পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: চেনা মুখে ‘অচেনা’ সুর। মেরুকরণের হুঙ্কার ছেড়ে এবার মুসলিম সমাজ’কে আবেগতাড়িত বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিগত কয়েক দিনের ‘মুসলিম বিদ্বেষী’ ভাষণ ছেড়ে এবার তাদের হয়েই সওয়াল করলেন মোদি। তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণের আগে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জানান, আমি মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনারা নিজেরা আত্মসমীক্ষা করুন। একবার ভেবে দেখুন অন্যান্যদের তুলনায় আপনারা এত পিছিয়ে কেন? নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভাবুন। এমন নয় তো কংগ্রেস আপনাদের পথভ্রষ্ট করছে, যেমনটা ওরা অতীতেও করেছে। আপানদের কাছে অনুরোধ, স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। বিজেপি পার্টি অফিসে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। মনে কোনও ভুল ধারণা থাকলে সেটা দূরে সরিয়ে দিন। আপনাদের কেউ তাড়িয়ে দেবে না।
বিগত কয়েকদিনে হিন্দুত্ববাদী প্রচার তুঙ্গে তুলেছে প্রধানমন্ত্রী। বিরোধীদের কটাক্ষ, ৪০০ পার যে হচ্ছে না, সেটা কি প্রধানমন্ত্রী বুঝে গিয়েছেন? তাই কি মরিয়া হয়ে হিন্দু ভোট এককাট্টা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি? বিহার থেকে উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজস্থান, কর্নাটক থেকে মহারাষ্ট্র, বিভিন্ন জায়গায় জনসভা করতে গিয়ে চড়া সুরে ‘হিন্দুত্ব লাইনে’ প্রচার করতে দেখা গিয়েছে মোদিকে। তাহলে হঠাৎ কি এমন হল যে পুরো ‘ভোল বদলে’ ফেলল মোদি? উঠছে প্রশ্ন। তাহলে কি হিন্দুভোটে ভোট বৈতরণী পার করা যাবে না বলেই ‘মুসলিম’ ভোট এককাট্টা করতে মজে উঠলেন তিনি? যথারীতি বিষয়টি নিয়ে বিরোধীরা কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না। তাদের মন্তব্য পরিস্থিতি বেগতিক বুঝেই এখন সুর বদলাতে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যদিও গেরুয়া শিবিরের দাবি প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনও দিন জাত-ধর্ম-বর্ণ দেখেননি। তবে বিজেপি যে দাবিই করুক না কেন, মোদির সুর বদল নিয়ে চর্চা কিন্তু থেমে থাকছে না।
বিরোধীদের আরও দাবি, ২০০২ সালে ক্ষমতায় বসার আগে ঠিক যে ভাবে মুসলিম বিদ্বেষের বিজ সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিল, ঠিক একই কাজ ২০২৪ করছে। বিপুল জয় সম্পর্কে বিজেপি যে সংশয়ী ও নার্ভাস এটা এখন জলের মতো স্বচ্ছ। ২০০২ সালে যেমন করে নিজেকে ‘হিন্দুদের দেবদূত’ হিসবে তুলে ধরেছিল ঠিক একই কাজ করছে ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে। কৌশলে নিজেকে ‘হিন্দু হৃদয় সম্রাট’ বানানোর ফন্দি আঁটছে । গুজরাতের হিংসার পরে মুসলিমদের ত্রাণ শিবিরকে তিনি ‘সন্তান উৎপাদনের কারখানা’ বলে তকমা দিয়েছিলেন। ২০২৪ সালে এসে পুরানো সুরে ফিরে এসেছেণ প্রকাশ্যে।
সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাড়ন্ত হিন্দুত্বগন্ধী। সে সকল রাজ্যে ১০ শতাংশ ভোট পায়না বিজেপি। যতই তারা পসমন্দাদের (নিম্নবর্গের মুসলিম) মন পাওয়ার চেষ্টা করুক, তা সময় অপচয় বৈকি কিছু নয়।
মোদি বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন, রামমন্দির তৈরির ইস্যু ‘বাসি’ হয়ে গিয়েছে। বিরোধী প্রচারে রোটি-কাপড়া-মাকানের সঙ্গে বিজলি-সড়ক-পানি যেমন প্রাধান্য পাচ্ছে, তেমনই উঠে আসছে বেকারত্বের জ্বালা, মূল্যবৃদ্ধির কোপ, দুর্নীতির ব্যাপকতা এবং এক শতাংশ ধনী মানুষের আরও ধনী হওয়ার কাহিনি। গোদের ওপর বিষ ফোঁড়া নির্বাচনী বন্ড। এগুলোর একটার জবাবও তাঁর কাছে নেই। যা আছে, তা শুধুই ধর্মীয় মেরুকরণ। আর তাই ২০২৪ সাধারণ নির্বাচনের গরম হাওয়ায় ‘মাছ’, ‘মাটন’, ‘মুসলিম’-এর পর মোদি আরও একটা ‘ম’ যোগ করেছেন, তা হল ‘মঙ্গলসূত্র’ । এই ধর্মীয় মেরুকরণই লাগামছাড়া বেকারত্ব আর আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির যুগে মোদির একমাত্র রক্ষাকবচ এই ‘ম’!