পারিজাত মোল্লা: টানা একমাসের বেশি সময়কাল কলকাতা হাইকোর্টে ছিল এজি ‘শূন্য’ ভাবে।এবার এই সমস্যা মিটলো রাজভবনের বহু প্রতীক্ষিত সম্মতিপত্র পেয়ে। আচমকাই গত ১০ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। এক মাসের উপর পদ শূন্য থাকার পর, শনিবার নতুন এজি নিয়োগ করল রাজ্য সরকার। একটা সময়ে এই দায়িত্ব সামলানো কিশোর দত্তকেই নতুন এজি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।
২০২১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এই কিশোরকে সরিয়েই ওই পদে আনা হয়েছিল সৌমেন্দ্রনাথকে। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস শনিবার সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন , -‘এজির ফাইল সই করে পাঠিয়ে দিয়েছি।সরকার যে ফাইল পাঠিযেছিল সেটায় সই করে পাঠিয়ে দিয়েছি।” অর্থাত্ রাজ্যপালের বক্তব্য অনুযায়ী, এজির নাম ইতিমধ্যেই নির্ধারিত হয়েছে ।গত ১৭ নভেম্বর রাজভবনে গিয়ে এজি পদ থেকে ইস্তফা দেন সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। এর আগে ১০ নভেম্বর বিদেশ থেকে ইমেল মারফত রাজ্যপালকে ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছিলেন তিনি। ১৭ তারিখও যদি তাঁর ইস্তফার চূড়ান্ত দিন ধরা হয়, এক মাস রাজ্য সরকারের কোনও এজি ছিল না। স্বভাবতই এজির না থাকা বিভিন্ন মামলায় প্রভাব পড়েছে। গুরত্বপূর্ণ মামলা গুলির বিচার-প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়েছে।
সূত্র মারফত প্রকাশ , সৌমেন্দ্রনাথের ইস্তফার পরই রাজভবনে সেই ফাইল যায়। এমনও সূত্রের দাবি, একটি নামই পাঠানো হয়েছিল নবান্নের তরফে। যদিও আইন মোতাবেক রাজ্য চাইলে একটি নামের সুপারিশ করতেই পারে। আবার চাইলে বেশিও পাঠাতে পারে। এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কোনও আইনি কারণ নেই বলেই জানা গেছে । তবে সূত্রের দাবি, একটি নাম সুপারিশের কারণে কিছুটা সময় লাগছিল এই অনুমোদনে। এদিকে এভাবে এজির পদ ফাঁকা রাখা যায় না বলেই আইনজীবীদের বড় অংশের মত।
তবে এবার এজি পেল রাজ্য, রাজ্যপালের মন্তব্যে তেমনই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বর্ষীয়ান আইনজীবী কিশোর দত্ত পুনরায় অ্যাডভোকেট জেনারেল পদের দায়িত্ব নিতে রাজি হয়ে গিয়েছেন ।এদিকে অ্যাডভোকেট জেনারেল পদ থেকে সরে যাওয়ার পর সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাত্কার দিয়ে একপ্রকার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন। তাতে অবশ্য শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসে কোন প্রতিক্রিয়া দিতে চায়নি। আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকও এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেওয়া থেকে এড়িয়ে যান, যাতে জটিলতা না বাড়ে।
এর আগে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলা সহ কিছু মামলায় রাজ্য সরকার ধাক্কা খাওয়ায় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অ্যাডভোকেট জেনারেল পদ কিশোর দত্তকে সরানো হয়েছিল। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি এই পদের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর কিশোর দত্ত ছিলেন চতুর্থ এজি। রাজ্যে পালাবদলের পর তৃণমূল ক্ষমতায় এলে প্রথম এজি হয়েছিলেন অনিন্দ্য মিত্র। তাঁর পর বিমল চট্টোপাধ্যায় এবং জয়ন্ত মিত্র অ্যাডভোকেট জেনারেল হয়েছিলেন। এবার ফের সেই পুরাতন পদে ফিরলেন বর্ষীয়ান আইনজীবী কিশোর দত্ত।