নসিবুদ্দিন সরকার, হুগলি: চন্দননগরে সেখ নজরুলকে পিটিয়ে মারার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ফের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হুগলিতে। এবারের ঘটনা জেলার খানাকুল থানার সুলুট গ্রামের। ধানজমিতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে বিবাদের জেরে পিটিয়ে খুন করা হয় এক ব্যক্তিকে। মৃতের নাম শেখ মকবুল রহমান মল্লিক (৫২)। দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে রাস্তায় মৃতদেহ রেখে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখায় গ্রামবাসীরা। ঘটনায় ইতিমধ্যে পুলিশ পার্শ্ববর্তী পাতুল গ্রামের বাসিন্দা গৌর প্রামাণিক ও তার স্ত্রী সবিতা প্রামাণিককে গ্রেফতার করেছে।
নিহত মকবুল মল্লিকের পরিবারের অভিযোগ, দিনদুয়েক আগে ধানজমিতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পাড়ার বাসিন্দাদের মধ্যে বচসা হয়। ওই ঘটনায় মকবুলও ছিলেন। তখনই মকবুলকে অভিযুক্তরা মারধর করার হুমকি দেয়। থানায় দু’পক্ষের উপস্থিতিতে ঘটনার মীমাংসা করে দেওয়া হয়। বুধবার সকালে মকবুল ধান কাটার মেশিন নিয়ে মাঠে গিয়েছিলেন। তখনই কয়েকজন দুষ্কৃতী তাকে জমি থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। তাকে একটি ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে বেধড়ক মারধর করে। খবর পেয়ে মকবুলের পাড়ার লোকজন দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। ততক্ষণে দুষ্কৃতীরা ঘটনাস্থল থেকে চম্পট দেয়। মকবুলের পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা মকবুলকে উদ্ধার করে খানাকুল গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে শেষরক্ষা হয়নি, চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন মকবুলের পরিবারের লোকজন-সহ গ্রামবাসীরা। উত্তেজিত গ্রামবাসীরা মকবুলের মৃতদেহ রাস্তায় রেখে দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে যায় হুগলি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, আরামবাগের এসডিপিও, খানাকুল থানার পুলিশ আধিকারিক-সহ আশপাশের কয়েকটি থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী।
মৃত মকবুল রহমান মল্লিকের ভাইপো মিসবাউল মল্লিকের অভিযোগ, ‘কিছুদিন আগে জমিজমা বিষয়ে পাড়ায় ঝামেলা হয়েছিল। তখন কাকাকে মারধর করা হয়েছিল। শেষমেশ থানায় মিটমাট করা হয়েছিল।’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘বুধবার সকালে কাকা ধান কাটার মেশিন নিয়ে মাঠে গিয়েছিলেন। আচমকা সেখানে প্রতিবেশী গৌর প্রামাণিক, সনৎ প্রামাণিক, অশোক প্রামাণিক সহ প্রায় ১২-১৩ জন দুষ্কৃতী কাকাকে মাঠ থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। তাকে একটি ঘরের ভেতর বন্দি করে লোহার রড, কাটারি, ছুরি দিয়ে আক্রমণ করে এবং তাতেই মারা যান।’ মিসবাউলের পাড়া-প্রতিবেশীরা অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে ফুঁসেছ।
গত মঙ্গলবার সকালে জেলার চন্দননগরে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয় সেখ নজরুল নামে এক ব্যক্তিকে। তার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। যা ভাবিয়ে তুলেছে পুলিশ-প্রশাসন থেকে হুগলির আম জনতাকে। প্রশ্ন উঠছে মানুষ কি বড্ড অসহায়ংশ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে?