পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: বিদ্বেষ মন্তব্য বা হেট স্পিচ নিয়ে আগেই কড়া মন্তব্য করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। আর এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা নিয়ে সতর্ক করল শীর্ষ আদালত। সাফ জানিয়ে দিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করলে তার ফল ভোগ করার জন্যও তৈরি থাকতে হবে। দেখা গিয়েছে, ফেসবুক, ট্যুইটার, হোয়াটস্অ্যাপ তথা সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন মাধ্যমে বিতর্কিত, সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক, বিদ্বেষমূলক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি বিকৃত বা সুপার ইমপোজ করা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার কারণে অনেক ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক অশান্তির ঘটনা নজরে এসেছে। সুপ্রিম কোর্টের এদিনের নির্দেশে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
ঠিক কি বলেছে সুপ্রিম কোর্ট? শীর্ষকোর্ট বলেছে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলে তার প্রভাব সম্পর্কেও সচেতন হতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার যদি কারও কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে তার ফল ভোগার জন্যও তৈরি থাকা উচিত।
সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলার শুনানি চলছিল। মামলাটি ছিল—তামিলনাড়ুর অভিনেতা-বিধায়ক এস ভে শেখরের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় মহিলা সাংবাদিকদের প্রতি কুরুচিকর মন্তব্য সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে।
বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলেন তিনি। সেখানে মহিলা সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে কুরুচিকর মন্তব্য করা হয়েছিল। মামলা চলাকালীন মাদ্রাজ হাই কোর্টের তরফে বলা হয়েছিল, অভিনেতা-বিধায়কের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ বাতিল করা যাবে না। সেই রায়কেই চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন শেখর । শুনানির সময় শেখরের আইনজীবী যুক্তি দেখান, ঘটনার দিন চোখে ওষুধ দিয়েছিলেন তাঁর মক্কেল।
সেজন্যই ওই পোস্টে কী লেখা আছে সেটা না দেখেই শেয়ার করে ফেলেছিলেন। এমনকী মাত্র ২ ঘণ্টার মধ্যে বিতর্কিত পোস্টটি ডিলিটও করে দেন তাঁর মক্কেল। তার দু’দিন পর চিঠি লিখে মহিলা সাংবাদিক ও মিডিয়ার প্রত্যেকের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। মাদ্রাজ হাইকোর্টেও একই যুক্তি পেশ করেছিলেন শেখরের আইনজীবী। হাইকোর্ট সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, এখন দুনিয়ার প্রায় প্রত্যেকে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন। এখানে পোস্ট করার অর্থ ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যাওয়া। তাই সচেতনভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা দরকার। মাদ্রাজ হাই কোর্টের এই মন্তব্যকে সমর্থন করল শীর্ষ আদালতও।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, যদি কেউ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন, তাহলে এই মাধ্যমের প্রভাব সম্পর্কেও তাঁকে বিশেষ সচেতন থাকতে হবে। কতদূর পর্যন্ত এই মাধ্যম ছড়িয়ে যেতে পারে, কী প্রভাব পড়তে পারে সবটাই জানতে হবে ব্যবহারকারীকে। এরপরই সুপ্রিম কোর্ট বলে, ‘যদি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করাটা এতই জরুরি হয়ে থাকে তাহলে তার ফল ভোগার জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে।’