পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: রাউরকেল্লা থেকে হেঁটে দিল্লিতে চলেছেন এক যুবক। উদ্দেশ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাৎ। এই যুবকের কাঁধে রয়েছে একটি সাদা কাপড়ে আপাদমস্তক ঢাকা প্রতীকী ‘শবদেহ’। আর এই ঘটনার পিছনে উঠে এসেছে এক করুণকাহিনি। হেঁটে চলা যুবকের নাম মুকিতকান্ত বিশওয়াল। ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশের ইলাহাবাদ এসে গিয়েছেন রাউরকেল্লার ৩৪ বছর বয়সী এই যুবক। তবে আরও ৬৫০ কিলোমিটার পৌঁছলেই তার লক্ষ্যে পৌঁছে যাবেন মুকিতকান্ত। কিন্তু কেন এই তরুণ যুবক যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে?
মুকিতকান্ত বিশওয়াল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আমার পিঠে রয়েছে সাদা কাপড়ে ঢাকা একটি ‘নকল মৃতদেহ।’ গ্রামের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার করূণ অবস্থা বোঝাতে এটাই প্রতীক। পিএমও দফতরে অ্যাপয়েন্টমেন্টের কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও সদুত্তর আসেনি। তাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কাছে সমস্ত ঘটনা জানাব।
মুকিতকান্ত জানিয়েছেন, ২০২১ সালে ঢাকঢোল পিটিয়ে ইস্পাত শিল্পনগরী রাউরকেল্লায় ইস্পাত পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট ও সুপার স্পেশালিটির উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। ৩৪ বছর বয়সী মুকিতকান্তের কথায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ ও ২০১৮ সালে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেলের অধীনে এই হাসপাতালের উন্নয়ন হবে। কিন্তু প্রতিশ্রুতিই সার! এখনও শুরু হয়নি পরিষেবা।
এর পর ২০১৮ সালে এই ভাবে হেঁটে আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাই তাদের প্রতিশ্রুতি মনে করাতে। তিন মাস ধরে অনুরোধ করি। এর পর ৩০০ কোটি টাকায় নির্মিত সুপার স্পেশালিটি ক্লিনিকের কাজ শুরু হয় দু-থেকে তিনজন চিকিৎসক দিয়ে। তার পরও আবার একই অবস্থা। ২০২১ সালের ২১ মার্চ রাষ্ট্রপতির হাতে উদ্বোধন হওয়া হাসপাতালে আজও ঠিকভাবে কাজ শুরু হল না। এর পর আমি একই ইস্যুতে এইভাবে পায়ে হেঁটে রাউরকেল্লা থেকে ভুবনেশ্বর যাই। সেখানে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানাই। এখন হাসপাতালটিতে দু’ঘন্টার জন্য একটি আউট ডোর বিভাগ শুরু হয়েছে। কিন্তু তার পরেও হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের কাজ শুরু হয়নি। তাই আমি আবার হাঁটছি।
মুকিতকান্ত জানান, আমি প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার হাঁটি। আমার লক্ষ্য ১০ জুনের মধ্যে দিল্লি পৌঁছন। আমি সাদা কাপড়ে ঢেকে নিয়েছি ‘একটি প্রতীকী শবদেহ’। এটাই আমার প্রতীক। এই প্রতীকী দেহই রাউরকেল্লায় ইস্পাত নগরীর করুণ স্বাস্থ্যব্যবস্থা কথা তুলে ধরবে।
মুকিতকান্ত জানিয়েছেন, হাসপাতালে চিকিৎসক, কর্মীদের অভাবের কারণে হৃদরোগ, লিভার, কিডনি ইত্যাদির মতো বিভিন্ন গুরুতর রোগে আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগী হয় মারা যাচ্ছেন বা চিকিৎসার জন্য ভুবনেশ্বর বা কটকে স্থানান্তরিত হচ্ছে। কারণ এখানে কোনও চিকিৎসার সুবিধা নেই।
মুকিতকান্ত আরও জানিয়েছেন, এই গরমে এতটা রাস্তা এইভাবে হাঁটা খুব কষ্টকর। রাস্তায় চলতে চলতে বহু মানুষের সমর্থন পেয়েছি। বিহার ও ঝাড়খণ্ড দিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিদিন ২০০ টাকা খরচ হত। আর এখন উত্তরপ্রদেশে প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে খরচ হয়।
সূত্রের খবর, হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে প্রায় ৩৮০ জন চিকিৎসক প্রয়োজন হবে। এখন মাত্র ১৪ জন চিকিৎসক আছেন।
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, আমরা হাসপাতাল শুরু করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু প্রধান সমস্যা হল প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক নেই। তবে ক্যাম্পাস নিয়োগের চেষ্টা করছি।