পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: টানা ৬দিন ধরে চলছে লাগাতার চেষ্টা। কিন্তু, এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হল না উত্তর কাশীর সিল্কইয়ারা সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ৪০জন শ্রমিককে। জানা গিয়েছে, দ্রুত খননের জন্য দিল্লি থেকে আনা উচ্চ-ক্ষমতার মার্কিন ড্রিলিং মেশিনটি শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ মিটার পর্যন্ত মাটি খুঁড়তে সক্ষম হয়েছে। ইতিমধ্যে সুড়ঙ্গের মধ্যে ৬মিটার লম্বা ও ৯০০ মিলিমিটার ব্যাসের ৪টি পাইপ ঢোকানো সম্ভব হয়েছে। এখন পঞ্চম পাইপটি প্রবেশ করানোর কাজ চলছে।
মনে করা হচ্ছে, ৫০ মিটার পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারলেই শ্রমিকরা এই পাইপগুলির মধ্য দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারবে। ন্যাশনাল হাইওয়ে অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের ডিরেক্টর অংশু মনীশ খালখো জানান, তাঁরা ব্যাকআপ হিসেবে ইন্দোর থেকে আরও একটি উচ্চ-ক্ষমতার ড্রিলিং মেশিন নিয়ে আসছেন। তাঁর কথায়, ‘আমরা প্রায় ২৪ মিটার ভিতরে ঢুকতে পেরেছি।যা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুড়ঙ্গের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে আরও একটি ড্রিল মেশিন ইন্দোর থেকে বিমানে করে আনা হচ্ছে। শনিবার সকালের মধ্যে তা এখানে পৌঁছে যাবে। এখন যে ড্রিল মেশিনটি কাজ করছে সেটি যদি কোনও কারণে বিকল হয়ে যায় তখন এই দ্বিতীয় মেশিনটি দিয়ে ড্রিল করা হবে।’
ড্রিল মেশিনটির গতিবেগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলে, ‘মেশিনটি ঘণ্টায় ১ মিটার করে ড্রিল করছে। আমরা অতিরিক্ত সতর্কতা নিয়েই এগোচ্ছি। পাইপগুলি ঢোকানোর সময় নজর রাখছি যাতে একটি পাইপের পিছনে আর একটি পাইপ বসানোর সময় এক সেন্টিমিটারও যেন অ্যালায়েনমেন্টে ত্রুটি-বিচ্যুতি না হয়। আমাদের ধারণা ৩৫ মিটার পর্যন্ত খননের পর আশার আলো দেখা যেতে পারে।
পাইপগুলোর দৈর্ঘ্য ৬ মিটার। আমরা ড্রিল মেশিনের মাধ্যমে পাইপগুলিকে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করাচ্ছি। আমরা চাই না পাইপগুলি একটির সঙ্গে অপরটি সেট করতে গিয়ে এক সেন্টিমিটারও বিচ্যুতি হোক। তাই খুব দ্রুত ড্রিল করা হচ্ছে না। তবে নিযুক্ত কর্মীরা সময়ের সাথে সাথে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন তার ভিত্তিতে কাজের গতি বাড়ছে।’ আরও একটি বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘এটা মনে রাখতে হবে যে মেশিনটি ডিজেলে চলে। এটি একটি বদ্ধ জায়গার মধ্যে কাজ করছে। কম্প্রেসার ব্যবহার করে ক্রমাগত বায়ুচলাচল করানো তাই খুবই প্রয়োজন। নিয়ম অনুযায়ী এই ধরনের জায়গায় ডিজেল মেশিন চালানো উচিত নয়। তবে আমাদের হাতে অন্য কোনও বিকল্প নেই। মেশিনের কাজ এবং ক্রমাগত বায়ুচলাচলের কারণে একটি কম্পন তৈরি হয়। সেই কম্পন সুড়ঙ্গের ভিতরে ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে। সেজন্য আমরা একটি নির্দিষ্ট গতিতে এগোতে চাইছি। অহেতুক তাড়াহুড়ো করতে চাই না।’
এদিকে, সুড়ঙ্গে আটকা পড়া ৪০ জন শ্রমিকের মধ্যে যাদের আত্মীয়স্বজন ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছে তারা আটকে থাকা সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের সাথে কথা বলতে পেরেছে। টানেলের ভিতরে একটি পাইপ ঢুকিয়ে তাদের কথা বলার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা দু’জনকে কথা বলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তারা সুড়ঙ্গে আটকে পড়া তাদের শ্রমিক-আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের একজন শত্রুঘ্ন লাল সাংবাদিকদের বলে, ‘আমার ভাগ্নে সুড়ঙ্গে আটকে রয়েছে। আমি তার সাথে কথা বলেছি। সে সুস্থ আছে বলে জানিয়েছে। উত্তরপ্রদেশের লাখিমপুর খেরির এক ব্যক্তি জানায়, তার ছেলে মনজিৎ সুড়ঙ্গে আটকে রয়েছে। আমি ছেলের সাথে কথা বলতে পেরেছি। তার গলা শুনে শান্তি পেয়েছি।’
প্রশাসন সূত্রে খবর, আটকে পড়া কর্মীদের খাবার দেওয়া হয়েছে। তারা ভালো আছে। ড্রিল মেশিনটিও ভালো কাজ করছে। উল্লেখ্য, সুড়ঙ্গটির ২৭০ মিটার ভিতরে এই ধস নামে। সেখানেই আটকে রয়েছে শ্রমিকরা।