আবদুল ওদুদ
মুর্শিদকুলি খাঁ-র দৌহিত্র নবাব সরফরাজ খাঁ। ১৭৪০ সালে গিরিয়ার যুদ্ধে আলিবর্দি খাঁ-র হাতে নিহত হন সরফরাজ। সরফরাজকে সমাধিস্থ করা হয় লালবাগে তাঁর প্রাসাদ নাটকাখালিতে। যেটি বর্তমানে মুর্শিদাবাদ স্টেশন লাগোয়া। ওই নাটকাখালি এখন নাগিনাবাগ নামে পরিচিত। কালের বিবর্তনে সরফরাজ খাঁ-র কবর ধ্বংস হতে বসেছিল। সেই কবরকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করলেন স্বপন ভট্টাচার্য নামে এক ব্যক্তি। তিনি কিছু সমাজকর্মীকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ অ্যান্ড কালচারাল ডেভালপমেন্ট সোসাইটি। কিছু স্থানীয় মানুষ সরফরাজ খাঁ কবর সংরক্ষণের বাধা দিচ্ছিলেন। কিন্তু জেলাশাসক– পুলিশ সুপার– হাজারদুয়ারির এস্টেট ম্যানেজার– এসডিপিও এবং স্থানীয় থানার সহযোগিতায় ঐতিহাসিক সমাধি সংস্কারের কাজ করা সম্ভব হয়েছে। পুরো সমাধিটিকে সাদা মার্বেল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। আগে যে সমাধি ছিল– সেটিকে অক্ষত রেখে এই কাজ করা হয়েছে বলে স্বপনবাবু জানান।
ঐতিহাসিক এই সমাধি রক্ষা করতে গিয়ে নানা হুমকি ও পেয়েছেন তিনি। কিন্তু ইতিহাস ধরে রাখতে কোনও হুমকির কাছে মাথানত করেননি তিনি। নিজে তেমন কিছু করেন না। স্বপনবাবুকে কাজপাগল মানুষ হিসাবেই জেলার অফিসাররা জানেন। মুর্শিদাবাদের ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে নানা কাজ করে চলেছেন। সরফরাজ খাঁ-র কবর সংরক্ষণ করতে মার্বেল ও মিস্ত্রি খরচ হয় প্রায় লক্ষাধিক টাকা। লোকের কাছ থেকে এই টাকা তুলে কাজ করেছেন। যাঁদের বলেছেন– তাঁরাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। স্বপনবাবুর এই কাজে খুশি জেলার মানুষ।
সরফরাজ খাঁ-র ওই জমি রাজ্য আইন ও বিচার বিভাগের মুর্শিদাবাদ স্টেটের অধীনে। কালের নিয়মে সরফরাজের প্রাসাদ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ঐতিহাসিক সম্পদকে এইভাবে অবহেলায় নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। এ কথা মাথায় রেখে ওই সমাধির জঞ্জাল মুক্ত করে তার সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করে মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ অ্যান্ড কালচারাল ডেভালপমেন্ট সোসাইটি। ইতিমধ্যে সমাধির বেশিরভাগ জমি বাসিন্দারা জবর দখল করেছেন ফলে যেটুকু বাকি আছে– তাও ঘিরে দিয়ে পর্যটকদের আকর্ষণ বৃদ্ধি করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান সোসাইটির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য। তিনি বলেন– ওই সমাধি সংস্কার ও সংরক্ষণ করার জন্য প্রায় দু’বছর থেকে সংস্থার সদস্যরা চাঁদা দিচ্ছেন। সংগৃহীত চাঁদা দিয়েই সাজিয়ে তোলা হয়েছে নবাবের সমাধি। কিছু মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ দিকে ঐতিহাসিক ওই সমাধি সংস্কার করতে গেলে সোসাইটিকে বাঁধার মুখে পড়তে হয়।
জানা যায়– সরফরাজ খাঁ-র বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রসাদের জমি জবরদখলকারীদের মদদেই একদল মানুষ ওই শুভ উদ্যোগে বাঁধা প্রদান করেন। তবে এস্টেট ম্যানেজার– জেলা পুলিশ এবং স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের এক বৈঠক কে অনুমোদন দেওয়া হয় মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ অ্যান্ড কালাচারাল সোসাইটি ওই সমাধি সংস্কার ও সংরক্ষণ করবে। এতে কেউ বাধা দিলে প্রশাসনিকভাবে তার মোকাবিলা করা হবে। এই আশ্বাস পেয়েই স্বপনবাবু কাজ শুরু করেন।
এই কাজ সম্পন্ন হওয়ার পথে। ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এই কাজে খুশি বিশিষ্ট সমাজসেবী তথা টাউন তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি ইন্দ্রজিৎ ধর। তিনি বলেন– আমরা পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে আরও কিছু লুপ্তপ্রায় ইতিহাস সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছি। গোটা লালবাগ জুড়ে বহু ইতিহাস ছড়িয়ে রয়েছে। সেগুলিকে উদ্ধার করে সংরক্ষণ করা হোক।
স্বপনবাবু জানান– আরও কিছু নবাবের ঐতিহ্য আগামী দিনে সংস্কার ও সংরক্ষণে হাত দেওয়া হবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি সেই কাজে হাত দেওয়া হবে।
বহু বাঁধা উপেক্ষা করে সরফরাজ খাঁর কবর সংস্কার ও সংরক্ষণ করল হেরিটেজ সোসাইটি।