অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস নজরুল ইসলাম ইদানীং সবসময় কোতল হয়ে যাবেন বলে দুঃস্বপ্ন দেখছেন। তাঁর মতে, মুখ খুললেই তাঁর কোতল হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। তা কোতলটা করবে কে? কে আবার, ওই জঙ্গি মুসলমানরাই তো তলোয়ার শানিয়ে বসে আছে। কিন্তু তবুও তসলিমার মতোই তিনিও মুখ বন্ধ রাখতে পারছেন না। সম্প্রতি সহজিয়া নামের একটি সংকলনে তিনি বলেছেন, কুরআন হচ্ছে হযরত মুহাম্মদের বাণী– আল্লাহর নয়। মুহাম্মদ সা.-র হাজার হাজার ছবি নাকি বর্তমান। তাঁর আরও বক্তব্য– আল্লাহ সর্বজ্ঞ নন। সর্বজ্ঞ হলে তিনি নরওয়ে- নেদারল্যান্ড বা আইসল্যান্ডের মুসলিমদের রোযা রাখার কথা বলতেন না। কারণ সেখানে রাত-দিন অনেক দীর্ঘ। নজরুলের এই নিবন্ধে তাঁর মানসিকতা ও আবোল-তাবোলের সারবত্তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বিশেষ প্রতিবেদকঃ একে তো প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিক নজরুল ইসলাম সহ্য করতে পারেন না কুরআন– ইসলাম– হযরত মুহাম্মদ সা. ও শরীয়তকে। আর এসবের ধারও ধরেন না। কিন্তু নিজেকে মনে করেন যে, সমস্ত ইসলামি বিষয়ে তিনি একজন বিশেষজ্ঞ। তবে যাঁরা উপরোক্ত বিষয়গুলিতে জ্ঞান রাখেন, তাঁদের বক্তব্য– নজরুল ইসলাম একজন বিশেষ অজ্ঞ-ই বটে।
‘সহজিয়া’ নামে একটি সাহিত্য সংকলন বাবু নজরুল ইসলামের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে প্রশ্ন করে বসে–’আজকের দিনে ধর্মীয় বিধান কতটা বাস্তবসম্মত’ একে তো মা মনসা– তার উপর ধুনোর গন্ধ! আর যায় কোথায়! নজরুল ইসলাম আল্লাহর ও ইসলামি বিধান সম্পর্কে খুল্লমখোলা তাঁর আহরিত জ্ঞান বিতরণ শুরু করে দিলেন। কিন্তু বিষয়টি তো বিরাট। বিজ্ঞ নজরুলবাবু হয়তো ভেবেই পাচ্ছিলেন না– কোথা থেকে শুরু করবেন!
‘আজকের দিনে ধর্মীয় বিধান কতটা বাস্তবসম্মত’ তার সরাসরি উত্তর না দিয়ে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে যা বললেন তা হল– ‘কোরআনে যা লেখা আছে তা হযরত মুহাম্মদ এর কথা– আল্লাহর কথা নয়-এ কথা বললে আপনাকে মারতে আসবে। হযরত মুহাম্মদ বেশি লেখাপড়া জানতেন না। ওনার জন্মস্থান মক্কা। কলকাতার মতো দিন এগারো থেকে সাড়ে চোদ্দ ঘণ্টার বেশি হয় না। যে কেউ রোযা রাখতে পারেন। লন্ডনে দিন উনিশ ঘণ্টা। আইসল্যান্ডের রাজধানীতে বাইশ ঘণ্টা আবার নরওয়ের ট্রমসো শহরে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত দিন হয়। আসলে নরওয়ের উত্তর দিকে ট্রমসোতে আগে মুসলমান ছিল না, এখন আছে। আল্লাহর কি এটা জানতেন না– যেখানে বছরে ছ-মাস দিন– ছ-মাস রাত হয়। যেখানে সূর্য ডোবে না বা ওঠে না। আল্লাহর সম্বন্ধে মুসলমানদের যা ধারণা, তাতে আল্লাহর সর্বজ্ঞ। কাজেই যেখানে সূর্য ওঠেই না– সেখানে সূর্যোদয়ের আগে থেকে সূর্যাস্তের পরে পর্যন্ত রোযা রাখার কথা তিনি বলতে পারেন না।’
সহজিয়ার প্রগতিশীল সম্পাদক মহাশয় রফিকুল ইসলামের এই লোডেড প্রশ্নের উত্তরে নজরুল ইসলাম যা বলেছেন– তা উপরে উদ্ধৃত করা হয়েছে।
সম্পাদক রফিকুল ইসলাম এবং উত্তরদাতা নজরুল ইসলাম দু’জনেই জানতেন এই প্রশ্নের উত্তরে ঠিক কী বলতে হয়। কারণ, প্রশ্নের মধ্যে কোনও বিশেষ ধর্মের উল্লেখ ছিল না। কিন্তু তা বললে কি হবে! আসল নিশানা তো সেই ইসলাম ধর্ম। তার নবী হযরত মুহাম্মদ সা.। পবিত্র কুরআন আর শারিয়াহ। তাই নজরুল বললেন– ‘কুরআনে যা লেখা আছে তা হযরত মুহাম্মদ এর কথা– আল্লাহর কথা নয়-এ কথা বললে আপনাকে মারতে আসবে।’ অর্থাৎ ইসলাম বিশেষ-অজ্ঞ নজরুল ধর্মের বিধান মানা যায় কি না, এর উত্তরে যা বললেন তা হচ্ছে– কুরআন আল্লাহর বাণী নয়– মুহাম্মদের সা.-এর কথা। তারপর তাঁর বক্তব্য– ‘হযরত মুহাম্মদ বেশি লেখাপড়া জানতেন না।’
তাহলে প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ আধিকারিক নজরুল ইসলাম কি সমাধান দিলেন, তিনি বলে দিলেন– পবিত্র কুরআন মহান আল্লাহর কথা নয়। তাহলে কার কথা? নজরুলবাবুর মতে– তা হচ্ছে হযরত মুহাম্মদের কথা। আর তারপরই নজরুল ঘোষণা করে দিলেন, ‘হযরত মুহাম্মদ বেশি লেখাপড়া জানতেন না।’
নজরুলবাবু স্পষ্ট ভাষায় যা বললেন– তার অর্থ হচ্ছে– মুসলমানরা পবিত্র কুরআন মেনে চলে। আর কিয়ামত পর্যন্ত তা বাস্তবসম্মত ও বহমানবিধি হিসেবে মুসলমানরা মনে করে। এ সম্পর্কে নজরুলের বক্তব্য হল, আরে এসব বিধান যে দিয়েছে সে তো মুহাম্মদ। যিনি নিজের কথা ‘ঈশ্বরের বাণী কুরআন’ বলে চালিয়ে দিয়েছেন। এ কথা গভীর গবেষণা করে যে ক’জন বুঝতে পেরেছেন– তার মধ্যে একজন হচ্ছে পুলিশ আধিকারিক নজরুল ইসলাম। দ্বিতীয় যে কথাটি নজরুল ইসলাম প্রচার করছেন– তা হল কুরআনের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ কি আর শেখাবেন! কারণ– তিনি তো লেখাপড়া খুব বেশি জানতেনই না! তাহলে তাঁর কথা কেন মেনে চলতে হবে!
দারুণ পয়েন্ট! যুক্তির কুস্তিগীর পুলিশ অফিসার নজরুল ইসলামের।
যাদের ইসলাম ও হযরত মুহাম্মদ সা. সম্পর্কে যৎসামান্য পড়াশোনা রয়েছে– তাঁরা জানেন হযরত মুহাম্মদ সা. ‘উম্মি’ ছিলেন। অর্থাৎ তিনি নিরক্ষর বা বর্ণজ্ঞানহীন ছিলেন। কুরআন ও হাদিসে এই কথা স্পষ্টভাবে উল্লিখিত হয়েছে।
কিন্তু যিনি ‘উম্মি’ বা অক্ষরজ্ঞানহীন তাঁর সম্পর্কে বলতে গিয়ে নজরুল কেন বললেন– তিনি বেশি লেখাপড়া জানতেন না? যেখানে কুরআন– হাদিস পরিষ্কারভাবে বলছে– হযরত মুহাম্মদ সা. ছিলেন উম্মি বা নিরক্ষর– সেখানে হঠাৎ করে নজরুলবাবু বদান্যতা দেখিয়ে কেন বললেন– হযরত মুহাম্মদ বেশি লেখাপড়া জানতেন না! কারণটি পরে বলা হচ্ছে। আসলে নজরুল ভয় পাচ্ছিলেন– যদি তিনি বলেন হযরত মুহাম্মদ একেবারেই নিরক্ষর ছিলেন– লেখাপড়া জানতেনই না– তাহলে প্রশ্ন উঠবে– কুরআনে সেক্ষেত্রে জ্ঞান– বিজ্ঞান– ইতিহাস– ভূগোল মহাকাশ প্রভৃতি বিষয়ে কিভাবে এত নিখুঁতভাবে উঠে এল? যেমন কুরআনে সূর্য ও চন্দ্রের কক্ষপথ নিয়ে আলোচনা রয়েছে।
আধুনিক বিজ্ঞান মাত্র কয়েকশো বছর আগে জেনেছে মহাকাশে এই পৃথিবী একা নয়। রয়েছে আরও অনেক ‘পৃথিবী’। কুরআনের প্রথম সূরা– ফাতিহা-র কথাই ধরা যাক। আল্লাহর প্রেরিত গ্রন্থ কুরআনের প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে– ‘আল্লাহ সমস্ত প্রশংসা– যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক।’ লক্ষণীয় পবিত্র কুরআনে এ কথা বলা হয়নি যে, তিনি জগতের প্রতিপালক। বলা হয়েছে জগৎসমূহের প্রতিপালক। নজরুলবাবুর বাণী অনুযায়ী যদি ধরেই নেওয়া যায় কুরআন মুহাম্মদের কথা– আল্লাহর কথা নয়– সেক্ষেত্রে নজরুলবাবুকে স্বীকার করতে হবে, প্রায় দেড় হাজার বছর আগে হযরত মুহাম্মদ জানতেন যে– মহাকাশে পৃথিবী একা নয়। আছে পৃথিবীর মতো আরও অনেক গ্রহ। পবিত্র কুরআনে আছে সূর্য ও চন্দ্রের কক্ষপথ ও নিজ নিজ কক্ষপথে নির্দিষ্ট গতিতে ঘোরার কথা। রয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক তথ্য। রয়েছে ইতিহাসের উল্লেখ এবং আরও কত কী।
তাই নজরুলবাবু হয়তো চিন্তা করলেন– বলে তো দিলাম– কুরআন আল্লাহর কথা নয়– হযরত মুহাম্মদের বানানো কথা। কিন্তু লোকে তো প্রশ্ন করবে যে– একজন উম্মি বা অক্ষরজ্ঞানহীন ব্যক্তি কীভাবে এত সব বিষয় জানল! সেফ গেম খেলার জন্য এককালের দুঁদে পুলিশ আধিকারিক নজরুলবাবু মুহাম্মদ সা.-কে একেবারে অক্ষরজ্ঞানহীন উম্মি না বলে বললেন– মুহাম্মদ সা. বেশি লেখাপড়া করেননি। অর্থাৎ কিছুটা জানতেন। আর তাই তিনি নানা বিষয় সম্বন্ধে কুরআনে বলতে পেরেছেন।
নজরুলবাবুর পক্ষে কুরআন আল্লাহর বাণী নয়– এ কথা বলার কি যুক্তি রয়েছে? নজরুলবাবুর একটাই যুক্তি– ‘ম্যায় সব জানতা হুঁ’। আসলে ঐশী বাণী বা ঐশী বিষয়ে নজরুলবাবু সম্পূর্ণ জ্ঞানগম্মিহীন উম্মি। তাই নির্দ্বিধায় তিনি কুরআনকে মুহাম্মদের বাণী এবং সেই সূত্র ধরে হয়তো বাইবেল ও তোরাও আল্লাহ্ থেকে বিযুক্ত করে ফেলেছেন। আসলে ঐশী গ্রন্থ– ঐশী জ্ঞান বা ওহী বলে কিছু আছে– তা নজরুলবাবু বিশ্বাস করেন না। কাজেই বিশেষজ্ঞ নজরুলবাবু যে এই ধরনের কথা বলবেন তাতে আশ্চর্যের কি আছে? নজরুলবাবু প্রথম থেকে ইসলাম সম্পর্কে নানা কুযুক্তি প্রদান করে মিথ্যা বলে আসছেন।
এরপর ধর্মীয় বিশ্বাস (এখানে ইসলাম) সম্পর্কে বলতে গিয়ে নজরুল ইসলাম টেনে এনেছেন রোযার কথা। তাঁর বক্তব্য– রোজা রাখার বিধান তো আল্লাহ্ দিয়েছেন (নজরুলবাবু বলেছেন– আল্লাহর কি এটা জানতেন না– যেখানে বছরে ছ-মাস দিন– ছ-মাস রাত হয়। যেখানে সূর্য ডোবে না বা ওঠে না। আল্লাহ্ সম্বন্ধে মুসলমানদের যা ধারণা তাতে আল্লাহ সর্বজ্ঞ। কাজেই যেখানে সূর্য ওঠেই না– সেখানে সূর্যোদয়ের আগে থেকে সূর্যাস্তের পরে পর্যন্ত রোযা রাখার কথা তিনি বলতে পারেন না)। সত্যি মাথা ঘামিয়ে নজরুলবাবু একটি মোক্ষম যুক্তি আবিষ্কার করেছেন বটে! এখানে কিন্তু তিনি হযরত মুহাম্মদ সা.-কে টানছেন না– তিনি এবার পড়েছেন পবিত্র সত্তা আল্লাহ্কে নিয়ে। তবে তাঁর বক্তব্যের খানিক আগেই নজরুল বলেছেন– কুরআন মুহাম্মদের লেখা। কিন্তু রোযা নিয়ে তাঁর বক্তব্য– আল্লাহর কুরআনে রোযার বিধান দিয়েছেন। কিন্তু সর্বজ্ঞ হয়েও সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সূর্য ওঠা ও অস্ত যাওয়ার হিসাবটি আল্লাহর রাখতে পারেননি। কিন্তু নজরুলবাবুর তো ধরা উচিত ছিল– হযরত মুহাম্মদ সা.-কে। কারণ– নজরুলবাবুর ভাষায় কুরআন আল্লাহ্র বাণী। হঠাৎ তিনি কুরআনে রোযার নির্দেশ নিয়ে আল্লাহ্র সমালোচনা (নাওজুবিল্লাহ) শুরু করলেন কেন? যাই হোক তিনি বলছেন– আল্লাহ্র জানা ছিল না– নরওয়ে– নেদারল্যান্ড বা আইসল্যান্ডে দিন-রাত অনেক বড়। তাহলে এখানে যে মুসলমানরা থাকবে– তারা কী করে রোযা রাখবে? কাজেই কুরআনের সমস্ত বিধান মানা যাবে না। সম্ভবত এটাই নজরুলবাবুর প্রতিপাদ্য বিষয়। তবে একথা ঠিক– কোনও বিষয়ে কেউ সর্বজ্ঞ নয় একমাত্র আল্লাহ ছাড়া। যেমন অনেকে বহু আশা করে বিয়ে করেন– কিছুদিন পরে যদি দেখা যায় নির্দয় প্রহারের ধাক্কায় তাঁর স্ত্রী পালিয়ে গেছে– তাহলে বেচারার তো কোনও দোষ নেই। সে তো বহু আশা করে বিয়ে করেছিল। কিন্তু স্ত্রী যে পালিয়ে যাবে– তা সে কী করে জানবে? কাজেই সব কিছু সবার জ্ঞানে থাকে না। কিন্তু সর্বশক্তিমান আল্লাহর জ্ঞানে সব কিছুই রয়েছে। দুঃখ হচ্ছে– নজরুলবাবু বহু কিছু জানেন– আর বহু কিছু জানেনও না। যেমন— নেদারল্যান্ড– নরওয়ে এইসব স্থানে যে মুসলমানরা হিজরত করে গেছেন– নাগরিকত্ব নিয়েছেন– বা যাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছেন তাঁদের আলেম ও মুফতিরা এই সমস্যার সমাধান বহু আগেই করে ফেলেছেন। তাঁরা স্থির করে নিয়েছেন– যেখানে ২৩-২৪ ঘণ্টা রাত বা ছয় মাস দিন বা রাত্রি– যেখানে সূর্য অস্ত যায় না সেইসব স্থানেও পবিত্র রমযান মাসে রোযা পালন করতে হবে। রোযারক্ষেত্রে সক্ষম মুসলমানদের জন্য কোনও ছাড় নেই। তারা মক্কা সহ পৃথিবীর বহু মুফতি এবং উলামার সঙ্গে পরামর্শ করে স্থির করে নিয়েছেন যে– এইসব স্থানে রোযা রাখতে হবে পবিত্র মক্কার সময় অনুযায়ী। অর্থাৎ পবিত্র মক্কায় যে সময় ধরে রোযা রাখা হয় সেই সময় ধরে তারা রোযা রাখা শুরু করবেন এবং পবিত্র মক্কায় যখন উপবাস ভঙ্গ করে রোযা ভাঙা হয় ঠিক সেই সময় তাঁরা রোযা ভাঙবেন। তাঁদের ছয় মাস বা ২৩-২৪ ঘণ্টা রোযা রাখার প্রয়োজন নেই।
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন– তিনি মানুষের জন্য কাঠিন্য পছন্দ করেন না। যেখানে ছয় মাস দিন ও ছয় মাস রাত্রি সেখানেও এই বিধান প্রযোজ্য। যখন রমযান মাস আসবে– তখন উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী ৩০ দিন উপবাস পালন করা হবে ওইসব দেশে। আল্লাহতায়লা নিশ্চয়ই তা কবুল করবেন। তিনি প্রত্যেকের নিয়ত বা অভিপ্রায় দেখেন। কিন্তু কে জানে– নজরুলবাবু নরওয়ে– নেদারল্যান্ড বা আইসল্যান্ডে গেলে হয়তো পরীক্ষামূলকভাবে পাক্কা ছয় মাসের জন্যই রোযা পালন করতেন! সেক্ষেত্রে তিনি যে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তেন– তার দায় কিন্তু ওইসব দেশের মুসলমানরা কখনই নেবে না। তবে ছয় মাস রোযা পালন করেও নজরুলবাবু যদি বেঁচে থাকতে সক্ষম হন– তাহলে কিন্তু তিনি আর এক নজরুলকে উদ্ধৃত করে সগর্বে বলতে পারতেন— ‘বল বীর– বল উন্নত মম শির’। কিন্তু এখন থেকে বলা যায়– পুলিশ আধিকারিক নজরুল ইসলাম এমন ঝুঁকি নেবেন না।
এরপর মিষ্টি মিষ্টি করে সহজিয়া-র সম্পাদক রফিকুল ইসলাম নজরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসা করলেন সত্যিই কি হযরত মুহাম্মদের কোনও ছবি নেই?
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠতে পারে– এত বিষয় থাকতে রফিকুল সাহেব হযরত মুহাম্মদের ছবি নিয়ে পড়লেন কেন? তর্কের খাতিরে ধরা যাক– হযরত মুহাম্মদ সা.-র ছবি আছে। তাহলে নজরুল ও রফিকুলবাবুর কি লাভ হত? ওই ছবি দেখে তাঁরা কি খুব আনন্দ পেতেন? ছবি না থাকায় নজরুলবাবুর কি কি ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করেন? সাক্ষাৎকারে নজরুল বলেন– ‘ওনার প্রচুর ছবি আছে। দু-তিনশো বছর আগে থেকে এটা নিষিদ্ধ হয়েছে। তখন তো ক্যামেরা ছিল না– মুসলমানদের হাতে আঁকা কয়েক হাজার ছবি পাবেন। এটা অনেকেই জানে না। বললে আবার কোতল হয়ে যাওয়ার ভয়। মুসলিম মৌলবাদের বিরুদ্ধে বললে অফিসে– বাজারে যেতে পারবেন না। তবে সংখ্যাটা যদি বাড়ে– পাশে যদি লোক পাওয়া যায় তাহলে কিন্তু বলা উচিত। আর একটা কারণ হল– মেইনস্ট্রিমের মিডিয়াগুলো– যারা উলটো-পালটা কথা বলে তাদের কথা ছাপবে– ইন্টারভিউ করে। কিন্তু যারা যুক্তি-তর্ক দিয়ে কথা বলবে– মুসলমানদের মধ্যে যারা লেখাপড়া জানা লোক আছে– তাদের প্রতি ততটা আগ্রহ দেখায় না। কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল চাইলে অনুপযুক্ত লোককেও মিডিয়া অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়।’
নজরুলবাবু তাঁর গবেষণালব্ধ বা ঈশ্বর প্রদত্ত জ্ঞান থেকে জানিয়ে দিলেন– মাত্র দু-তিনশো বছর আগে মুহাম্মদের ছবি বা প্রতিকৃতি আঁকা নিষিদ্ধ হয়েছে। নইলে মুসলমানদের হাতে আঁকা কয়েক হাজার ছবি পাওয়া যাবে। দুঃখ করে নজরুলবাবু বলেন– ‘অনেকেই এটা জানেন না। বললে আবার কোতল হয়ে যাওয়ার ভয়।’
নজরুলবাবু জানান– মুসলমানদের হাতে আঁকা কয়েক হাজার ছবি পাওয়া যাবে। কিন্তু তিনি স্পষ্ট করে বলতে পারেননি কত হাজার। এক হাজার না কি পঁচিশ হাজার? সে না হয় পরে নজরুলবাবু গোনাগুনতি করে বলে দেবেন। কিন্তু কোথায় এই ছবিগুলি পাওয়া যাবে– কোথায় এগুলি রক্ষিত আছে– তাও নজরুলবাবু জানানোর প্রয়োজন বোধ করেননি। কিন্তু তা সত্ত্বেও সমানে বলে যাচ্ছেন– বললেই মুসলমানরা তাঁকে কোতল করে ফেলবে।
দুনিয়া এখন অনেক উন্নত হয়েছে। খামোখা মুসলমানরা তলোয়ার দিয়ে নজরুলবাবুকে কেন কোতল করবেন? তারা গাদাবন্দুক বা পিস্তল ব্যবহার করে কোতল না করে গুলি করে হত্যাও তো করতে পারে! এই যে তালিবানরা ২০ বছরের মধ্যেই পরাশক্তি আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান দেশগুলিকে পরাজিত করে ভাগিয়ে দিল, তাতে নজরুলবাবুর প্রিয় অস্ত্র তলোয়ার খুব বেশি ব্যবহৃত হয়নি। রকেট– একে-৫৭– ছোট কামান– ক্ষেপণাস্ত্র এগুলিই ব্যবহৃত হয়েছে বলে শোনা গেছে। নজরুলবাবু অবশ্য একবার-দু’বার মার খেয়েছেন। তবে জঙ্গি মৌলবাদী মুসলমানরা তাঁকে মারেনি। তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন নাকি আধুনিক রাজনৈতিক দল তৃণমূলের হাতেই। জঙ্গিদের হাতে আক্রান্ত হলে তিনি বুক ফুলিয়ে– গর্ব করে কথাটা হয়তো বলতে পারতেন। তবে যা যার ভাগ্য। একটা কথা নিশ্চিত– নজরুলবাবু কোতল হওয়াকে খুব ভয় করেন। তাইতো তিনি অনেক কথাই মুখে বলতে পারেন না– পেটে জমিয়ে রাখেন। আসলে যারা একটু হাদিস চর্চা করেছেন– তাঁরা জানেন হযরত মুহাম্মদ সা. অনুসারীদের বারবার বলেছেন– ‘তোমরা আমার ছবি বা মূর্তি বানাবে না।’
শুধু মুহাম্মদ সা.-রই নয়– জীবন্ত কোনও কিছুর ছবি– পেন্টিং বা মূর্তির প্রতিষ্ঠা ইসলাম নিষিদ্ধ। মুহাম্মদ সা. আরও বলেছেন– আমার কবরকেও তোমরা উপাসনার স্থান বানাবে না। কারণ– উপাসানার বা ইবাদতের একমাত্র হকদার হচ্ছেন আল্লাহ্। যিনি এক ও অদ্বিতীয়। মানুষের মধ্যে একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়– তারা কবর স্থান– পাহাড়– গাছ– প্রতিকৃতি এগুলির পুজো করতে প্রলোব্ধ হয়। শয়তান তাদেরকে এক আল্লাহর উপসনা না করে পেন্টিং বা মূর্তির পুজো করতে প্ররোচিত করে। হযরত মুহাম্মদ সা. এটা জানতেন বলে তাঁর শিষ্যদের চিত্র বা মূর্তি তৈরি করতে নিষিদ্ধ করেছেন। ইসলামে আল্লাহ ছাড়া মূর্তি পুজো কিংবা অন্য কোনও কিছুর তা সে মানুষ হোক বা প্রকৃতির আরাধনা করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। অন্য সাধারণ লোকেরা চায় মৃতু্যর পর তার মূর্তি বানিয়ে বা আঁকা প্রতিকৃতিকে লোকে যেন সম্মান করে– শ্রদ্ধা জানায়। হযরত মুহাম্মদ সা. এবং শরীয়াহ এই ধরনের উপাসনাকে নিষিদ্ধ করেছেন। দেখা গেছে– আর্টের নামে শুরু করা হলেও এগুলি এক সময় ইবাদতের বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। তাই ইসলামে প্রফেট তো বটেই– মানুষের ছবি আঁকাও নিষিদ্ধ। কিন্তু এই যুক্তিকে নজরুলবাবু মানতে রাজি নন। তাঁর মতে– মুসলমানরা পয়গম্বরের হাজার হাজার ছবি এঁকেছেন। মুসলিম বা অমুসলিম কেউ যে কোনওদিন হযরত মুহাম্মদের ছবি আঁকার প্রয়াস করেননি– তা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। কিন্তু মুসলিম দুনিয়ায় তা কখনই প্রাধান্য পায়নি– বা চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়নি।
প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়– হযরত মুহাম্মদের ছবি পেলে কি নজরুল ইসলাম গ্রহণ করবেন? ইসলামকে মান্যতা দেবেন? না তা কখনোই নয়। নজরুলবাবু ঘোর নাস্তিক– তা তাঁর লেখা বইপত্র পড়লেই বোঝা যায়। সম্ভবত তিনি নিজের জীবন থেকে মুসলিম নাম-গন্ধ মুছে ফেলতে চান। একবার তিনি রীতিমতো এফিডেভিট করে নিজের মুসলিম নামটাও ত্যাগ করেছিলেন। নাম নিয়েছিলেন বকুল। বেশ কিছুদিন পর আবার তিনি সনামে নজরুল হিসেবে অবির্ভূত হন। কেন কে জানে?
আরও খবর পড়ুনঃ
- পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরবে ১৪ হাজীর মৃত্যু, নিখোঁজ ১৭ জন
- কোটায় ফের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার্থীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার
- সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে পুনরায় নিট পরীক্ষা, জানালেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান
- আটকে পড়া পর্যটকদের সাহায্য করতে সিকিমে হেল্পডেস্ক চালু নবান্নের, দেওয়া হল হেল্পলাইন নম্বর
- অস্ত্রোপচার শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন অভিষেক