বেঙ্গালুরু, ২ মার্চঃ ১ মার্চ ইউক্রেন থেকে কর্ণাটকে বাবার সঙ্গে শেষ কথা। তার পর আর ছেলের ফোন বাজেনি কর্নাটকের শেখারাপ্পার বাড়িতে। দুচোখে স্বপ্ন নিয়ে ভারত থেকে সুদূর ইউক্রেনে পাড়ি দিয়েছিলেন কর্নাটকের ছাত্র নবীন শেখারাপ্পা (২১)। চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন নবীন। ইউক্রেনে রুশ হামলায় মৃত্যু হয়েছে নবীনের।
এই মুহূর্তে ইউক্রেন থেকে ৫৪৬২ কিলোমিটার দূরে বসে ছেলের দেহের অপেক্ষায় এক হতভাগ্য বাবা। সংবাদমাধ্যমের শোকাহত নবীনের বাবা শেখরপ্পা জ্ঞানগৌদ্দারর একটাই প্রশ্ন কবে ফিরে পাব ছেলের দেহ?
নবীনের বাবা সংবাদমাধ্যকে জানান, মঙ্গলবার ছেলে সকালে ফোন করে। ইউক্রেন থেকে তার ঘরে ফেরা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম আমরা। আমি আবার একটু পরেই ছেলের মোবাইলে ফোন করি। তখন নবীন আর ফোন ধরেনি। তার এক বন্ধু ফোন ধরে সব ঘটনা জানায়। তার পর বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে ছেলের মৃত্যুর খবর পাই। ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন নবীনের মা।
নবীনের বাবা জানান, তিনি একটি পেপার মিলে কাজ করেন। বেঙ্গালুরুতে কৃষি নিয়ে ডক্টরেট করছেন নবীনের দাদা। পরিবারের এই অবস্থা সামলাচ্ছে সেই।
শেখরপ্পা জ্ঞানগৌদ্দারর আরও বলেন, দ্বিতীয় পিইউতে ৯৭ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল নবীন। কিন্তু এত ভালো মার্কস থাকা সত্ত্বেও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলির অত্যাধিক ফি-এর জন্য নবীনকে দেশের বাইরে যেতে হয়। সেই সঙ্গে আছে জাতপাতের বৈষম্য। এটাই আক্ষেপ থেকে গেল। এখানে থাকলে হয়তো ছেলেটাকে এভাবে হারাতে হত না।
সংবাদমাধ্যম মারফৎ নবীনের বাবার আবেদন, বেসরকারি কলেজগুলিকে যেন জাতপাতের বৈষম্য থেকে দূরে রাখা হয়।
উল্লেখ্য, নবীনের মৃত্যু নিয়ে এক প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, নবীনের দেহ পুরো ঝলসে যায়। নবীনের এক বন্ধুর দাবি, তার বন্ধুকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল। নবীনের ঝলসানো দেহ নিয়ে চলে গেছে ওরা। আমাদের সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি।
এই ডাক্তারি পড়ুয়ার মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মৃত ছাত্রের বাবার সঙ্গে কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
কর্নাটকের হাভেরি জেলার চালাগেরির বাসিন্দা ছিলেন নবীন। আর এই হাভেরি গ্রামেরই ছেলে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই।
বেঙ্গালুরু থেকে ৩০০ মাইল দূরে নবীনের গ্রাম। একদিন চিকিৎসক হয়ে ছেলে ঘরে ফিরবে এটাই ছিল স্বপ্ন। কিন্তু ইচ্ছে অধরাই থেকে গেল। এই মুহূর্তে খারকিভ প্রায় যুদ্ধের আতুঁরঘরে পরিণত হয়েছে। চলেছে একের পর গোলাবারুদ বর্ষণ। রুশ সেনার আগ্রাসী দৃষ্টির মাশুল দিলেন ভারতীয় পড়ুয়া।
এদিকে ইউক্রেন থেকে এখনও ফিরতে পারেনি নবীনের অপর দুই বন্ধু খারকিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া অমিত ভেঙ্কটেশ বৈশ্য, সুমন শ্রীধর। অমিতের বাবা জানিয়েছেন আগে বাঙ্কার, মেট্রো স্টেশনে অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিল ওরা। এখন সেখান থেকে বের হয় হাতে ভারতের জাতীয় পতাকা নিয়ে অন্যান্যদের সঙ্গে সীমান্তের দিকে হাঁটা শুরু করেছে তারা।
বৈশ্য’র বাবাও আক্ষেপের সুরে জানিয়েছেন, ছেলে খুব ভালো ছাত্র। দাভাঙ্গেরে কলেজে ভর্তি করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এককালীন মোটা ডোনেশন, সঙ্গে কোর্স ফি দিতে বলা হয় সেই সঙ্গে ছিল জাতপাতের বৈষম্য। সেই তুলনায় ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়ার খরচ অনেক কম। ইউক্রেনে ছয় বছরে কোর্স ফি ২২ লাখ। প্রত্যেক বছরে ৩.৫ করে দিতে হয়।