পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক : হিন্দু ধর্মের অন্যতম শক্তিশালী দেবতা শিব। সৃষ্টি ও ধ্বংসের দেবতা বলেও মানা হয় তাঁকে। এবার দেবতা শিব-এর নামে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ালেন সাধু আনন্দ সাগর স্বামী। ভাইরাল মন্তব্য অনুযায়ী আনন্দ সাগর বলছেন, ‘প্রবোধা স্বামী দেবতা শিবের থেকেও বড়।’ গোটা গুজরাত জুড়ে আনন্দ সাগর স্বামীর এই মন্তব্য নিয়ে বিতর্কে ঝড় উঠেছে। সাধু আনন্দ সাগর স্বামী, প্রবোধা স্বামী গোষ্ঠীর একজন সদস্য।
সম্প্রতি আমেরিকার বোস্টনে প্রবোধা স্বামীর সম্মানে আয়োজিত সৎসঙ্গ সভায় সাধু আনন্দ সাগর স্বামীর, শিব সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তৃতা দেওয়ার অভিযোগে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সৎসঙ্গ সভায়, স্বামী একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। সেই সময় তিনি আনন্দ জেলার বিদ্যানগরের করমসাদে সোখদা সংস্থা দ্বারা পরিচালিত ‘আত্মিয়া ধাম’-এ অধ্যয়নরত একটি ছেলে নিশীথের কথা বলেছিলেন।
সাধু আনন্দ সাগর স্বামী বলেন, প্রবোধা স্বামী নিশীথকে ফটক পর্যন্ত যাওয়ার নির্দেশ দেন। নিশীথ সেখানে গিয়ে ফটকের বাইরে শিবকে অপেক্ষারত অবস্থায় দেখতে পান। নিশীথ প্রভু শিবকে অনুরোধ করে বলে, দয়া করে আমার সঙ্গে ভিতরে এসে প্রবোধা স্বামীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করুন। কিন্তু শিব সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, আমি প্রবোধা স্বামীর প্রবিত্র রূপ প্রত্যক্ষ করতে পারছি। আমার ধার্মিকতা এখনও সেখানে পৌঁছায়নি, যে আমি প্রবোধা স্বামীর সঙ্গে গিয়ে সাক্ষাৎ করতে পারি। এই কথা বলেই শিব, নিশীথের পা ছুঁয়ে প্রণাম করে সেখান থেকে চলে যান। ভগবান শিব সম্পর্কে আনন্দসাগর স্বামীর মন্তব্যের বিষয়ে, সারা গুজরাতের ভিক্ষু ও সাধুদের মধ্যেও তীব্র ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে।
মহামণ্ডলেশ্বর নরেন্দ্র বাপু এই বক্তব্যের নিন্দা করে বলেছেন, ‘আনন্দসাগর স্বামীকে সম্প্রদায় থেকে বহিষ্কার করুন। এই ধরনের বক্তব্য ধর্মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এমন মন্তব্য করা উচিত নয়। আনন্দসাগর স্বামীর অনুগামীদের উচিত এদের মতো মানুষকে বহিষ্কার করা।
ভাদতাল সৎসঙ্গ সভার সভাপতি নৌতম স্বামীও বিতর্কের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন,’আনন্দসাগর স্বামী গুরুর গৌরব বাড়াতে এমন ভাষণ দিয়েছেন। এই ধরনের বক্তব্য স্বামীনারায়ণ সম্প্রদায়কে কলঙ্কিত করে। এমন সাধুকে কখনই বিশ্বাস করা উচিত নয়।’
রাজপুত করনি সেনার রাজ্য সভাপতি জেপি জাদেজা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন,’গুরুদের প্রশংসা করার আগে তাদের ভেবে কথা বলা উচিৎ। সাধুরা কখনই সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে না।’
এদিকে রাজকোটে ব্রাহ্ম সমাজের তরফে বিক্ষোভ হয়েছে। আনন্দ সাগর স্বামীর পোস্টার পুড়িয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। ব্রাহ্ম সমাজে প্রতিনিধিরা শিবভক্তদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য আনন্দ সাগর স্বামীর বিরুদ্ধে রাজকোটের বি ডিভিশন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
বাহ্ম সমাজের সাধারণ সম্পাদক মিলন শুক্লা জানিয়েছেন, আমাদের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছি। আমরা আনন্দসাগরের কড়া শাস্তির দাবি তুলেছি।
মঙ্গলবার আনন্দ সাগর স্বামী অপর একটি ভিডিও বার্তায় তার মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। ভিডিওতে তিনি বলেছেন, যে আমেরিকায় আয়োজিত সৎসঙ্গে একজন একজন যুবকের অনুভূতি তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম। আমার বক্তব্যে কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে আমি দুঃখিত। শিবভক্তদের কাছে আমি ক্ষমা চাইছি’।