মুহাম্মদ মুস্তাক আলি, জঙ্গিপুরঃ ‘এক ইঞ্জিনেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কামাল করে দিয়েছেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই ত্রিপুরা-অসম জুড়ে খেলা শুরু হচ্ছে। ভারত জুড়েই খেলা হবে। আর তৃণমূল গেট তুলে দিলে বিজেপি পার্টিটাই নিলাম হয়ে যাবে। একাধিক বিজেপির বিধায়ক– সাংসদ দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য লাইন দিয়ে আছে।’ এমনই বাঘা বাঘা শব্দ চয়নে বিজেপিকে বিঁধলেন সর্বভারতীয় তৃণমূল সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার তিনি সামশেরগঞ্জ বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থী আমিরুল ইসলাম এবং জঙ্গিপুর বিধানসভার দলীয় প্রার্থী জাকির হোসেনের সমর্থনে কর্মিসভায় বক্তব্য রাখেন। বিজেপির পাশাপাশি অভিষেকবাবু কংগ্রেস সিপিএমকেও বিঁধতে ছাড়েননি। ডায়মণ্ডহারবারের সাংসদ আশা ব্যক্ত করে বলেন, আগামী লোকসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক শক্তির কাছে কেন্দ্র সরকার থেকে বিজেপিকে বিদায় নিতে হবে।
অভিষেকবাবু বলেন, ত্রিপুরা এবং অসমে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে খেলা শুরু হতে চলেছে। তাঁর হুঁশিয়ারি সিবিআই-ইডি প্রভৃতি এজেন্সি দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়দের ভয় দেখানো সম্ভব হবে না। ত্রিপুরাতে বিজেপি ভাষণ এবং তৃণমূলের উত্থানে আতঙ্কিত হয়ে কেন্দ্র সরকার ইতিমধ্যে তাঁকে ১৫ দিনের মধ্যে পাঁচটি নোটিশ পাঠিয়েছে। মঞ্চ থেকে অভিষেকের হুঁশিয়ারি, আরও পাঁচশো নোটিশ পাঠানো হলেও বিজেপি বিরোধী আন্দোলন বন্ধ করবে না তৃণমূল। কোনও চমকানি ধমকানিতে কাজ হবে না। বিজেপিকে ভারতের রাজনৈতিক ময়দান ছাড়া করব।
তৃণমূল সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এদিনের প্রথম সভাটি করেন, সামশেরগঞ্জের দলীয় প্রার্থী আমিরুল ইসলামের সমর্থনে। সভাতে অভিষেকবাবু ছাড়াও বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ খলিলুর রহমান। দুই মন্ত্রী যথাক্রমে সাবিনা ইয়াসিমিন– মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো– ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবির– বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস– বিধায়ক মনিরুল ইসলাম– আমিরুল ইসলাম– ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকাত মোল্লা– শাওনি সিংহ রায় প্রমুখ। অভিষেক এদিন সামশেরগঞ্জ বিধানসভায় তৃণমূল প্রার্থী আমিরুল ইসলামকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী করার জন্য সর্বস্তরের ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান। সামশেরগঞ্জ ময়দানের কর্মিসভা শেষ হতেই হেলিকপ্টারে চেপে অভিষেক রওনা হয়ে যান রঘুনাথগঞ্জের এমডিআই মাঠে।
সেখানে তিনি জঙ্গিপুর বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থী জাকির হোসেনের সমর্থনে বক্তব্য রাখেন। এদিনের এই সভার বিশেষত্ব হল ফরাক্কার প্রাক্তন বিধায়ক মইনুল হক কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দেন রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলে। খলিলুর রহমান– সাংসদ আবু তাহের খাঁন– মন্ত্রী মুহাম্মদ আখরুজ্জামানদের উপস্থিতিতে মইনুল হকের হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সভাতেই অভিষেকবাবু জাকির হোসেনকে ভোট দেওয়ার আবেদন জানানোর পাশাপাশি বিজেপিকে একাধিক ইস্যুতে তুলোধনা করে বক্তব্য রাখেন। ডায়মণ্ডহারবারের সাংসদ।
অভিষেক বিজেপি নেতাদের বহিরাগত আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘ওরা গরুর দুধে সোনা পেয়ে, সোনার বাংলা গড়ার ভাঁওতা দিতে চেয়েছিল।’ অভিষেকের বক্তব্য, রাজ্যের মানুষ বিজেপিকে গোহারা করে হারিয়েছে। তিনি আরও বলেন, মুর্শিদাবাদে ২২টা সিটের মধ্যে ১৮টা সিট তৃণমূলকে উপহার দিয়েছে। এবার বাকি দু’টি বিধানসভাতেও তৃণমূল প্রার্থীদের জয়ী করার আহ্বান জানান। অভিষেকের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রাজ্য সরকারের খাদ্যসাথী– লক্ষ্মীর ভাণ্ডার– কন্যাশ্রী সহ জনকল্যাণমুখী কর্মসূচিগুলি উঠে আসে। অভিষেকের দাবি, দুয়ারে সরকারে কেবলমাত্র মুর্শিদাবাদেই এ পর্যন্ত ২৪ লক্ষ মানুষ আওতায় চলে এসেছেন। গঙ্গা ভাঙন সমস্যা সমাধানে মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই উদ্যোগ। আর কোনও সমস্যা থাকলে সেগুলো গুরুত্ব সহকারে সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি। সংসদে মানুষের হয়ে কোনও রকম কথা তুলে ধরে না কংগ্রেস সাংসদরা, বলেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জোরালো অভিযোগ করেন।