পুবের কলম প্রতিবেদক : কর্নাটক হাইকোর্টে হিজাব রায়ের বিরুদ্ধে এবার সুপ্রিম কোর্টে গেল অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড (এআইএমপিএলবি)। সরকারি স্কুল-কলেজে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করার কর্নাটক সরকারের ফতোয়া বহাল রেখে কর্নাটক হাইকোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ তাদের রায়ে বলেছিল, হিজাব পরাকে ইসলাম ধর্মে ‘অত্যাবশক’ ধর্মীয় আচার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। কর্নাটক হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে ইতিমধ্যেই আরও মামলা রয়েছে। সোমবার অন্য দুই আবেদনকারী মুনিসা বুশরা ও জালিসা সুলতানার সঙ্গে যৌথভাবে এবার কর্নাটক হাইকোর্টের হিজাব রায়ের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা করল পার্সোনাল ল’ বোর্ড।
বোর্ডের আর্জিতে বলা হয়েছে হাইকোর্ট রায় দিতে গিয়ে ভ্রান্ত যুক্তির উপর নির্ভর করে তাদের রায় দিয়েছে। আর্জিতে আরও বলা হয়েছে, এই মামলাটি মুসলিম মেয়েদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের মামলা। হাইকোর্ট তাদের রায় দিতে গিয়ে বিজো ইম্যানুয়েল মামলায় বর্ণিত তত্ত্ব ও হিজাব পরার প্রথার মধ্যে পার্থক্য গড়ে তুলে ইউনিফর্ম পরিধানের মামলা সামনে এনেছে। অথচ এই মামলায় ইউনিফর্ম পরার নির্দেশে সামান্য ব্যত্যয় ঘটিয়ে ধর্মীয় আচার হিসেবে হিজাব পরাকে মান্যতা দিতে পারত, যেমনটি শিখ সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে (পাগড়িতে মাথা ঢেকে রাখা)।
আর্জিতে আরও বলা হয়েছে যে, হাইকোর্টের রায়ে ইউনিফর্মের নামে সমরুপতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে বটে। কিন্তু এক সম্প্রদায়ের মেয়েদের কাপড় দিয়ে মাথা ঢাকার ধর্মীয় আচার পালন করতে না দিয়ে ন্যায়-বিচারের নামে প্রহসন করা হয়েছে। ‘মানিয়ে নেওয়ার যৌক্তিকতা’র তত্ত্বকে হাইকোর্টের রায়ে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। ‘আবশ্যিক ধর্মীয় প্রথা’ বা এসেনসিয়াল রিলিজিয়াস প্র্যাকটিস (ইআরপি)-এর ধারণা কোনও ধর্মের স্বাধিকারের মধ্যে পড়ে।
সেই স্বাধিকারের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে কোনটি ইআরপি এবং কোনটি নয়। আর্জিতে বলা হয়েছে, হাইকোর্ট রায় দিতে গিয়ে মৌলিক অধিকারের সুরক্ষার বিষয়েও ভুল ব্যাখ্যা করেছে। কর্নাটক হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে অন্য আবেদন দাখিল করেছেন আইনজীবী আদিল আহমেদ ও রহমুতুল্লাহ খোতওয়াল। এই মামলায় বাদী হলেন মুহাম্মদ আরিফ জামিল এবং অন্যান্য। এদের আর্জিতে বলা হয়েছে, হাইকোর্টের রায়ে লঙ্ঘিত হয়েছে সংবিধানের ১৪, ১৫, ১৯, ২১ এবং ২৫নং ধারা। আন্তর্জাতিক কনভেনশনের ধারাগুলিও লঙ্ঘিত হয়েছে যাতে স্বাক্ষর করেছে ভারত।
এছাড়াও হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন মান্নান ও হিবানাজ। তাদের আর্জিতে বলা হয়েছে, হাইকোর্ট রায় দিয়ে গিয়ে ধর্ম ও বিবেকের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। এই আর্জিতে আরও বলা হয়েছে, ১৯৮৩ সালের কর্নাটক শিক্ষা আইনে কোথাও ছাত্র-ছাত্রীদের ইউনিফর্ম পরার কথা বলা হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের কাছে এই মামলাগুলি জরুরি ভিত্তিতে শুনানির আবেদন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি রামানা গত বৃহস্পতিবার নাকচ করে দিয়েছিলেন।