পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: বর্তমানে সময়ে সংকট মুহূর্তে যেখানে চারিদিকে বাড়ছে ভুয়ো চিকিৎসক, আইপিস, ভুয়ো কল সেন্টার, সেখানে প্রচারের আলো থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে চলেছেন এক চিকিৎসক। নাম ডাঃ ফারুক হোসেন গাজী। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে যখন মানুষ নিজেদের ঢাক পেটাতে ব্যস্ত তখন ডাঃ ফারুক গাজী এক ব্যতিক্রমী চরিত্র। মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই এই চিকিৎসকের নাম জায়গা করে নিল ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে।
উত্তর ২৪ পরগনার অজপাড়া গাঁ, শাঁকদহ তে জন্ম ডাঃ ফারুক হোসেন গাজীর। কাজের জন্য একের পর রেকর্ড ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি। গরীব ঘরে জন্ম, গ্রামের স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ, স্বনামধন্য আল আমীন মিশন থেকে ফ্রিতে পড়াশোনা। মেধা ও দক্ষতার সঙ্গে পড়াশোনা করে ভালো রেজাল্ট করে উচ্চ মাধ্যমিকে পাশ। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে থেকে এমবিবিএস পাশ। এর পরে সাধারণ মানুষ, দুঃস্থ অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছে নিয়ে ২০১২ সালে চিকিৎসক ফারুক আলম গাজী গড়ে তোলেন সমাজ সেবী প্রতিষ্ঠান “নব দিগন্ত’।
সাধারণ মানুষের কাছে আজ একটি পরিচিত নাম “নব দিগন্ত”। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে, কর্ম সংস্থান থেকে নারীর উত্তরণে বিশাল এক ভূমিকা রেখে চলেছে এই প্রতিষ্ঠান। করোনার সময় ও আগে থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা, অক্সিজেন সিলিণ্ডার সরবরাহ, প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আসছেন তারা। অনেক অসুবিধা সত্ত্বেও দীর্ঘ ৯ বছর ধরে চলছে রোগী দেখা থেকে ওষুধ দেওয়ার কাজ। দুঃস্থ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের পড়াশোনার জন্য স্কলারশিপও দেওয়ার কাজ চলছে। এছাড়াও আছে গ্রামের মহিলাদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ থেকে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা।
গ্রামের স্কুল, কলেজ পড়ুয়া প্রায় ১৫০ মেয়েকে নিয়ে “স্বাস্থ্যব্রতী স্বাস্থ্যসেবিকা” টিম গড়ে তুলেছেন, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। আজ তারা গ্রামের মানুষের বিনামূল্যে প্রেসার, সুগার, তাপমাত্রা মেপে দিচ্ছে, স্বাস্থ্য ক্যাম্পে সাহায্য করছে এমনকী তারা ইসিজিও করতে পারে।
ডাঃ ফারুক হোসেন গাজী গড়ে তুলেছেন “নব দিগন্ত মিশন স্কুল”। যেখানে অনাথ, স্কুল ড্রপ আউট, আদিবাসী শিশুরা পড়াশুনা করে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। যাদের বই, টিউশন ফি, ব্যাগ, পোশাক সব ব্যবস্থা করেন তিনি মানুষের কাছে হাত পেতে। স্বামীর কাজে পাশে রয়েছেন স্ত্রী নিলুফা পারভীন।
এবার তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ মুকুটে যোগ হল “ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ড”। এই পুরস্কার পাওয়ায় খুশি তার পরিবারসহ সমস্ত সুন্দরবন এলাকার মানুষ।যারা প্রতিনিয়ত আশীর্বাদ করেন ডাঃ ফারুকের মতো একজন চিকিৎসককে পেয়ে।
ডাঃ ফারুক এর সংস্থা নব দিগন্ত আজ পশ্চিমবঙ্গ-এর ২৩ টি জেলাতে কাজ করে চলেছে। প্রতিটি জেলাতেই রয়েছে সংস্থার প্রতিনিধিরা। প্রতিনিধির পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে প্রায় ১০,০০০ এর বেশি সদস্য।
ডাঃ ফারুক বলেন “এই পুরস্কার সমাজের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য আরও বাড়িয়ে দিল। সারাজীবন মানুষের সেবা করে যাব, নব দিগন্ত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য বিতরণ, বস্ত্র বিতরণ, রক্ত দান শিবির, স্কলারশিপ বিতরণ, ত্রাণ বিতরণ, বৃক্ষরোপণ, অসহায় মেয়ের বিয়েতে সাহায্য, বাসস্থান নির্মাণসহ সচেতনতার প্রসার ও নারীর উত্তরণে সব সময় কাজ করে চলেছে। আগামীদিনেও তাদের এই উদ্যোগ জারি থাকবে’।