দেবশ্রী মজুমদার, বোলপুর: একুশে যদি ২২০ থেকে ২৩০ বিধায়ক দেন,তাহলে মাথার মুকুট ১০০ ভরি সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে দেব। মায়ের কাছে ছিল মিলিত সংকল্প। সেই বাসনা পূরণ হতেই দেড় কেজি সোনার মুকুট। কানের দুল, বালা, চন্দ্রহার কি নেই মায়ের। মঙ্গলবার মায়ের গায়ে উঠলো অলংকার। গহনার পরিমাণ বাড়লো আরও কয়েক ভরি। জেলার এত কর্মী, বিধায়ক, মন্ত্রী আছেন, সবাই মিলে মাকে নিজের ইচ্ছায় দিয়েছেন। এখনও অনেকে দিতে আসছেন। মাকে পঞ্চায়েত ও পৌর ভোট নিয়ে কি চাইলেন? জিজ্ঞেস করতেই, কেষ্ট বললেন, ছোটখাটো কিছু মাকে চাই না। পঞ্চায়েত ও পুরসভার ভোটের জন্য মায়ের ঈশারা কাফি। বড় খেলায় নামার আগে মাকে চাইবো। যেমন একুশে চেয়েছিলাম, মা ছাপিয়ে দিয়েছে। কথা মতো মায়ের মাথায় পরানো হলো দেড় কেজি সোনার মুকুট। আগে তৃণমূলের পার্টি অফিসে শক্তি আরাধনায় মায়ের গলায় সোনার মুন্ডু মালা পরিয়ে পঞ্চায়েত জয়ের মানসিক পূর্ন করার রেকর্ড আছে কেষ্ট ওরফে অনুব্রত মন্ডলের। তবে আগামী লোকসভা ভোটে ৪২ এ ৪২ এর প্রার্থনা করেছিলেন কেষ্ট, সেটা কোন কারণে ফস্কে গেছিল! এবার সেই লক্ষ্যে কেষ্ট। এদিন কেষ্ট বলেন, বাংলার মঙ্গল, বাংলার শান্তি, বীরভূমের শান্তি, দিদির মঙ্গল এবং অভিষেকের মঙ্গল চাইবো মাকে।
যার নামেই সারা বীরভূমে দল চলে বহাল তবিয়তে। সেই কেষ্ট মন্ডলের উদ্যোগে ফি বছর বোলপুরের জেলা তৃনমুল পার্টি অফিসে হযে আসছে শক্তি আরাধনা। কোটি টাকার পার্টি অফিসের ভিতরে মা কালী পুজো আয়োজন হয়েছে । তবে পার্টি প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই এই পার্টি অফিসে কালী পুজো হযে আসছে প্রতিবছর। এর আগে অনুব্রত কংগ্রেসে থাকাকালীন ও পুজো করতেন। কেষ্ট মন্ডলের কথায়, “আমি ১২ বছর বযস থেকে পুজো করে আসছি। নিজেই ছোট বেলায় প্রতিমা গড়তাম। পরে একটু বড় হযে পাডার গলির ভিতর করতাম এই পুজো। তবে ১৯৮৮ সাল থেকে পার্টি অফিসে পুজো করে আসছি।”
কেষ্ট পুজোয় আয়োজনে কোন ত্রুটি রাখেন না ষোড়শ উপাচারে দেবীর পুজো হয পঞ্জিকা মেনে।সারা দিন উপবাসী হয়ে পুষ্পাঞ্জলি দেন কেষ্ট। এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য জেলা প্রায় সব তৃনমূল নেতাই হাজির থেকে মা কে অলংকার উপহার দেন। তাদের কেউ বা মনস্কামনা পূর্ন হবার জন্য আবার কেউ ভালোবেসে দেন। তবে মা কে গহনা পড়ানোর বেশী ভাগ টাই অবশ্যই কেষ্ট মন্ডলের দেওয়া। আগের বছর ১৮০ ভরির বেশি সোনার অলংকরণে মাকে ভূষিত করেন।
তবে ফি বছর অনুব্রত নিজে মা কে সোনা গহনা করিয়ে পরান মনস্কামনা পূর্ন হতেই। কেষ্ট কথায়, “মা আমাকে আজ পর্যন্ত নিরাশ করেনি। যা চেয়েছি তাই দিয়েছেন দু হাত ভরে। মা নিজের অলংকার নিজেই করে নেন। তার জন্য কাউকে কোন দিন কিছু বলার দরকার হয না। মা দলের নেতা থেকে মন্ত্রী, বিধায়ক থেকে সাধারন কর্মী সকল কেই দুহাত তুলে আশীর্বাদ দেন। “
জানা গেছে, গতবার মা কে বলে ছিলেন বীরভূম জেলা পরিষদ এর ৪২ এ ৪২ করে দাও। মা তাই করেছেন। তাই গতবার মা কে ১২ ভরি সোনার মুন্ড মালা করিযে দিযেছিলেন। এছাড়াও চার হাতে বালা, দুই হাতে আঙটি, চার হাতে চারটে বাঁক দেওয়া হযেছিল। এছাড়াও আরও অনেকেই এটা ওটা দিযেছে। এবারই নতুন করে ৪০ ভরির মত গহনা পরেছিল মায়ের।”
পুজোর দিন সকাল থেকেই সাজো সাজো রব। দলের ছেলেরা কেউ বাজার কেউ ফল মিষ্টি জোগাড় করছে আবার অনেকে রাতে খাওয়া দাওয়া জন্য তদারকি করছে। কালী পুজোর রাতে মা এর ভোগের জন্য ৯রকমের ভাজা, লুচি, ৯ রকমের মিষ্টি, তরকারি, পায়েস,। এছাড়াও কয়েক হাজার লোকের জন্য খিচুড়ি বাঁধা কপির তরকারি, পাঁঠার মাংস পায়েস চাটনী ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাতে পুজো শেষে প্রায় তিন চার হাজার নেতা কর্মী সমর্থক প্রসাদ খায় পার্টি অফিসে।
জেলার বিধায়ক মন্ত্রী জেলার নেতারা ব্লক নেতারা সন্ধ্যা হতেই হাজির হতে শুরু করে শক্তি আরাধনায অংশ নিতে। কেষ্টর কথায়, “দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামে সংকল্প হয়। আমার ও দলের আরও অনেকের নামেই পুজো হয়। মা এর কাছে সকলেই পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে প্রার্থনা করি মা জেলায় যেন কোন অশান্তি না হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন যেন অব্যাহত থাকে।”