খাবার তো খাচ্ছি। কিন্তু তাতে শরীর তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছে কি? জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহে আরেকবার জেনে নেওয়া যাক কোন জাতীয় খাবার আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে লিখছেন শ্যামলী বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুরু হয়েছে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ। প্রতিবছর ১ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পুষ্টি সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরির জন্য দেশ জুড়ে পালন করা হয় এই সপ্তাহ। করোনা পরিস্থিতিতে সবাই যখন নিজেকে সুরক্ষিত থাকার ইমিউনিটি বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তখন এই প্রোগ্রাম যে বাড়তি গুরুত্ব পাবে তাতে কোনও সন্দেহের অবকাশ থাকে না। এ বছরের থিম হল ‘ফিডিং স্মার্ট রাইট ফ্রম স্টার্ট’ অর্থাৎ প্রথম থেকেই ঠিকঠাক খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা দরকার। তাই খাওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতেই হবে। কারণ খাবার থেকেই আমরা রোজকার পুষ্টি পাই। খাবার ঠিক হলেই আমরা সুস্থ থাকব– আমাদের সমাজ ও সুস্থ থাকবে।
সুস্থ থাকতে কী খাব আর কী খাব না
প্রোটিন জাতীয় খাবারকে অবহেলা করা চলবে না। শরীরের কোষ গঠন থেকে পুষ্টি সব কিছুতেই প্রোটিনের অবদান অনস্বীকার্য। হার্বার্ড হেলথ পাবলিশিং-এর মতে– প্রত্যেকের শরীরের ওজনের ০.৮ গ্রাম প্রোটিনের দরকার। প্রোটিনের অভাবে ত্বকের সমস্যা থেকে শুরু করে হাড় ও পেশী দুর্বল হয়ে যাওয়া– রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া এমনকী বুদ্ধিও কমে যেতে পারে। তাই প্রোটিন জাতীয় খাবার রোজকার খাবারে রাখা চাই। তাই মিলিয়ে মিশিয়ে খেতে হবে ডিম– মাংস– দুধ ও বাদাম। সবচেয়ে বড় কথা এই জাতীয় খাবার খেলে জাংক ফুডের প্রতি দুর্বলতাও কমে যাবে। ফলে ওবিসিটি থেকে দূরে থাকা সম্ভব হবে।
চর্বিজাতীয় খাবারকে অচ্ছুৎ করে রাখা চলবে না
প্রোটিনের মতোই গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাট। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ– শক্তি সঞ্চয় এবং ভিটামিন শোষণের জন্য ফ্যাটজাতীয় খাবারই দরকার। এই কারণে খাদ্যতালিকায় রাখা দরকার মাছ– নানারকম বাদাম– দুধের তৈরি খাবার ইত্যাদি।
সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে
করোনার সময়ে আমরা সবচেয়ে বেশি সাপ্লিমেন্ট ব্যবহারে সক্রিয় হয়ে উঠেছি। ভিটামিন সি– জিঙ্ক– ভিটামিন-ডি যা কিছুর কথা শুনেছি তাই মুঠো মুঠো খাওয়া শুরু করেছিলাম। একথা ঠিক– অনেক সময় আমাদের শরীরের কোনও কোনও বিশেষ উপাদানের ঘাটতি পূরণের জন্য সাপ্লিমেন্ট খেতে হয়। কিন্তু নিজে থেকে এসব খাওয়া একেবারেই ঠিক নয়। আমাদের ভুললে চলবে না– সাপ্লিমেন্ট কখনওই খাবারের বিকল্প নয়। তাই এ জাতীয় কিছু খাওয়া শুরুর আগে তার ডোজ– কতদিন খেতে হবে সব বিষয়ে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
জাংকফুড থেকে দূরে থাকতে হবে
পিৎজা– বা বার্গারের মতো খাবার খেতে যতই সুস্বাদু ও দামি হোক না কেন– এতে পুষ্টি একেবারেই থাকে না। শুধু তাই নয়– এই সব খাবারে শরীরে ভালোর চেয়ে খারাপ বেশি হয়। শরীরে মেদ জমে ও নানান সমস্যা ডেকে আনে। আর পুষ্টিকর উপাদান না থাকলে সেই খাবার খেলে শরীরে কোনও এনার্জি পাওয়া যায় না।
চিনি থেকে সাবধান
খেতে মিষ্টি হলেও চিনি আসলে যেন সাদা বিষের সমতুল। অতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিত চিনি শরীরে মেদ বৃদ্ধি থেকে শুরু করে হার্টের সমস্যা– ডায়াবেটিস এমনকী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমাতে পারে। কাজেই চিনি খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। স্মুদি– এনার্জি ড্রিংক বা জুসের সঙ্গে যেন চিনি মিশে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর সফট ড্রিংক্স তো একদম বাদ দিতে হবে।
টাটকা ফল ও সবজি বেশি করে খেতে হবে
এই সব হল প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেলসের উৎস। সবুজ সবজিতে থাকে প্রচুর আয়রন। এছাড়াও থাকে ভাল পরিমাণে ফাইবার– যা হজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
পরিমিত জল পান করা
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে জল খাওয়ার ভূমিকা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জলের মাধ্যমেই শরীরে পুষ্টি ছড়িয়ে পড়ে। শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখে। সাধারণ জল খেতে ভালো না লাগলে লেবু বা কমলালেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে জলের চাহিদার পাশাপাশি পুষ্টি বৃদ্ধি হবে।