পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: দিল্লির শাহিনবাগে বুলডোজার তাণ্ডব থেকে উচ্ছেদ ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় রাজ্য-রাজনীতি। এবার সেই বেআইনি নির্মাণের তত্ত্ব খাড়া করে বুলডোজার তাণ্ডবের ঘটনার সাক্ষী থাকল মধ্যপ্রদেশ। একটি দলিত সম্প্রদায়ের বিয়েকে কেন্দ্র করে এই ঘটনার সূত্রপাত। আর এই ঘটনায় রণক্ষেত্রের চেহারা নিল নিল মধ্যপ্রদেশের রাজগড় জেলা। দলিত ও মুসলিমদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় একে অপরের বিরুদ্ধে পাথর ছোড়াছুড়ির সাক্ষী থাকল রাজগড়। ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। এর মধ্যে ৬ বছরের এক শিশু রয়েছে। ঘটনায় বিক্ষোভকারী ৪৮ জনের ঘর অবৈধ নির্মাণ বলে চিহ্নিত করে সেগুলিকে গুড়িয়ে দেয় প্রশাসন।
পুলিশ সূত্রে খবর, একটি বিয়ের প্রসেশনকে কেন্দ্র করে দলিত ও মুসলিম সংঘর্ষে জড়ায়। মধ্যপ্রদেশের রাজগড় জেলার জিরাপুরের এই ঘটনায় উত্তপ্ত রাজ্য-রাজনীতি।
ঘটনার সূত্রপাত হয় বৃহস্পতিবার রাতে। একটি দলিত সম্প্রদায়ের বিয়েতে তাদের ব্যান্ড পার্টির দল বাজনা বাজাতে বাজাতে যাচ্ছিল মসজিদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। অভিযোগ, সেই সময় ব্যান্ড পার্টির আওয়াজ খুব জোরে বাজছিল। আওয়াজ কমাতে বলা হয়। আওয়াজ না কমানোয় দলিত ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। একে অপরের মধ্যে পাথর ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে।
রাজগড়ের পুলিশ সুপার প্রদীপ শর্মা জানিয়েছেন, অন্তত কমপক্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এক ৬ বছরের শিশু। দু পক্ষ একের অপরের দিকে পাথর ছোড়ে।
প্রদীপ শর্মা জানিয়েছেন, ব্যান্ড পার্টির তরফ থেকে জানানো হয়েছে তারা আওয়াজ কমিয়ে দিয়েছিল। এদিকে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের অভিযোগ মসজিদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় খুব জোরে জোরে গান বাজানো হচ্ছিল। বারণ করলেও শোনেনি। এরফলেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শুরু হয় পাথর ছোড়াছুড়ি।
জিরাপুর স্টেশনের ইনচার্জ প্রভাত গৌড়ের মতে, মিছিলটি পার্শ্ববর্তী একটি মসজিদে পৌঁছলে জোরে গান বাজতে শুরু করে, এরপর অভিযুক্তরা পিছন থেকে দলটির দিকে ঢিল ছুড়তে শুরু করে।
ঘটনায় সমর লাহা, ফারহান খান, জুনেদ খান, সোহেল খান, সাবির খান, আনস কসাই, দাগা খান সহ আরও কয়েকজনের নামে এফআইআর দায়ের হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে কয়েকটি ধারায় কেস রুজু হয়েছে। তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি (অত্যাচার প্রতিরোধ) ২৯৪ ধারায়(অশ্লীল কাজ ও গান), ৩৩৬ ধারায় (ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিপন্ন) ৫০৬ ধারায় (অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন) মামলা রুজু হয়েছে। অভিযুক্তের মধ্যে এফআইআর-এ নাম রয়েছে ৭ জনের, ৮ জনকে আটক করা হয়েছে, ২১ জনকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে। ৬ জনের অস্ত্র লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
জিরাপুর তহসিলদার অশ্বিন রাম চিরামন জানিয়েছেন, বিয়ের প্রসেশনে যারা পাথর নিক্ষেপ করেছিল তাদের বিরুদ্ধে আলাদা ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা বেআইনি দখল নেওয়া জমির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছি। এদের নামেই দলিতের বিরুদ্ধে পাথর ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। ১৮ জন অভিযুক্তের বাড়ি ভেঙে ফেলার জন্য চিহ্নিত করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালেই সেগুলিকে বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। আরও ৩০টি বাড়ি আংশিকভাবে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আরও ৩০টি বাড়ি মাতা মন্দিরের দিকে যাওয়ার রাস্তার জায়গা দখল করে একটি সরকারি জমির ওপর তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই বাড়ি ভাঙার নোটিশ জারি হয়েছে। এর আগে আরও তিনটি নোটিশ জারি হয়েছিল।
চিরামন জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা সকলেই মুসলিম। যদিও সরকারি রাস্তার উপর ৩০টি দখল উভয় সম্প্রদায়ের লোকদের, তবে যেহেতু এলাকাটি মুসলিম অধ্যুষিত, তাই এই বাড়িগুলি মূলত সম্প্রদায়ের লোকদেরই।