পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ভারতের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্র সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। দেশে যখন অহরহ মব-লিঞ্চিংয়ের মতো ঘটনা ঘটছে, বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে মুসলিমদের বাড়িঘর-মুসলিমদের উপাসনালয় মসজিদ এবং স্থাপত্যকে দখল করার জন্য আওয়াজ তোলা হচ্ছে বা আদালতের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে, সেই সময় ভারতেরই মাটিতে দাঁড়িয়ে এ দেশের সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন তুলে দিলেন প্রতিবেশী দেশের এই মন্ত্রী।
বেঙ্গালুরুতে শনিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দেশের প্রত্যেক নাগরিককে সুরক্ষা প্রদান ও তাদের মৌলিক অধিকার রক্ষার গ্যারান্টি নিশ্চিত করা সমস্ত দেশের কর্তব্য। সংবিধানে প্রদত্ত ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিরপেক্ষভাবে নিশ্চিত করা হলেই দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আসে। ভারতকে বিশ্বের ময়দানে নয়া শক্তি হিসেবে উত্থান ঘটাতে হলে দেশের ‘ফাউন্ডিং ফাদার্স’ অর্থাৎ দেশ প্রতিষ্ঠার সময় গান্ধি-নেহরু-আজাদরা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেগুলিকে উপলব্ধি করতে হবে। এগুলি সংবিধানে রক্ষিত রয়েছে।’
২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার বারবার এ দেশে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ও বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছে। এর প্রতিকারে অমিত শাহ সারা দেশে, বিশেষ করে পশ্চিমবাংলা ও অসমে এনআরসি-সিএএ লাগু করার হুমকিও দিয়ে রেখেছেন। এখন ভারতের দিকে মুসলিম নির্যাতনের অভিযোগ উঠছে দেশ-বিদেশের মঞ্চে।
এই প্রেক্ষিতে শনিবার বিজেপি-আরএসএস ঘনিষ্ঠ থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত ‘ইন্ডিয়া আইডিয়াজ কনক্লেভ’-এ ২৫ বছর পরে ভারতের চিত্র কেমন হবে তা নিয়ে এক আলোচনা চক্রের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে বারবার সংখ্যালঘু নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলে প্রকারান্তরে বিজেপি সরকারের দিকেই তীর ছুড়েছেন বাংলাদেশের মন্ত্রী ও শাসক দল আওয়ামী লিগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি।
মোদি জমানায় যখন ‘কংগ্রেসি’ নেহরুদের দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে, তখন ফাউন্ডিং ফাদার্সদের কথা উচ্চারণ করে তিনি ভিন্ন বার্তা দিতে চাইলেন।
সম্প্রতি দেশের প্রাচীন মসজিদগুলো নিশানায় পরিণত হয়েছে। নামায পড়ার জন্য একটুকরো জমিন পাচ্ছেন না মুসলিমরা। এমনকি ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী, শালীন পোশাক পরার স্বাধীনতাতেও হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। দীপু মনির ভাষণে উঠে এসেছে এই প্রসঙ্গও।
তিনি বলেন, সংবিধানে প্রদত্ত ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিরপেক্ষভাবে নিশ্চিত করা হলেই দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আসে। মৌলিক অধিকার প্রদানের মাধ্যমে ভারত তার নাগরিকদের বিশেষ করে এসসি, এসটি,, ওবিসিদের এবং সমাজের সব স্তরের মহিলাদের সাফল্যের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।
বৃহৎ দেশ ভারতবর্ষের সংখ্যালঘুদের রয়েছে নানা ভাষা ও সংস্কৃতি। সংখ্যাগুরুদের প্রভাব থেকে এই ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা করতে পারলে দেশে অশান্তি ও সাম্প্রদায়িক হিংসাকে এড়ানো যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। সংখ্যালঘুদের নিয়ে তাঁর ভাষণে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি, যা বর্তমান আবহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমাজের দুর্বল শ্রেণিকে শোষণ না করে তাদেরকে মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার ব্যবস্থা করলে তারা সমাজের অগ্রগতিতে সহায়তা করতে পারবে বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন।
কয়েকটি মুসলিম দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন এই প্রসঙ্গটিতে যেসব বক্তব্য রেখেছে, ভারত সরকার তা পছন্দ করেনি এবং খারিজ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশের মন্ত্রী দীপু মনি এবং তার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভারতের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার কথা তুলে ধরেছেন। হাসিনা বলেছিলেন, ভারতে কিছু ঘটলে তার প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশেও হতে পারে। বিষয়টি ভারতের নজরে রাখা প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা দাবি করেন, তাঁরা বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করেছেন। কোনও ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশ সরকার ও সুশীল সমাজ কঠোরভাবে তার মোকাবিলা করে থাকে। বলাবাহুল্য, বাংলাদেশের শাসক নেতৃবৃন্দদের এই ধরনের বক্তব্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলবে।