পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: অসমে মুসলিমদের সংখ্যা ২০২১ সালের এক হিসেব অনুযায়ী প্রায় ৪০ শতাংশ। অসমে যদিও নেলি, চাউলখোয়ার মতো কয়েকটি বড় গণহত্যা হয়েছে, কিন্তু অসমের হিন্দু -মুসলিম রাজনৈতিক প্ররোচনা না থাকলে পারস্পরিক সৌহার্দ্যরে মধ্যেই বসবাস করেন।
কিন্তু এই সম্প্রীতির সৌহার্দ্যে ফাটল ধরাতে এখন প্রধান ভূমিকা পালন করছেন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তাঁর একের পর এক সিদ্ধান্ত রাজ্যের মুসলিমদের হতমান, জুলুম-অত্যাচার করার লক্ষ্যে একের পর এক নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
পুলিশের গুলিতে নিহত মুসলিম যুবককের বুকে লাথি এর সামান্য একটি উদাহরণ। এ ছাড়া উচ্ছেদ, মাদ্রাসা বন্ধ এগুলি তো রয়েছেই। এই চলমান ধারায় নবতম সংযোজন হচ্ছে, হিমন্ত সরকারের হুকুম যে, অসমের সমস্ত মাদ্রাসাকে লিখিতভাবে জানাতে হবে, তাদের যে সমস্ত শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মী রয়েছেন, তাদের নাম-ধাম এবং অন্যান্য বিবরণ।
এজন্য অসম পুলিশের ডাইরেক্টর জেনারেল ভাস্কর জ্যোতি মহান্ত একটি সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছেন, আর তা হল ১ ডিসেম্বর, ২০২২। মিস্টার মহান্ত বলেন, তারা কয়েকটি মুসলিম সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছেন। কয়েকজন মাদ্রাসা শিক্ষক এবং মুসলিম ধর্মপ্রচারককে কিছুদিন আগে অসমে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডিজি-র মতে, এরা নাকি জিহাদি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সরকারের কাছে পাক্কা প্রমাণ রয়েছে।
একইসঙ্গে এই মাদ্রাসাগুলি কোথায় অবস্থিত, সেই তথ্য এবং আরও সংশ্লিষ্ট তথ্য জমা দিতে হবে।
অসম পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, মাদ্রাসার সঙ্গে জড়িত সমস্ত শিক্ষক, অশিক্ষক এবং কর্মকর্তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ যাচাই করে দেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া সরকার বলছে, কমপক্ষে ১০০ পড়ুয়া থাকলে তিন কিলোমিটারের মধ্যে অন্য মাদ্রাসা থাকতে পারবে না। তিন কিলোমিটারের মধ্যে সমস্ত মাদ্রাসাকে একত্রিকরণ করে এক জায়গায় নিয়ে আসতে হবে।
অসমের মাদ্রাসাগুলির সঙ্গে আল-কায়দা, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ইত্যাদি জঙ্গি সংগঠনের নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজেই প্রমাণ থাক বা না থাক, গ্রেফতার করতে বাধা নেই। বাধা নেই ইচ্ছেমতো চিহ্নিত করে অনেক শিক্ষার প্রসারের জন্য অনেক কষ্টে গড়া মাদ্রাসাগুলি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রেও।
অসমের এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাদ্রাসাগুলি না থাকলে সেখানে সাক্ষরতার হার অনেক কম হত। দ্বিতীয় যে কথাটি অসমের মুসলিমরা বলছেন তা হল, ভারতের সংবিধান অনুযায়ী সংখ্যালঘুদের স্বাধীনভাবে নিজস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার অধিকার রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
অবশ্যই আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে অন্য কোনও নাগরিকের মতোই আইন অনুসারে পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারে। সেক্ষেত্রে মাদ্রাসার শিক্ষক বা আধিকারিকদের বিরুদ্ধেও আইনগত প্রমাণ-সহ ব্যবস্থা নিতে কারোরই আপত্তি নেই। কিন্তু যেভাবে আদালতকে এড়িয়ে মাদ্রাসা বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে, তার অনুমতি সম্ভবত হিমন্ত কিংবা অন্য কোনও সরকারের নেই। আর যেখানে শিক্ষার প্রসার একটি বড় প্রশ্ন, সেখানে তিন কিলোমিটারের মধ্যে সমস্ত মাদ্রাসাকে একত্রিকরণ করতে হবে, এই ধরনের ফরমান ফ্যাসিবাদী পদ্ধতিরই নামান্তর।
আর একটি কথা উল্লেখযোগ্য, অসমে সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই যেসব সরকারি মাদ্রাসা ছিল, সেগুলিকে অসমের হিমন্ত সরকার অবৈধ বলে বাতিল করে দিয়েছে। কাজেই এবারের আক্রমণ মুসলিমদের নিজস্ব অর্থে পরিচালিত কওমি এবং খারিজি মাদ্রাসাগুলির উপর।
বর্তমানে যে অবস্থা চলছে, এরপর আশঙ্কা করা হচ্ছে, হয়তো খ্রিস্টান এবং বিশেষ একটি ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর শিক্ষালয়গুলিতে থাবা বসাবে রাজ্য সরকার। যদিও তাদের সাংবিধানিক সুরক্ষা রয়েছে।