উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়নগর : মাত্র তিন মাসের মরসুম, এই সময়ে মোয়া তৈরি করে স্বনির্ভর হচ্ছেন জয়নগর, বহড়ুর গৃহবধূরা। আরতি, সুমা, শ্যামলী, পরিনীতা, চন্দ্রা, সুধা এঁরা সবাই গৃহবধূ। ঘরের হেঁসেল সামলে সকালেই চলে আসেন বিভিন্ন কারখানা ও দোকানে।
তারপর জোরকদমে জয়নগরের জিআই ট্যাগ প্রাপ্ত সুস্বাদু মোয়া তৈরির কাজে নেমে পড়েন এঁরা। মাত্র তিন মাস চলে এই মোয়ার মরসুম।এদিকে ঘরে ঢুকছে মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষীর ভাণ্ডারের টাকাও। কিন্তু বাড়তি রোজগারের তাগিদে ও নিজেদের স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে জীবন যুদ্ধে নেমেছেন জয়নগর, বহড়ুর এই সব গৃহবধূরা।
শীত জমাট হতেই বহড়ু, জয়নগরে মোয়ার বাজারে ভিড় হচ্ছে মানুষদের। এখন প্রতি দোকানেই উপচে পড়ছে ভিড়। মোয়া ব্যবসায়ীদের কথা বলার ফুরসুত নেই।প্রতি দোকান, কারখানায় পুরুষ কারিগর ছাড়া মহিলা কারিগররা আছেন। বহড়ুর মল্লভপুর দাস পাড়ার বাসিন্দা গৃহবধূ আরতি দাস ২০ বছর ধরে মোয়া তৈরি করছেন।
মোয়া পাকাতে পাকাতে তিনি বলেন, এই কাজ করেই এক ছেলে এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এই মোয়ার মরসুম। তবে যা বিক্রিবাটা হয় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে জানুয়ারি মাসের পুরোটা। তাই সেই সময় কাজের চাপ খুব বাড়ে।
লক্ষ্মীর ভান্ডারের ৫০০ টাকা পাই, তার সঙ্গে এই তিন মাসে যা মজুরি পাই সারাবছরের খরচ উঠে যায়। গৃহবধূ সুমা দাস ১৫ বছর ধরে মোয়া তৈরি করছেন। তিনি বলেন, কনকচূড় ধানের খইয়ে নলেন গুড় মিশিয়ে পাক করার কাজ আমরা করি।এতে দৈনিক ৩০০-৪০০ টাকা মুজুরি পাই। সংসারের খরচ উঠে আসে। মোয়া ব্যবসায়ীরাও কাজে উৎসাহ দেয়। গৃহবধূ চন্দ্রা কয়াল তাঁর স্বামী রঞ্জিত কয়ালের সঙ্গেই সকাল হতেই চলে আসেন মোয়ার দোকানে।
রঞ্জিত বাবু কড়াইয়ে খই ভাজার কাজ করেন। আর চন্দ্রাদেবী মোয়ার পাক তৈরি করেন। চন্দ্রাদেবী বলেন, এই কাজ করে ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছি। আগে মজুরির টাকা কম ছিল। এখন মোয়ার বাজার ভালো হওয়ায় আমাদের মজুরিও বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মোয়া ব্যবসায়ী গনেশ দাস,রাজেশ দাস, তিলক কয়ালেরা বলেন, মোয়া তৈরিতে মেয়েরাও সিদ্ধহস্ত। এই কাজ করে তাঁরা নিজেরাই স্বনির্ভর হচ্ছেন।