উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, সুন্দরবন : সুন্দরবনে জলে ডুবে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। দরকার সচেতনতা। তবে এবার জলে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে দেশ জুড়ে পদক্ষেপ করতে চলেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রক। বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এ ব্যাপারে প্রচার ও সচেতনতা চালানো হবে বলে জানানো হয়েছে তাদের তরফে। আর তাতে আশার আলো দেখছেন সুন্দরবন এলাকায় জলে ডোবা প্রতিরোধে কাজ করা সংগঠনগুলি।সুন্দরবন ও তৎ সংলগ্ন এলাকায় জলে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে প্রায়ই দিনই।
সম্প্রতি এক সংগঠনের করা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সুন্দরবনের ১৯টি ব্লকে জলে ডুবে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা গোটা বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক। এ ব্যাপারে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের দাবি উঠে আসছিল দীর্ঘদিন ধরেই। সুন্দরবন এলাকায় এক সংগঠনের করা সমীক্ষায় জানা যায়, দক্ষিন ২৪ পরগনার ১৩টি এবং উত্তর ২৪ পরগনার ৬টি ব্লক মিলিয়েসুন্দরবনের ১৯টি ব্লকে জলে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি।
বেশী মৃত্যু হচ্ছে চার বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের।আর পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি এক লক্ষ জনসংখ্যায় এই বয়সি ২৪৩ জন শিশুর জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে। এক লক্ষ জনসংখ্যায় পাঁচ থেকে নয় বছর বয়সি শিশু মারা গিয়েছে প্রায় ৩৯ জন। গ্রামীণ এলাকায় প্রায়ই এই ঘটনা ঘটছে। অসতর্কতায় পুকুরে পড়ে যায় শিশু। কখনও স্নান করতে নেমেও তলিয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রেই মৃত অবস্থায় উদ্ধার হয়। জীবন্ত উদ্ধার হলে ও শিশুকে জল থেকে তোলার পর কী করা উচিত, কী ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে সে ব্যাপারে ধারণা নেই অনেকেরই।
তা ছাড়া জলে ডোবা ঘিরে নানা কুসংস্কারও ঘিরে রয়েছে। ফলে, অনেকেই ওঝা-গুনিনের শরণাপন্ন হন। এতে বিপদ বাড়ে।শিশু মৃত্যুর ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত হয়না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। ফলে,এ ধরনের মৃত্যুর কোনও নথি থাকে না। সেই কারণে জলে ডুবে মৃত্যুর প্রকৃত পরিসংখ্যানও পাওয়া যায় না।
গত কয়েক বছরে জলে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে সুন্দরবন এলাকায় কাজ করছে কয়েকটি সংগঠন।তাদের দাবি সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে বাড়ি বাড়ি ঘুরে সচেতনতার কাজ করতে হবে। বাড়ি সংলগ্ন পুকুর ঘিরে দেওয়া, গ্রামের মানুষকে সচেতন করা, স্থানীয় বিভিন্ন পেশার লোকজনকে জলে ডোবার প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ-সহ বিভিন্ন ধরনের সমাজ সচেতন মূলক কাজের মাধ্যমে সুন্দরবনে জলে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার কমাতে হবে।