পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: জাতি হিংসা অব্যাহত মণিপুরে। এবার পুলিশ-প্রশাসনের এক পদস্থকর্তাকে (সাব-ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার বা এসডিপিও) গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে মণিপুরের মোরেহ শহরে ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের কাছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ তাঁকে গুলি করে হত্যা করে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, মোরেহ শহরে একটি নবনির্মিত হেলিপ্যাড পরিদর্শনে গিয়েছিলেন চিঙ্গথাম আনন্দ নামের ওই এসডিপিও। সেখানেই তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা। আশংকাজনক অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। উল্লেখ্য, এই হত্যার ঘটনাটি এমন একটা সময়ে ঘটেছে যখন মণিপুরের একাধিক উপজাতি সংগঠন মোরে থেকে মণিপুর পুলিশকে সরানোর দাবি জানিয়ে আসছে। অন্যদিকে, বিগত কয়েকদিন ধরে মণিপুর পুলিশ এই সীমান্ত শহরে চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগে মিয়ানমারের কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। যদিও উপজাতি সংগঠনগুলির অভিযোগ, পুলিশ শুধুমাত্র আদিবাসীদেরই নিশানা করছে। মোরেহ শহরটি টেংনোপাল জেলার একটি কুকি-অধ্যুষিত সীমান্ত শহর। ৩ মে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর এখানে হিংসা ছড়িয়ে পড়লে মেইতেইদের বাড়িঘর ও দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। প্রাণ ভয়ে শতশত মেইতেই শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। এই হিংসার ঘটনার সঙ্গে কুকি ‘জঙ্গিরা’ জড়িত বলে মণিপুর সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। পালটা কুকি সংগঠনগুলির অভিযোগ, কুকিদের উপর মেইতেইরা যে অমনাবিক অত্যাচর করছে তা নিয়ে মণিপুর সরকার ও মণিপুর পুলিশ নীরব। কুকি মহিলাদের উপর যেভাবে অত্যাচার হচ্ছে তা নিয়েও সরকার কোনও পদক্ষেপ করছে না।
এদিকে, মঙ্গলবারের এই খুনের ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের নেতৃত্বে মণিপুর মন্ত্রিসভা একটি জরুরি বৈঠক ডাকে এবং এই হিংসার ঘটনার তীব্র নিন্দা করে। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারি করা একটি বিবৃতিতে কুকিদের সরাসরি ‘জঙ্গি’ তকমা দিয়ে বলা হয়, সশস্ত্র কুকি জঙ্গিদের বিনা প্ররোচণায় গুলি চালানোর ফলে এসডিপিও নিহত হয়েছেন। রাজ্য বাহিনী এবং বিএসএফ যৌথভাবে এই হেলিপ্যাড তৈরি করছে। সেজন্য ইস্টার্ন শাইন স্কুলের মাঠ পরিষ্কার করার দায়িত্বে ছিলেন এসডিপিও। কর্তব্যরত অবস্থায় সশস্ত্র কুকিরা বিনা প্ররোচনায় গুলি চালিয়ে খুন করে এসডিপিওকে। মন্ত্রিসভা এই জঘন্য কাজটিকে কঠোর ভাষায় নিন্দা করছে। মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, কুমারের মৃত্যুতে ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, নিহতর পরিবারের এক সদস্যকে উপযুক্ত সরকারি চাকরিও দেওয়া হবে। অপরাধীদের ধরতে মোরেহ এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে একটি যৌথ অভিযান শুরু হবে। যতদিন পর্যন্ত না অপরাধীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।