পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: বিগত দু বছর ধরে গোটা বিশ্বে করোনা মারাত্মক আকার ধারণ করে। এর পর সেই সংক্রমণ দ্রুত হারে বাড়তে থাকে। মাঝের কিছুটা সময় করোনা সংক্রমণ স্থিতিশীল হলেও ফের এই ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। এদিকে করোনা আবহের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে মাঙ্কি পক্স। ভারতে এক ব্যক্তির শরীরে এই সংক্রমণ মিলেছে। ইংল্যান্ডে প্রথম মাঙ্কি পক্স আক্রান্তের খোঁজ মিলেছিল।
জানা গেছে, বাঁদরের থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয় রোগটি। সেখান থেকেই নাম হয়েছে মাঙ্কি পক্স। ইতিমধ্যেই ভারতে হানা দিয়েছে এই ভাইরাস। বিদেশ থেকে সদ্য দেশে ফেরা এক ব্যক্তির শরীরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ মিলেছে। চার দিন আগে সংযুক্ত আমিরশাহী থেকে কেরলে ফেরেন ওই ব্যক্তি। বিদেশে মাঙ্কি পক্স রোগীর সংস্পর্শে আসার পরেই এই ব্যক্তির দেহে সংক্রমণ ঘটে জানা গিয়েছে।
কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা গর্গ, রাজ্যে এক ব্যক্তির মাঙ্কি পক্সের সংক্রমণকে নিশ্চিত করেছেন।
ভারতে মাঙ্কি পক্স-এর খোঁজ মেলায় উদ্বিগ্ন কেন্দ্র সরকার। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রকের পক্ষ থেকে শুক্রবার একটি গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মৃত ও বন্য প্রাণির (ইঁদুর, বানর) সঙ্গে যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। যদি কোনও ব্যক্তি সংক্রামিত কোনও ব্যক্তির সংস্পর্শে আসেন, ও এলাকায় মাঙ্কি পক্স দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে জানানো হয়েছে।
নির্দেশিকা অনুযায়ী:
১) বিদেশ ফেরত যাত্রীদেরকে অসুস্থ ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে যাঁদের ত্বকে ক্ষত রয়েছে অথবা গোপনাঙ্গে অ্যালার্জি আছে, তাঁরা যেন কোনওভাবেই বিদেশ থেকে ফেরা যাত্রীদের সংস্পর্শে না আসেন।
২) জীবিত কিংবা মৃত বন্য প্রাণীদের কাছে না যাওয়াই ভাল। ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, বাঁদরের ধারকাছে ঘেঁষতে বারণ করা হয়েছে।
৩) বিদেশ ফেরত যাত্রীদের গুল্মজাতীয় পদার্থের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪) আফ্রিকান পাউডার, ক্রিম কিংবা বডি লোশন ব্যবহার করবেন না।
৫) সংক্রমিতের বিছানা, আসবাব, বাসনপত্রের সংস্পর্শও এড়িয়ে চলার কথা বলা হয়েছে নির্দেশিকায়। এই রোগে আক্রান্তের সঙ্গে খাবার শেয়ার করে খাবেন না।
৬) জ্বর হলে অথবা শরীরে অ্যালার্জি দেখা দিলে কিংবা মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তের সংস্পর্শে এসে থাকলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সেই অনুযায়ী পরীক্ষা করান।
স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, কেন্দ্র সতর্কতার সঙ্গে সমগ্র পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে। রাজ্যগুলির সঙ্গে সমন্বয় করে সক্রিয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। ইতিমধ্যেই কেন্দ্র সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে চিঠি দিয়ে এই রোগের বিস্তার রোধে পদক্ষেপ নিতে ও সতর্কতার থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। সন্দেহভাজন রোগী দেখা দিলে হাসপাতালগুলিকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) শুক্রবার একটি মাইক্রো-ব্লগিং ওয়েবসাইটে দেশ জুড়ে ১৫টি ভাইরাস গবেষণা ও ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি সম্পর্কে জানিয়েছে। আইসিএমআর একটি ট্যুইট করে জানিয়েছে, দেশের সাহায্যের জন্য ১৫ টি ভাইরাস গবেষণা ও ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরিতে এই পরীক্ষাগুলি করা হচ্ছে। সেখানে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মীদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অহেতুক এই নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। তবে স্মলপক্স-এর মতো মাঙ্কি পক্স অতো ভয়াবহ না হলেই সতর্ক থাকতে হবে। রাজ্যবাসীকে ইতিমধ্যেই সতর্ক থাকার নির্দেশে দিয়েছে কেন্দ্র সরকার।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই রোগের সংক্রমণে রোগী জ্বর মাথাব্যথা, পেশির ব্যথা, ক্লান্তি, কাঁপুনির মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এই ধরনের কোনও উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে রোগ ছোঁয়াচে। সংক্রামিত রোগীর সংস্পর্শে আসলে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ২ সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায় মাঙ্কিপক্স। অনেক সময় নিজে থেকেই থেকেই সেরে ওঠে। তবে প্রয়োজনে ওষুধেরও প্রয়োজন পড়ে।
আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের তরফে জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সংক্রমণ রুখতে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তদের যৌনমিলনে বিরত থাকা দরকার। আক্রান্তের সংস্পর্শে আসলে তারপরই নিজেকে ভালো করে পরিষ্কার করা দরকার।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যে হারে এটি ছড়াচ্ছে, তাতে এর মিউটেশন হতে পারে। ভবিষ্যতে এই সংক্রমণে মৃত্যুর হার বাড়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ‘হু’ জানিয়েছে, মাঙ্কি পক্স জুনোসিস ভাইরাল। সংক্রমণটি প্রাণী থেকে মানব শরীরে থাবা বসাচ্ছে। এটিকে অনেকটাই স্মল পক্সের মতো দেখতে। তবে এটি স্মল পক্সের মতো ক্ষতিকারক নয়। দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হওয়া সম্ভব।
‘হু’ পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানিয়েছে, ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২২ জুনের মধ্যে ৫০টি দেশের ৩৪১৩টি সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে একজনের। এর মধ্যে সব থেকে বেশি সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে ইউরোপী অঞ্চল (৮৬ শতাংশ) ও আমেরিকায় (১১ শতাংশ)। ধীরগতিতে এই সংক্রমণের বিস্তার হলেও মাঙ্কি পক্সকে ঝুঁকিপূর্ণ বলেই উল্লেখ করেছে ‘হু’।