বিশেষ প্রতিবেদকঃ ইদানিং ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে তীব্র বাদানুবাদ চলছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি বলেছেন, ভারতের তরুণ জনশক্তির দিকে তাকিয়ে আছে সারা বিশ্ব। কারণ, উন্নত দেশগুলির বহু রাষ্ট্রই এখন জনসংখ্যা হ্রাসের বিপদের মধ্যে পড়েছে। হল্যান্ড, স্যুইজারল্যান্ড, সুইডেন, জাপান, জার্মানি,সহ বহু দেশেই জনসংখ্যায় হয় শূন্য-বৃদ্ধি কিংবা মাইনাস-গ্রোথ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, জন্মের হার বৃদ্ধি না পেলে এইসব রাষ্ট্রই কিন্ডার গার্ডেনগুলি বন্ধ হয়ে যাবে। বৃদ্ধ জনসংখ্যাই জুড়ে থাকবে দেশে। আর আমদানি করতে হবে শ্রমশক্তি।
সে যাই হোক, ভারতে বিবাদের এক প্রধান কারণ হল একটি গোষ্ঠী প্রচার করে চলেছে দেশে মুসলিম জন্ম সংখ্যা ‘উদ্বেগজনক হারে’ বেড়ে চলেছে। এই জনসংখ্যা হ্রাসের জন্য আইন পাশ করতে হবে।
আর একটি কথা প্রায়ই বলা হয়, ভারতীয় মুসলিমরাই নাকি বহু বিবাহ করেন। আর সেটাই তাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। সমাজ বিজ্ঞানী ও জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞরা বারবার বলেছেন, একজন পুরুষ বহুবিবাহ করলে অন্য পুরুষরা বিবাহ করার জন্য নারী পাবে না। সেক্ষেত্রে বহুবিবাহের জন্য জনসংখ্যা বরং হ্রাস পাবে, বৃদ্ধি পাবে না।
সম্প্রতি ‘ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে’-র পরিসংখ্যান একটি নতুন তথ্য আমাদের সামনে এনেছে। আর তাহল, ভারতে শুধু মুসলিমরাই বহুবিবাহ করেন না, আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হলেও হিন্দু এবং অন্য ধর্মীয় পুরুষরাও প্রায় সমহারে বহুবিবাহ করে থাকেন। ২০১৯-২০২০-এর ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের (এনএফএইচএস) পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে মুসলিমদের মধ্যে ১.৯ শতাংশ বহুবিবাহ রয়েছে। হিন্দুদের মধ্যে রয়েছে ১.৩ শতাংশ, আর দেশের অন্য ধর্মের মধ্যে রয়েছে ১.৬ শতাংশ বহুবিবাহ।
এই সার্ভেতে আরও বলা হয়েছে, সাধারণভাবে বহুবিবাহ সবথেকে বেশি হচ্ছে গরিব, অশিক্ষিত, গ্রামীণ এবং অগ্রসর বয়সের মহিলাদের ক্ষেত্রে। এতে বোঝা যায়, ধর্ম ও এলাকা ছাড়াও আর্থ-সামাজিক ফ্যাক্টরও বহুবিবাহের ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করে। ভারতের মধ্যে মেঘালয়ে বহুবিবাহের হার হচ্ছে ৬.১ শতাংশ, আর ত্রিপুরাতে ২ শতাংশ। বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে তফশিলি উপজাতিদের মধ্যে বহুবিবাহের হার এখন ২.৪ শতাংশ, আর তফশিলি জাতির ক্ষেত্রে বহুবিবাহ হচ্ছে ১.৫ শতাংশ। তবে ছত্তিশগড়, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা ও তামিলনাডুতে মুসলিমদের তুলনায় হিন্দুদের মধ্যে বহুবিবাহ বেশি। এছাড়া খ্রিষ্টানদের মধ্যেও বহুবিবাহের হার হচ্ছে ২.১ শতাংশ। তবে দেখা যাচ্ছে, সমস্ত ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে পূর্বের তুলনায় বহুবিবাহ হ্রাস পেয়েছে।