পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: ‘মুসলমান কা বাচ্চা হ্যায় মারো।’ কোনো গেরুয়া নেতা নন, ক্লাসরুমে নিজের চেয়ারে বসে একথা বলেছিলেন প্রমারি স্কুলের হেডমিস্ট্রেস তৃপ্তা ত্যাগি। তাঁর এই নির্দেশ শুনে ক্লাস ওয়ানের মুসলিম পড়ুয়ার গালে একে একে চড় মারে তার সহপাঠীরা। বন্ধুর কান্না দেখে পড়ুয়ারা কেউ কেউ তার গালে আস্তেচড় মারলে, শিক্ষিকা চিৎকার করে বলেন ‘আস্তে নয়, ওর গালে আরও জোরে মারো। ক্লাসের সব মুসলিম পড়ুয়াদের এইভাবেই শিক্ষা দেওয়া উচিত।’ শিক্ষিকার এমন আচরণের ফুটেজ ভাইরাল হয় সোশ্যাল সাইটে। অল্ট নিউজের সহকারী প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ জুবেইর ভিডিওটি শেয়ার করেন। আর যায় কোথা। তডিঘড়ি জুবেইরের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করল যোগীর পুলিশ। তাদের দাবি, বলা হয়েছিল ওই পড়ুয়ার পরিচয় যেন কেউ সামনে না আনে। কিন্তু জুবেইর তা করেছেন। জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রিয়াঙ্ক কানুনগো আগেই বলেছিলেন, কেউ যেন ওই শিশুর পরিচয় সামনে না আনেন। কিন্তু জুবেইর তা করেছেন।
যদিও জুবেইর বলেছেন, শিশু অধিকার রক্ষা কমশিনের চেয়ারপার্সনের নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গে তিনি সেই ভিডিয়ো ডিলিট করে দেন। তিনি বলেন, আজ ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে যে এফআইআর দায়ের হয়েছে তা সোশ্যাল সাইটে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিয়ো দেখেই। জুবেইর এও বলেন, নির্যাতিত মুসলিম পড়ুয়ার বাবার অনুমতি নিয়ে তবেই এই ভিডিয়ো শেয়ার করেছিলেন তিনি। দেশজুড়ে দাবির পরও ওই শিক্ষাকে গ্রেফতার করেনি যোগীর পুলিশ। তার বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে।
দেশজুড়ে এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা হলেও কোনও তাপ উত্তাপ দেখা যায়নি শিক্ষিকার। এমন ঘটনায় তিনি আদৌও লজ্জিত নন বলে রবিবার জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তবে সোমবার লাগাতার চাপের কারণে তিনি বলেন, ব্যাপারটি ভুল হয়ে গেছে। তবে তিনি একবারের জন্যেও দুঃখ প্রকাশ করেননি। গেরুয়া দলের নেতা-নেত্রী ছাড়া সকলেই এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে।
গেরুয়া বিদ্বেষ বন্ধের কোনো উদ্যোগ ডবল ইঞ্জিন সরকাগুলিতে দেখা যাচ্ছে না। তবে ঘৃণা, বিদ্বেষ ও অত্যাচারের ভিডিও সামনে এলেই তা বন্ধে ব্যাপক তৎপরতা দেখাচ্ছে সেখানকার প্রশাসন। সে কারণে বেশিরভাগ সময় অত্যাচারের বহু দিন পরে সেই জলুমের ভিডিয়ো সামনে আসছে। তারপর হচ্ছে এফআইআর। অনেকের অভিযোগ, ইন্টারনেট বন্ধ করে এবং সোশ্যাল সাইটকে নিয়ন্ত্রণ করে গেরুয়া শাসক দলগুলি জুলুমে পরোক্ষে মদত দিচ্ছে। এমন অভিযোগ করছেন অনেকে। ভরা ক্লাসে এইভাবে নির্যাতিত হওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পরে পড়ুয়াটি। মেডিক্যাল চেক আপের জন্য তাকে বাবা নিয়ে গিয়েছিলেনা মিরাটের একটি হাসপাতলে। আতঙ্কে দুদিন ঠিক করে খেতে পারেনি সে। তবে এখন অবস্থা খানিকটা ভালো বলে জানান ওই পড়ুয়ারা বাবা।