পুবের কলম প্রতিবেদক: প্রতি বছর শীত জাঁকিয়ে পড়তে না পড়তেই আলিপুর চিড়িয়াখানায় মানুষের ভিড় চোখে পড়ে। পরিবারকে নিয়ে অনেকেই ছুটির দিনে চলে আসেন চিড়িয়াখানার পশুদের সান্নিধ্যে একটা দিন কাটিয়ে নিতে। সাধারণত, ১৫ ডিসেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি, এই দেড় মাসই চিড়িয়াখানায় হালকা মেজাজে সময় কাটাতে পরিবারের সঙ্গে আসেন মানুষ। তবে, এবছর বিষয়টা একটু আলাদা। এবছর ডিসেম্বরের শুরু থেকেই ভাল ভিড় দেখা যাচ্ছে চিড়িয়াখানায়। বিশেষত, চিড়িয়াখানায় বয়স্কদের জন্য দশটি ব্যাটারি চালিত গাড়ি চালু হওয়ার পর সিজনের প্রথম রবিবারই চমকপ্রদ হারে টিকিট বিক্রি হল আলিপুর চিড়িয়াখানায়। পৌষের প্রথম রবিবার চিড়িয়াখানায় বিক্রি হলো প্রায় ৫২ হাজার টিকিট।
চিড়িয়াখানার দর্শকদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে জন্য পরিষেবা-ব্যবস্থায় আমূল বদল আনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল আগেই। তাই, সিজন শুরু হতেই চিড়িয়াখানাকে দেখা গেল একেবারে নতুন রূপে। চিড়িয়াখানা দেখতে আসা অনেকেই কাঁচের দেওয়ালে ঘেরা সাদা বাঘের খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে রীতিমতো অবাক হচ্ছেন। কারণ, এবার কাঁচের দেওয়ালের সামনে ভিড় করে বাঘের রোদ পোহানো দেখার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ঠিক একইরকম ‘স্পেশ্যাল ট্রিটমেন্ট’ করা হচ্ছে জলহস্তীকেও। তার খাঁচাও আর আগের মতো নেই। আফ্রিকার ওই বিশাল চেহারার প্রাণীকে এবার আরও সহজে দেখতে পাবেন দর্শকরা। এছাড়া, যাঁদের চলাফেরায় সমস্যা রয়েছে, তাঁদের হুইলচেয়ারে বসিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্পেশ্যাল র্যা ম্প তৈরি করা হয়েছে। রয়েছে দশটি ব্যাটারিচালিত গাড়ি।
এহেন নতুন রূপে সেজে ওঠা চিড়িয়াখানার প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে ডান দিকে কিছুটা হাঁটার পরই কানে আসবে নানা রকম ম্যাকাওয়ের স্বভাবসিদ্ধ ডাক। দক্ষিণ আমেরিকার বাসিন্দা এই পাখিদের জন্য সেখানে তৈরি হয়েছে নতুন এভিয়ারি। নয়া বাসস্থান তৈরি করে দেওয়া হয়েছে ধনেশ পাখি বা হর্নবিল এবং শকুনদের জন্যও। এই ভোলবদল প্রসঙ্গে আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা শুভঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, “পশুপাখিদের বাসস্থানের বিন্যাস বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে করা হয়েছে। ওরা যাতে ভালো ভাবে থাকতে পারে এবং দর্শকরাও যাতে ভালোভাবে ওদের দেখতে পান, এই দুই বিষয়ই আমরা নিশ্চিত করতে চাই।”
একইসঙ্গে, তিনি জানান, দর্শকদের সুবিধার জন্য এবার চিড়িয়াখানা জুড়ে বসানো হয়েছে ম্যাপ দেওয়া সাইনবোর্ড। বোর্ডেই দেখা যাবে কোনদিকে মেন গেট এবং কোন দিকে গেলে পরবর্তী দ্রষ্টব্য প্রাণীদের খাঁচা দেখতে পাওয়া যাবে। পাশাপাশি, দর্শকদের সুবিধার্থে বসানো হয়েছে বেশ কয়েকটি পানীয় জলের কিয়স্ক এবং তৈরি করা হয়েছে একাধিক শৌচাগার।