নিজস্ব প্রতিনিধি: সংসদের চলতি অধিবেশনেই বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল পেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার। আর ই বিলের প্রতিবাদ জানিয়ে শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে যেমন সংসদে বিল পেশ করার আগে সব রাজ্যের সঙ্গে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার আলোচনা না করার জন্য ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী, তেমনই বিল স্থগিত রাখারও অনুরোধ জানিয়েছেন।
মোদিকে পাঠানো চিঠিতে মমতা লিখেছেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী বিদ্যুৎ ক্ষেত্র যৌথ তালিকাভুক্ত। কিন্তু রাজ্য সরকারকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল সংসদে পেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। গত বছর এই বিলটি সংসদে পেশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তখনই আমরা আপত্তি জানিয়েছিলাম। বিলের জনস্বার্থ বিরোধী দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছিল। ২০২০ সালের ১২ জুন আপনাকে আপত্তি জানিয়ে চিঠিও পাঠিয়েছিলাম। তখন অবশ্য বিলটি পেশ করা হয়নি। ভেবেছিলাম, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। কিন্তু শুনলাম, আমাদের মতামতকে বিবেচনা না করেই ফের সংসদে বিলটি পেশ করা হচ্ছে। খুবই দুর্ভাগ্যজনক সিদ্ধান্ত।’
সংসদে একতরফাভাবে বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল পেশের সিদ্ধান্ত যে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরে আঘাত, তা উল্লেখ করে মমতা লিখেছেন, ‘জনগণের স্বার্থবিরোধী এই বিল। সংবিধান অনুযায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র-রাজ্য যুগ্মতালিকায় থাকা বিষয়। এ সংক্রান্ত কোনও বিল সংসদে পেশ করার আগে রাজ্যগুলির সঙ্গে কেন্দ্রের শলা পরামর্শ করা উচিত ছিল। অথচ রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনাই করা হচ্ছে না। স্বৈরাচারী ও একতরফা পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। যা আসলে রাজ্য সরকারের অধিকারের উপরে সরাসরি হস্তক্ষেপ।’
তড়িঘড়ি বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল পেশ করার পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে বলেও সরাসরি অভিযোগ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের এই সংশোধনী বিল সংসদে পাশ হলে বিদ্যুৎ বন্টন ব্যবস্থার উপর থেকে রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে। যার জেরে গরিব উপভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। রাজ্যের সঙ্গে না কথা বলে এই বিল আনার পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রয়েছে। বিল সংশোধনীর মাধ্যমে কেন্দ্রের তরফ থেকে খোলা বাজারের নীতি মেনে বেসরকারি ক্ষেত্রকে চরম মুনাফা করার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।’
দেশে বিদ্যুৎক্ষেত্রে পছন্দের ব্যবসায়ীদের বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দিতে বিশেষ সংশোধনী বিল আনার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই উদ্যোগী মোদি সরকার। মূলত প্রথম মোদি জমানাতেই পীযূষ গোয়েল বিদ্যুৎমন্ত্রী থাকার সময়ে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। নয়া বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল পাশ হলে দেশের যে কোনও প্রান্তেই যে কোনও সংস্থা বিদ্যুৎ বন্টন করতে পারবে। বিদ্যুৎ বন্টনে থাকা বিশেষ লাইসেন্স প্রথা শেষ হবে। একই এলাকায় বিদ্যুৎ বন্টন করতে পারবে একাধিক সংস্থা। বিরোধীদের অভিযোগ, মূলত বিজেপি বান্ধব হিসেবে পরিচিত দেশের দুই শীর্ষ শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি ও গৌতম আদানিকে বাড়তি মুনাফা লোটার সুযোগ করে দিতেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছে মোদি সরকার। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়ে কেন্দ্রের দাবি, বিদ্যুৎবণ্টনের ক্ষেত্রে একচেটিয়া অধিকার ভাঙতেই সংশোধনী বিল আনা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বন্টনের ক্ষেত্রে একচেটিয়া অধিকার উঠে যাওয়ায় বন্টনকারী সংস্থাগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে। তাতে উপকৃত হবেন আমজনতা। বর্তমানে যেভাবে সাধারণ মানুষ কম দামে মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা পাচ্ছেন, তেমনই কম দামে বিদ্যুৎ পাবেন।