পুবের কলম প্রতিবেদকঃ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা কাটাতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠক করল দিশা সংগঠন। রবিবার দিশা সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে পূর্ব ভারতের সর্বপ্রথম সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলিয়া মাদ্রাসা। অস্তমিত মুঘল সাম্রাজ্যের হাত থেকে ব্রিটিশদের ক্ষমতা দখল এবং শাসন কার্যের সুবিধার্থে লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে কলিকাতায় আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মুঘল ও বাংলার নবাবদের যুগে ফার্সি ভাষায় সরকারি কাজকর্ম সম্পন্ন হত। ব্রিটিশরা ক্ষমতা দখলের পরে বিভিন্ন সরকারি দফতরে কর্মী নিয়োগের জন্য ইংরেজি ভাষায় দক্ষ কর্মচারীর প্রয়োজন দেখা যায়। এভাবেই শুরু হয় ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসার পথ চলা। ব্রিটিশ ভারতে আ্যডমিনিস্ট্রেশন থেকে ডাক্তারি একাধিক ক্ষেত্রে আলিয়া মাদ্রাসা বহু যোগ্য ও কৃতি ছাত্রের জন্ম দিয়েছে। পরবর্তীতে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আলিয়া মাদ্রাসা উত্তীর্ণদের ভূমিকা ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে। অভিশপ্ত দেশভাগের ফলে ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। জানা যায়, আলিয়া মাদ্রাসার নথিপত্র ও বহু মূল্যবান বই নৌকা ও জাহাজে করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
স্বাধীনোত্তর ভারতে আলিয়া মাদ্রাসা আস্তে আস্তে হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করে এবং দীর্ঘ ছাত্র আন্দোলনের ফলে ২০০৮ সালে সংখ্যালঘু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি আদায় করে। আলিয়া এখন শুধু তালতলা ক্যাম্পাসে সীমাবদ্ধ নয়। পার্কসার্কাস ও নিউটাউনে এর বহু শাখা প্রশাখা বিস্তার করেছে। বাংলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রায় তিন কোটি মানুষের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন আলিয়া কেন্দ্রিক। এহেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে বেশ কিছুদিন যাবৎ একের পর এক উদ্বেগজনক খবর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। ঐতিহাসিক আলিয়া চরম আর্থিক সংকটে ভুগছে। ২০১৯-২০ ও ২০-২১ সালের সরকারের বরাদ্দ অর্থের ন্যূনতম সাহায্যও আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় পায়নি বলে জানা গিয়েছে। উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে কর্মচারীদের বেতন পর্যন্ত আটকে গিয়েছে। এমতাবস্থায় ডেমোক্রেটিক ইন্টিগ্রেটি অ্যান্ড সোশ্যাল হারমনি অ্যাসোশিয়েশন-এর পক্ষ হতে সংখ্যালঘু সমাজের বিশিষ্টজন প্রাক্তনী সংসদ ও মাদ্রাসা ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে উত্তরণের চেষ্টা চলছে।
সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ও মাদ্রাসা ছাত্র ইউনিয়নের প্রাক্তন ছাত্র নেতা মৌলানা মুজফফর হোসেন সাহেব প্রাক্তনী ও বর্তমান ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঐতিহাসিক আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় রক্ষার্থে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
দিশার রাজ্য সম্পাদক ও প্রাক্তনী সংসদের সদস্য ইফতেখার হোসেন বলেন, রাজ্য সরকার গুরুত্ব সহকারে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলোকে বিবেচনা করে যথার্থ ভূমিকা পালন করুক। ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গরিমা ও মর্যাদা বজাযü রেখে অবিলম্বে সমস্যার সমাধান করতে হবে। দিশার বিশেষ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মৌলানা আমিনুল আম্বিয়া, ড. ফজলুর রহমান, শাহ নেওয়াজ আলম, আজিবুর রহমান ও মজলিশ-ই-শুরা’র অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।