পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: নাজনীন ইয়াসমিন। অসমের নগাঁও জেলার প্রান্তিক এলাকা মাহেরপাড় গ্রামের বাসিন্দা। ইসলাম ধর্মাবলম্বী অতি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের বাসিন্দা নাজনীন ইয়াসমিন। সেই ছোটবেলা থেকেই কল্পনা চাওলার মতো আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখতেন। করোনা অতিমারি পর্বে গোটা পৃথিবী যখন কার্যত দিশেহারা, তখন ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা ইসরো’তে বিজ্ঞানী হিসেবে যোগদান দিয়েছিলেন নাজনীন। তবে সেখানেই খান্ত হননি তিনি। ইচ্ছে ছিল নাসা’তে যোগ দেওয়ার। এবার সেই পথেই পা বাড়িয়েছেন নাজনীন।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ‘ইসরো’-র অধীনে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারের বিজ্ঞানী নাজনীন ইয়াসমিনও চন্দ্রযান-৩-এর উৎক্ষেপণ ও সফল অবতরণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণের ছয় মাস আগে, নাজনীন প্রথম সন্তানের জন্ম দেন। সংশ্লিষ্ট সময়ে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকলেও দেশের স্বার্থে তাঁর ছুটি বাতিল করে তিনি জোর কদমে কাজ করেছেন। নাজনীনের পরিবার সূত্রে খবর, তথাকথিত কোনও ইংলিশ মিডিয়াম নয়, নগাঁও জেলার জুরিয়ায় নূরউদ্দিন ফুরকানিয়া জেবি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন তিনি।
পরে ২০০৭ সালে, কাদামনি টাউন হাই স্কুল থেকে তার ম্যাট্রিকুলেশন বা দশম শ্রেণীর ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। বিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য ২০১৩ সালে গুয়াহাটির মির্জা কলেজ থেকে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে বি-টেক এবং ২০১৬ সালে তেজপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রনিক ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজিতে এম-টেক ডিগ্রী অর্জন করেন। সেখান থেকেই বিভিন্ন বেসরকারি বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে শুরু করেন। ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-এর নেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে গবেষণা শুরু করেন।
নাজনীন ইসরোতে গবেষণা ও নিয়োগের জন্য আসাম কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পরিচালিত জাতীয় স্তরের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি এই পরীক্ষায় বিশিষ্টতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। এছাড়াও বেশ কয়েক পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ হন। নাজনীন ইয়াসমিন উত্তর-পূর্বের একমাত্র মুসলিম নারী বিজ্ঞানী, যিনি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় (ইসরো) নিযুক্ত হয়েছেন। শিক্ষক দম্পতি আবুল কালাম আজাদ ও মঞ্জিলা বেগমের মেয়ে নাজনীন দ্য ভয়েসকে বলেন, “ধৈর্য ও একাগ্রতা থাকলে সব ক্ষেত্রেই সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করা যায়।
সাফল্য অর্জনে কোনো চ্যালেঞ্জই বাধা হতে পারে না।” নাজনীন ইয়াসমিন শৈশব থেকেই একজন বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি ভারতের মিসাইল ম্যান তথা ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডঃ এপিজে আব্দুল কালাম এবং ভারতের প্রথম মহিলা মহাকাশচারী কল্পনা চাওলার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন বলেও জানান। নাজনীন তার কর্মজীবনের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সামকে উন্নীত করার জন্য কিছু করতে আগ্রহী। তিনি ভবিষ্যতে ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) এর জন্য কাজ করার পরিকল্পনা করছেন।