখালেখিতে সক্রিয় ছিলেন। ছিলেন একজন সজ্জন ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন একজন সাংবাদিক, ইংরেজি থেকে খুব ভালো অনুবাদ করতেন। পয়গাম ও বঙ্গলোক পত্রিকায় কাজ করেছেন। দৈনিক কলম প্রকাশিত হলে সৈয়দ আসরার আহমদ আমাদের সঙ্গে বেশ কিছুদিন কাজ করেছিলেন। আমি আল্লাহর কাছে তার জান্নাত কামনা করছি এবং তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। প্রবীণ বয়সেও ।সোশ্যাল মিডিয়াতেও সৈয়দ আসরার আহমদ এর ছিল স্বতঃস্ফূর্ত ও সজীব পদচারণা । সাহিত্য ও সমাজ ভাবনা নিয়ে একাধিক লেখায় তিনি বন্ধুদের ব্যাপক সাড়া পেতেন। দিন কয়েক আগে ওয়েব ম্যাগাজিনে তার ধারাবাহিক উপন্যাস ‘বহুগামী আমি- ৯৬’ পর্ব প্রকাশিত হয়েছে। কবি আসরার আহমদ এর আধ্যাত্মিক অনুভুতিও ছিল প্রবল। তার মৃত্যুর ১৬ ঘণ্টা আগেও তিনি ফেসবুকে একটি কবিতা পোস্ট করে গেছেন। সাক্ষাৎ মৃত্যুর পরশ মাখা আবেগ নিয়ে লেখায় কবিতাটি সাহিত্যিক ও বন্ধুমহলে যথেষ্ট সাড়া পড়ে যায়। জানা গিয়েছে, ১৯৪৭ সালের বীরভূমের মাড়গ্রামে মাতুলালয়ে আসরার আহমদের জন্ম। মাওলানা আজাদ কলেজ থেকে বাংলা অনার্স পাশ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ ভর্তি হন। কলেজ জীবন থেকে কবিতা লেখা শুরু। ছোট গল্প, উপন্যাস ও বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রবন্ধ, নিবন্ধ লিখেছেন। লিখেছেন বিভিন্ন সাময়িক পত্র পত্রিকাতেও। ওপার বাংলাতেও দৈনিক পত্র পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (মামুন ন্যাশনাল স্কুল) তিনি অধ্যক্ষ পদেও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলা ভাষায় মৌলিক সাংবাদিকতার উপর তার লেখা ‘সাংবাদিকতা’ গ্রন্থটি বিভিন্ন রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের কলেজ পড়ুয়াদের সহায়ক গ্রন্থ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের রোমান্টিকতাকে ‘হর্ষ বিষাদের রোমান্টিক কবি সত্যদ্রষ্টা নজরুল’ গ্রন্থে নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন। পেয়েছেন বিভিন্ন সাহিত্য সংস্থার পক্ষ থেকে পুরস্কার। সাপ্তাহিক নতুন গতি পত্রিকার তরফেও তাকে সংবর্ধনা জ্ঞাপক স্মারক দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, কর্মজীবনের প্রথমে সৈয়দ আসরার আহমদ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন রেজিস্টার অফ কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেন।পরে স্বেচ্ছা অবসর নেন এবং লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৭৫ সালের পর পুরোপুরি সাংবাদিকতা শুরু করেন। কাজ করেছেন পয়গাম, বঙ্গলোক, কলম প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায়। সম্প্রতি তার প্রবন্ধ সংকলন সত্যদ্রষ্টা নজরুল প্রশংসিত হয়েছে।