পারিজাত মোল্লা: রবিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করা হয়েছিল রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক কে। আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হল রেশন মামলায় ধৃত মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। বিগত ১৪ দিন ইডি হেফাজতে ছিলেন মন্ত্রী। এবার জেল হেফাজতে তিনি।
এদিন ব্যাংকশাল আদালতে জ্যোতিপ্রিয়র আইনজীবী জানান-‘ , ইডি হেফাজতে থেকে মন্ত্রীর স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে’। জেলে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার আবেদনও জানানো হয়েছে। রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের শারীরিক অবস্থা ভাল নয় বলে দাবি ধৃতের আইনজীবীর। রবিবার সকালে তাঁকে নিয়ে যখন কম্যান্ড হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তখন ক্ষীণকণ্ঠে মন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘মরে যাব।’ বিভিন্ন রোগে তিনি আক্রান্ত। সেই জ্যোতিপ্রিয়কে রবিবারই ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়। আদালতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁকে যখন সিজিও থেকে বের করা হয়, তখন মন্ত্রীকে ফের বলতে শোনা গেল, ‘আমার বাঁদিকটা পুরো গেছে…’।
রেশন মামলায় জ্যোতিপ্রিয়কে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন নিম্ন আদালত। কিন্তু সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগেই তাঁকে আদালতে তোলে ইডি। কেন একদিন আগে আদালতে হাজির করানো হল? সেই নিয়ে জল্পনা বাড়ছে। শুনানি শেষে ৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিল ব্যাঙ্কশাল আদালতে।রেশন দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তে কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডি বারবার তিনটি কোম্পানির কথা বলছে।
ইডির দাবি , -‘ গ্রেসিয়াস ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেড, গ্রেসিয়াস ইনোভেশন প্রাইভেট লিমিটেড ও শ্রী হনুমান রিয়েলকন প্রাইভেট’ নামে এই তিনটে কোম্পানিতে ডিরেক্টর পদে রয়েছেন বালুর স্ত্রী ও মেয়ে। কিন্তু প্রথমে তা স্বীকার করেননি জ্যোতিপ্রিয়।পরবর্তীতে তা স্বীকার করেছেন বলে দাবি ইডির।সূত্রে প্রকাশ , রবিবার ইডি ব্যাঙ্কশাল আদালতে দাবি করে, -‘ মেয়ে ও স্ত্রীর সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে জ্যোতিপ্রিয়কে জেরা করার সময় তিনি ওই তিন কোম্পানির সঙ্গে যোগের কথা স্বীকার করেছেন। জেরায় মন্ত্রী বলেছেন তাঁর নির্দেশেই ওই কোম্পানিগুলোতে তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে ডিরেক্টর করা হয়’।এদিন জ্যোতিপ্রিয়র তরফে জামিনের আবেদন করা হয়নি। তবে তাঁর আইনজীবী আদালতে জানিয়েছেন , -‘ ইডি হেফাজতে জ্যোতিপ্রিয়র শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। সাতদিন আগেও যখন তাঁকে আদালতে আনা হয়েছিল, সেই সময়ের থেকে এখন শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে’।
এরপরই জ্যোতিপ্রিয়র আইনজীবী আবেদন করেন, -‘ সব বিষয় খতিয়ে দেখে তাঁর মক্কেলকে যেন কোনও সরকারি হাসপাতালে রেখে চিকিত্সা করানো হয়’।তবে এদিন সওয়াল-জবাব পর্বে ইডির আইনজীবীর দাবি, -‘ কমান্ড হাসপাতালে নিয়মিত মন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়েছে। সেখানকার চিকিত্সকরা জানিয়েছেন, জ্যোতিপ্রিয়র শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল’। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা মন্ত্রীর জেল হেফাজতের আবেদন জানায়। পাশাপাশি জেলে গিয়ে জেরা করার অনুমতিও চায় ইডি।রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে আগে বারবার বলতে শোনা গেছে, ‘আমি নির্দোষ। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’ এর আগে যখন আদালত তাঁকে ইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিল, তখন মন্ত্রীকে এও বলতে শোনা যায়, ‘সাতদিন পর ফের ফিরে আসছি।’ প্রতিবারই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে যে তেজের সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয়কে কথা বলতে শোনা গিয়েছিল, তবে এদিন তেমন ছিল না। রবিবার বারবারই তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি অসুস্থ। নিজের মুখেও সেই একই কথা বলেন মন্ত্রী ।এর আগে গ্রেফতারির পরে পরেই একাধিকবার হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে নিয়ে।
সেখানে চিকিত্সা চলেছে নিয়মিত।এর মধ্যে ইডির আইনজীবী জেল হেফাজতের আবেদন করেন। তবে জ্যোতিপ্রিয়র আইনজীবী স্পষ্ট জানান যে -‘কাস্টডিতে থাকাকালীন তাঁর অবস্থার অবনতি হয়েছে। সাত দিন আগের অবস্থা আর এখনকার অবস্থার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। যে কোনও সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন’।
ইডির আইনজীবী অবশ্য জানান -‘জেল হাসপাতাল ট্রিটমেন্ট করতে পারে। কমান্ড হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ড বলেছেন তিনি শারীরিক ভাবে সুস্থ রয়েছেন। ভর্তি করার প্রয়োজন নেই’। আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীকে।ইতিমধ্যে আগামী ১৬ নভেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের রেগুলার বেঞ্চে উঠবে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হেফাজতের মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল সংক্রান্ত মামলা। ওইদিন ইডি কে নিদিষ্ট হাসপাতালের নাম জানাতে বলা হয়েছে।