দেবশ্রী মজুমদার, শান্তিনিকেতন: “আছে দীন দুনিয়ার অচিন মানুষ একজনা।/ আমার দেখে শুনে জ্ঞান হ’লো না “। আঙুলের টানে লালন ফকিরের সুর একতারায় ভিড় টেনেছে বোলপুর ডাকবাংলো মাঠের পৌষমেলায়। গুণগ্রাহী ক্রেতারা পরখ করছেন একতারা। যদিও লালন শাহ পছন্দ করতেন লাউয়ের খোলের একতারা। ভুবনডাঙার মেলায় দেখা গেল নারকোলের মালার একতারা। কোনটার দেড়শো আবার কোনোটার পাঁচশো। এক তারার জন্য নারকোলের মালাই কেনেন হাওড়ার ফুলবেড়িয়া থেকে। তারপর কাটোয়ার তারে তৈরি হয় একতারা। যার দাম পাঁচশো টাকা। কিনে নিতে পারেন। আর গাইতে পারেন “আমায় এক তারা ঘর ছাড়া করে পথেই নামাল।”
শুধু একতারা নয়, বাঁশির বিপুল সম্ভার ধনঞ্জয়বাবুর কাছে।
“ও…বাঁশেতে ঘুণ ধরে যদি কেন
বাঁশিতে ঘুণ ধরে না/
কতজনায় মরে শুধু পোড়া
বাঁশি কেন মরে না”।
নিজের হাতে গড়া বাঁশিতে সুর তুলছেন ধনঞ্জয় মাল।
ধনঞ্জয় মালের বাড়ি বর্ধমানের কাটোয়ার আগরদ্বীপের ছোটকুলগাছি। ধনঞ্জয়বাবুর জাত ব্যবসা বাঁশি ও একতারা তৈরি করা। বাবা মধুসূদন মাল, মা, স্ত্রী ডলি মাল এবং এক ছেলে দ্বীপ মাল নিয়ে তাঁর সংসার। শিয়ালদহের মানিকতলায় অসমের বাঁশ কিনে আনেন। তারপর বাড়িতে তিনি ও তাঁর স্ত্রী মিলে বাঁশি ও একতারা তৈরি করে বিভিন্ন মেলায় ঘুরে বেড়ান। বোলপুরের ডাকবাংলো মাঠে সেই উদ্দেশ্যে তাঁর আসা। মেলার দুদিনে তাঁর আয় ন’হাজার টাকা।
ধনঞ্জয় বাবু জানান, তিনি মূলত বিভিন্ন ধরণের আড় বাঁশি তৈরি করেন। এফ স্কেলের বাঁশির দাম সাড়ে সাতহাজার ও পাঁচ হাজার। এছাড়াও ‘এ’ স্কেলের মত সস্তা সখের বাঁশিও আছে। যার দাম দেড়শো টাকা। বাচ্চাদের জিভবাঁশি ও কোকিল বাঁশিও বিক্রি করেন তিনি। তবে আড় বাঁশি তৈরিতে খাটুনি লাগে। সুর সরগম সব মাপ ঠিক রাখতে হয় এই বাঁশিতে। শিল্পী ছাড়াও সখে অনেকেই এই বাঁশি কেনেন।