অশোক সেনগুপ্ত: গত এক দশকে অনেকটাই ভোল বদলেছে বিমানবন্দর থেকে উল্টোডাঙা পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশ। এই অংশ আরও সুন্দর এবং প্রকৃতিবান্ধব করে তোলার পরিকল্পনা হচ্ছে। বাঙ্গুর থেকে দমদম পার্ক পর্যন্ত ভিআইপি রোডের ৬০০ মিটার অংশে একটি জীববৈচিত্র্য পার্ক করা হয়েছে। রাজ্যের পূর্ত দফতর (পিডব্লিউডি) এবার ভিআইপি রোড সংলগ্ন বিভিন্ন জলাশয় এবং খালি প্লটগুলিতে সৌন্দর্যায়নের পরিকল্পনা তৈরি করতে শুরু করেছে। বিধাননগরের বিধায়ক এবং রাজ্যের অগ্নিনির্বাপন ও অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা দফতরের মন্ত্রী সুজিত বোস বলেন, ভিআইপি রোডের জন্য বেশ কয়েকটি উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে একটি হল এলইডি লাইট বসানো এবং যাতায়তের রাস্তার মাঝের অংশে (মিডিয়ান ডিভাইডারে) গ্রিলের প্রতিস্থাপন করা।
সম্প্রতি প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঙ্গুর থেকে দমদম পার্ক পর্যন্ত অংশে জীববৈচিত্র্য (বায়োডাইভার্সিটি) পার্কের উদ্বোধন করা হয়েছে। ১৯৬০ নাগাদ ভিআইপি রোড তৈরির সময় নতুন উঁচু রাস্তা করতে পাশ থেকে মাটি কাটা হয়েছিল। রাস্তা বরাবর তৈরি হয় দীর্ঘ নয়নজুলি। পরবর্তীকালে এই দীর্ঘ নয়নজুলির কিছু অংশ দখল হয়ে যায়। তৈরি হয় বড় বাড়ি। তা নিয়ে বিতর্ক ওঠে। বিষয়টি গড়ায় আদালতেও। উল্টোডাঙা থেকে লেক টাউন সংযোগস্থল পর্যন্ত দক্ষিণ দমদম পুরসভার ২৯, ৩০, ৩৪ ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের নয়নজুলির নানা অংশ প্রায়শই দৃশ্যদূষণের কারণ হয়ে উঠত। ২০১৭ সালে সল্ট লেক স্টেডিয়ামে অনূর্ধ ১৭ বছরদের ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল আসরের সময় রাস্তার ধারের এই অংশে সরকারের ইতিবাচক নানা কাজের বিজ্ঞাপন দেওয়া বোর্ড দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। জীববৈচিত্র্য পার্কের আদলে এবার দক্ষিণদারিতে একটি বড় পুকুর সহ ৫০০ মিটার দীর্ঘ এবং ৫০ মিটার চওড়া অংশের উন্নয়নের কথা ভাবছে প্রশাসন। পূর্ত দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “এছাড়া, গোলাঘাটায় দেবী ঘাট এবং ভিআইপি রোডের বিভিন্ন জায়গায় আরও কয়েকটি ছোট পুকুর রয়েছে। সেগুলি সংস্কারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বাঙ্গুরে গড়ে ওঠা জীববৈচিত্র্য পার্কের আদলেই সবুজের বিকাশ এবং জলাশয় সংরক্ষণের কাজ হবে”।
আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে বাঙ্গুরে যে জীববৈচিত্র্য পার্কটি তৈরি করা হয়েছে, আগে সেখানে নয়নজুলি ও এবড়োখেবড়ো গর্ত ছিল। সেখানে নির্বিচারে বর্জ্য এবং আবর্জনা ফেলা হত। ফলে জায়গাটার একটি পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা করা হয়। জলাশয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ড্রেজিং এবং পরিষ্কার করা হয়। জলাশয়ের দু’পাশে বাতিস্তম্ভ বসানো ও ব্যাপক বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানো হয়েছে। কর্মকর্তারা জানান যে ভিআইপি রোডের কাছে বেশ কয়েকটি খালি প্লট রয়েছে। সেগুলো ছোট পার্ক এবং বাগান করে সাজানো যেতে পারে। এক পূর্ত আধিকারিকের কথায়, “কেষ্টপুর থেকে বাগুইআটি জোড়ামন্দির পর্যন্ত ভিআইপি রোডের কাছে অনেক খালি প্লট রয়েছে। সেই সব জায়গাতেও শিশুদের পার্ক বা বাগানের জন্য সৌন্দর্যায়নের কাজ করা যেতে পারে। সেখানে লোকেরা বেড়াতে যেতে পারে এবং শিশু ও বয়স্করা তাদের অবসর সময় কাটাতে পারে।”
পূর্ত দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, উন্নয়ন কাজের জন্য যে গাছগুলিকে উপড়ে ফেলতে হয়েছিল, পরিকল্পিত সবুজায়নের কথা মাথায় রেখে সেগুলি ভিআইপি রোডের কাছে পুনরায় রোপণ করা হয়েছে। মেট্রোর নির্মাণ কাজের জন্য হলদিরাম ক্রসিংয়ের কাছে প্রায় ২৫০টি গাছ তুলে ফেলতে হয়েছিল। লেক টাউন থেকে কেষ্টপুর পর্যন্ত ভিআইপি রোডের পাশে সেগুলো বসানো হয়েছে।